Tuesday, May 6, 2025
উৎপল সিনহা

মান্যবর কেশবচন্দ্র নাগের পাটিগণিত বইয়ে পিতা ও পুত্রের বয়সের হিসেব নিয়ে অঙ্ক কষেন নি এমন বাঙালি একটা সময় পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যেতো না। ৮ বছর আগে পিতার বয়স ছিল ৫৫ এবং পুত্রের বয়স ২৫, তাহলে ১৭ বছর ৬ মাস পরে পুত্রের বয়স কত হবে ? বলা বাহুল্য , অঙ্কে কাঁচা পড়ুয়াদের যে উত্তর বেরিয়ে আসতো তা বড়োই মর্মান্তিক।

প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যেতো ছেলে বাবার চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো! বয়সের গাছপাথরের হিসেব করা বড়োই কঠিন। অঙ্কে শূন্য পেতে পেতে যাদের বয়স বেড়ে যায় তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যাঁরা অঙ্ক বিশারদ তাঁরাও চমকে ওঠেন যখন বলা হয় একজন আরেকজনের চেয়ে ৫০০ বছরের বড়ো হতেই পারে! এখানে কিন্তু মৃতদের কথা আসছে না। জীবিতদের মধ্যেই একজন আরেকজনের চেয়ে এমনকি ৪৮০০ বছরের বড়ো হতে পারে , যদি তারা হয় জেলিফিশ কিংবা বিশেষ প্রজাতির গাছ ।

ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাদার গ্রেট বেসিন ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত একটি পাইন গাছের বয়স নাকি ৪ হাজার ৮০০ বছরেরও বেশি । এই গাছের নাম ‘ দ্য গ্রেট বেসিন ব্রিসলকোন ‘ । এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম উদ্ভিদ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা । আবার চিলির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যানে একটি গাছ রয়েছে যার বয়স আনুমানিক ৫০০০ বছরেরও বেশি । আশ্চর্যের বিষয় এই গাছটি এখনও সবুজ এবং রয়েছে বেশ নিরাপদেই । এটি একটি সাইপ্রাস গাছ । এর কাণ্ড ৪ মিটার পুরু । একে বিজ্ঞানীরা বলেন , ‘ গ্রেট গ্র্যাণ্ডফাদার ‘।

প্যারিসের ক্লাইমেট এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ল্যাবরেটরির ইকোলজিস্ট জোনাথন বারিসেভিচ জানান এই সাইপ্রাস গাছের বয়স ৫৪৮৪ বছর। এটি একটি বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ । কম্পিউটার মডেল দিয়ে পরীক্ষা করে এর বয়স, আকার , বিস্তার ইত্যাদি বের করা হয়েছে। গিঙ্কো বাইলোবা গাছ, যার অন্য নাম মেইডেন হেয়ার, ১০০০ বছরের বেশি বাঁচে। চিন দেশে এই গাছ দেখা যায় । এর দীর্ঘায়ুর গোপন রহস্য বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করেছেন । পরীক্ষায় দেখা গেছে , এই গাছ এমন কিছু রাসায়নিক উৎপাদন করতে পারে যা তাদের রোগ জীবাণু ও খরা থেকে রক্ষা করে। উল্লেখ্য , এই গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নাকি বাড়তে থাকে । পৃথিবীতে এখনও যেসব গাছপালা বেঁচে আছে তাদের অন্যতম প্রাচীন বৃক্ষ গ্রেট বেসিন ব্রিসেলকোন পাইন- এর দীর্ঘতম জীবনের রহস্য হলো এটি অত্যন্ত বিরূপ ও বৈরী পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে । চিলি ও আর্জেন্টিনার দক্ষিণে খুঁজে পাওয়া যায় আলেরসা গাছ , যা প্যাটাগোনিয়ান সাইপ্রাস নামেও পরিচিত । ধারণা করা হয় যে , এই প্রজাতির সবচেয়ে পুরনো বৃক্ষটির বয়স আনুমানিক ৪০০০ বছর । বিজ্ঞানীদের মতে , এই গাছটিতে এমন এক ধরনের রস আছে যা তাদের পচনের হাত থেকে রক্ষা করে । আফ্রিকান বেওয়াব গাছ ২০০০ বছরের বেশি বেঁচে থাকতে পারে । অত্যন্ত উপকারী , মূল্যবান ও ফলদায়ী এই গুরুত্বপূর্ণ গাছটির কিছু প্রজাতি সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারা গেছে , যা খুবই উদ্বেগের বিষয় । মানুষের গড় আয়ু বাড়লেও গাছের গড় আয়ু কিন্তু ক্রমশই কমছে , যা বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে খুবই চিন্তার বিষয় । এ এক মহা বিপদবার্তা । উন্নয়নের নামে নির্বিচার বৃক্ষনিধনের ফলে বিশ্বপ্রকৃতি আজ বিপন্ন । কার্বন সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে গেলে মানুষ তথা সমগ্র প্রাণীকুল জীবনদায়ী অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে , কারণ বাতাসে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড ক্রমেই বাড়তে থাকবে । এই অশনি সংকেত পাওয়ার পরেও সাবধান হচ্ছে না মানুষ । নিজেদের লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ।

নগরায়নের যাঁতাকলে প’ড়ে একের পর এক জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । মানুষের ভ্রুক্ষেপ নেই । গাছ অক্সিজেন দেয় , মাটি আঁকড়ে রাখে , বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে সভ্যতাক রক্ষা করে । কিন্তু এসব জানার পরেও গাছ কাটা বন্ধ হচ্ছে না , বরং আরও বেড়ে চলেছে ।
এই নির্বিচার ধ্বংসের মধ্যেও সুদীর্ঘ ৫০০০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কোনো গাছ , ভাবলেই রোমাঞ্চ হয় । রূপকথার গল্পের মতোই রহস্যময় এইসব গাছ বাস্তবেই রয়েছে পৃথিবীর বুকে ! কলকাতার শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে ‘ দ্য গ্রেট ব্যানিয়ান ট্রি ‘ , এই বিখ্যাত বটগাছের বয়স নাকি কলকাতার সমান ।

বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ নিয়ে নানা বিতর্ক মাঝেমাঝেই উঠে আসে । কয়েক বছর আগেও সেই জায়গায় ‘ প্রমিথিউস ‘- এর নাম শোনা যেতো । কিন্তু বর্তমানে সেই গাছটি আর নেই । গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী এখন সেই জায়গাটি নিয়েছে ক্যালিফোরনিয়ার হোয়াইট মাউন্টেনের বিশাল এক গাছ । চারদিকে পাথর , ঝোপঝাড় ও অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এটি । দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো নিপুণ ভাস্করের গড়া অসামান্য ভাস্কর্য । বাদামি রঙের রঙবাহার । শরীর জুড়ে আঁকাবাঁকা বিচিত্র ডালপালা । গাছে কোনো পাতা নেই । বিস্টলকোল পাইন প্রজাতির গাছ । লোকে নাম বলে ‘ মেথুসেলাহ ‘ । বয়সের ভারে পাতা ঝরে গেলেও সে অতন্দ্র প্রহরী । সভ্যতার অন্যতম রক্ষাকর্তা । ঘুম নেই তার চোখে । জীবন্ত মিথ । ডালে ডালে ইতিহাসের স্পর্শ । শতাব্দীর পর শতাব্দী । কয়েক হাজার বছর ধরে রয়ে গেছে পৃথিবীকে ভালবেসে । আহা , বেঁচে থাকো হে আদি প্রপিতামহ।

আরও পড়ুন- লাদাখে খাদে গাড়ি পড়ে মৃ.ত ৯ সেনা জওয়ান, শোকপ্রকাশ অভিষেকের

Related articles

NRI কোটায় মেডিক্যালে ভর্তির তদন্তে সাতসকালে শহর জুড়ে ইডি হানা

মেডিক্যালে ভর্তির দুর্নীতি (Medical scam) নিয়ে তদন্তে মঙ্গলের সকালে কলকাতার একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টটের (ED )আধিকারিকরা।...

টানা ১২ দিন ধরে সীমান্তে গোলাবর্ষণ পাকিস্তানের, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার বাড়ছে উত্তেজনা

সীমান্ত সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে একটানা ১২ দিন ধরে ভারতীয় সেনা (Indian Army Camp) ছাউনিকে টার্গেট করে...

দিঘায় ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখা সরানোর অভিযোগ মিথ্যে, গুজবের বিরুদ্ধে মামলা পুলিশের

পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় 'জগন্নাথ ধাম' (Jagannath Dham) লেখা সরানো নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটালো জেলা পুলিশ। ছবিসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়...

আজ মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ

ওয়াকফ সংশোধনী আইন (WAQF ammendment act) নিয়ে অশান্তির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আজ দেখা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা...
Exit mobile version