নেই ১০০দিনের কাজ, বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিক! করমণ্ডল দুর্ঘটনার পরই সামনে এসেছিল কঠিন সত্যি

বাংলায় কেন 'অদক্ষ' শ্রমিকদের কাজ নেই? কেন তাদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়? রাজনীতিতে পেরে না উঠে বাংলাকে ভাতে মারতে চাইছে কেন্দ্রের মোদি সরকার।

একের পর এক দুর্ঘটনা। পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু। আর তখনই শুরু হয়ে যায় হতদরিদ্র মানুষগুলিকে নিয়ে রাজনীতি। ভিন রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাওয়ার পথে মৃত্যু। আবার কাজ খুঁজে সেই কাজ করার সময়ও মৃত্যু। সম্প্রতি,
মিজোরামে ব্রিজ ভেঙে ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সবাই বাংলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক। মিজোরামের এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে সেই পুরনো বিতর্ক। বিজেপি নেতাদের দাবি, বাংলায় কাজ নেই, মমতা সরকার শ্রমিকদের ভাত দিতে পারছে না। তাই রাজ্যে ছেড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক পরিযায়ী হচ্ছেন কাজের সন্ধানে!

কিন্তু বাংলায় কেন ‘অদক্ষ’ শ্রমিকদের কাজ নেই? কেন তাদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়? শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের খুব সহজ সমীকরণ। তা হল রাজনীতির সমীকরণ। যে কোনও ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে দায়ী করা। কিন্তু সমস্যা বা সমীকরণ অনেক গভীরে। বাংলার শ্রমিকদের পরিযায়ী হওয়ার পিছনে লুকিয়ে আছে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।

মিজোরামের সেতু বিপর্যয়ের আগেও বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। মাস কয়েক আগের ঘটনা, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলার বহু পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন। বাংলার শ্রমিকরা কেন ভিন রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা। ওই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় অনেক আহত বিভীষিকাময় দিনটির কথা ভেবে শিউরে উঠছেন। সেই পরিস্থিতিতেও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে উঠে আসে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে।

টানা দু’বছর ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। তাই পেটের ভাত জোগাড় করতে একান্ত নিরুপায় হয়েই যেতে হচ্ছিল ভিন রাজ্যে। কাজের খোঁজে তাই অভিশপ্ত করমণ্ডলে ভিন রাজ্যে যাচ্ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি অংশ। তাঁরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। কেউ বাঁচেন, কেউ মারা যান। শুধু তাই নয়, একশো দিনের কাজ করেও টাকা মেলেনি। তাই বাজারে দেনা হয়ে গিয়েছে। বিকল্প পথ হিসাবে ভিন রাজ্যে গিয়ে টাকা রোজগার করে সেই দেনা মেটাতে চেয়ে ছিলেন অনেকেই। তাই ঘটনাস্থলে আহত অবস্থায় সেই সময় অনেকে বলেছিলেন, ‘১০০ দিনের টাকা দেয় না বলে যেতে হয় অন্য রাজ্যে।’ তাঁরা রেলের গাফিলতি নিয়েও সুর চড়ান। বাড়ি ফিরে একটু সামলে ওঠার পর অনেকে সংবাদমাধ্যমে জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠে আর ভিন রাজ্যে যাবেন না। নিজের গ্রামেই খুঁজে নেবেন কিছু কাজ। আর এই একশো দিনের কাজের টাকা গ্রামের মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে বারবার সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই দুর্ঘটনার পর এক মহিলা পরিযায়ী শ্রমিক জানিয়ে ছিলেন,।একশো দিনের টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ার পর মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে চেন্নাইয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন গত দু’বছর ধরে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন। বাংলায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। আগের কাজের মজুরির টাকা এখনও পাননি। কী করে পেট চলবে? তাই বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে যেতে হয়। সেখানে ধান কাটার কাজ করে দু’পয়সা রোজগার হয়। জব কার্ড থাকার পরও গত দু’বছর ধরে এই রাজ্যে তাঁদের কাজ নেই।

একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের সরকার। যা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পাওনা আদায়ের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামী ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে রাজধানী দিল্লির বুকে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন।

২০২২-২৩ আর্থিক বছরে এই একশো দিনের খাতে রাজ্যের পাওনা প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ শ্রমিকরা কাজ করে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা-ও দেওয়া হয়নি। আর ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের জন্য এক টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি। ২০২০ সালে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলা ৩৪ কোটি শ্রমদিবস তৈরি করতে পেরেছিল। একুশের বিধানসভা ভোটের পর প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিল। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক প্রতি হিংসার কথা বার বার তুলে ধরেছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগ, একুশের বিধানসভা ভোটের হারের পর থেকেই প্রতিহিংসা শুরু করেছে বিজেপি। রাজনীতিতে পেরে না উঠে বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে একের পর এক প্রকল্পের টাকা বন্ধ করছে কেন্দ্র।

ভিন রাজ্যে কাজ খুঁজতে কেন যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা?‌ সেই সংখ্যাটা বাড়ছে কেন? এই প্রশ্নে বিজেপি নেতাদের সহজ সমীকরণ, বাংলায় কাজ নেই, তাই ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। রাজনীতি করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করছেন শুভেন্দু-সুকান্তরা। কিন্তু তাঁদের মিথ্যাচার ধরা পড়ে যাচ্ছে। করমণ্ডল দুর্ঘটনার সময়ই মুখোশ খুলে গিয়েছিল।বিজেপি নেতাদের। কঠিন সত্যটা সামনে এসেছিল। যখন আহত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা মুখ খুলে ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, মোদি সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে দুর্দশা বাড়িয়েছে হতদরিদ্র পরিবারগুলির। পেটের দায়ে তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ভিন রাজ্যে ছুটতে হয় তাঁদের। তাই করমণ্ডল দুর্ঘটনা হোক কিংবা মিজোরামে সেতু বিপর্যয়, ভিন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি নেতারা।

আরও পড়ুন:বৃষ্টিস্নাত তিলোত্তমা! দক্ষিণে সারাদিন চলবে বৃষ্টি, উত্তরবঙ্গে কমলা সতর্কতা জারি

 

 

 

 

Previous articleবৃষ্টিস্নাত তিলোত্তমা! দক্ষিণে সারাদিন চলবে বৃষ্টি, উত্তরবঙ্গে কমলা সতর্কতা জারি
Next articleবৃষ্টির জেরে রেললাইনে যান্ত্রিক ক্রুটি, শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত