৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ,ইডি-সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও, আমানতকারীদের টাকা কারা কারা ধার নিয়েছে, কত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তার কোনও তালিকাই প্রস্তুত করতে পারেনি সিআইডি।

৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল ‘আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে। উত্তরবঙ্গের ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে ওই আর্থিক তছরুপের তদন্ত করছিল সিআইডি। কিন্তু সিআইডির সেই তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিআইডির কাছ থেকে নিয়ে তিনি ওই তদন্তের ভার দিয়েছেন ইডি এবং সিবিআইকে। আগামী ১২ অক্টোবর ওই দুই সংস্থাকে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

আলিপুরদুয়ার শহরের নিউটাউন এলাকায় রয়েছে ওই সংগঠনের অফিস। এই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলেছিলেন সমিতির সঙ্গে জড়িত লোকজন। পরে আর তা ফেরত দেননি বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও, আমানতকারীদের টাকা কারা কারা ধার নিয়েছে, কত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তার কোনও তালিকাই প্রস্তুত করতে পারেনি সিআইডি। প্রয়োজনীয় কোনও তথ্যও জোগাড় করতে পারেনি সিআইডি। প্রত্যাশিতভাবেই কিনারা হয়নি তদন্তের। টাকাও ফেরত পাননি আমানতকারীরা।

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে আর্থিক তছরুপের এই ঘটনার শুনানি হয়। সেখানে মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম কল্পনা দাস সরকার অভিযোগ করেন, আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে ২১ হাজার ১৬৩ জন টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কল্পনার দাবি, এত জন বিনিয়োগকারী সব মিলিয়ে মোট ৫০ কোটি টাকা রেখেছিলেন। টাকা জমা দেওয়ার সময় সমিতি জানিয়েছিল, ওই টাকা বাজারে ঋণ হিসাবে খাটানো হবে। কিন্তু পরে টাকা ফেরত পাওয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন, সমিতিই ‘বিলুপ্ত’ হয়ে গিয়েছে। তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডিও খুঁজে বার করতে পারেনি কাদের ওই টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয় সমিতির পাঁচ কর্তাকে।

মামলাকারী আদালতে অভিযোগ করেন, ঋণ দেওয়া হলে গ্রহীতাদের নাম থাকত। কিন্তু সিআইডি গত তিন বছরে কারও নাম খুঁজে পায়নি। যার অর্থ টাকা পাচার হয়ে গিয়েছে। এমনটাই দাবি কল্পনার।বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিআইডিকে ভর্ৎসনা করে বৃহস্পতিবার বলেন, “এই আর্থিক তছরুপের ঘটনায় বিরাট প্রতারণা চক্র কাজ করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডি এই তদন্তের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছে।” এর পরেই তিনি বলেন, “সিআইডির হাত থেকে তদন্তের ভার সিবিআই এবং ইডিকে দেওয়া হচ্ছে। ২৫ অগস্ট থেকেই এই দুই সংস্থা তদন্ত শুরু করে দেবে। তদন্তের স্বার্থে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং প্রয়োজনে হেফাজতে নেওয়ার ব্যাপারেও তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। সিআইডির আর তদন্ত করার কোনও প্রয়োজন নেই।”

পরবর্তী সময়ে কলকাতা থেকেও এই মামলার শুনানি চলবে। তদন্তকারী সংস্থা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারবে। বিচারপতি আরও বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা যদি মনে করে আমার সার্কিট বেঞ্চে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে তারা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। প্রধান বিচারপতি অনুমতি দিলে প্রতি শনিবার এই মামলার শুনানিতে থাকতে আমি প্রস্তুত।”

 

 

 

Previous articleমণিপুর হিং.সায় CBI তদন্তের সব মামলার শুনানি অসম আদালতে, নির্দেশ সুপ্রিমকোর্টের
Next articleচন্দ্রলোকে নারীশক্তির উদযাপন! মহিলা মহাকাশচারী পাঠাতে উদ্যোগ নাসার