নতুন মানচিত্র (Map) প্রকাশ করে অরুণাচল প্রদেশকে (Arunachal Predesh) নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। শুধু তাই নয়, আকসাই চিনও যে শুধুমাত্র তাদের এমনটাই দাবি বেজিংয়ের (Beijing)। পাশাপাশি তাদের তরফে একটি মানচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে যত সমস্যা। আর চিনের এমন দাবিতে পাল্টা দিয়েছে ভারতও। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar) বলেন, এই ধরণের ভ্রান্তি ছড়ানো ম্যাপ প্রকাশের অভ্যেস চিনের আছে। জয়শঙ্করের কথায়, চিন ওদের মানচিত্রে এমন ভূখণ্ডকে অন্তর্গত করেছে, যা আদৌ ওদের নয়। এটা ওদের পুরনো অভ্যাস। ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের ম্যাপে ঢুকিয়ে দিলেই কিছু পরিবর্তন হয় না। আমাদের সরকার নিজেদের সীমান্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আজগুবি দাবি করলেই অন্যের ভূখণ্ড ওদের হয়ে যাবে না। ওই ভূখণ্ড ভারতের ছিল, ভারতেরই থাকবে। তবে কেন্দ্র যত সাফাই দিক না কেন তা মানতে নারাজ তৃণমূল (TMC) সহ বিরোধীদের। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, মোদি সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই একের পর এক মিথ্যাভাষণ দিয়ে চলেছে কেন্দ্র। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) আগে এসব করে লাভের লাভ কিছুই হবে না। আসল সত্য সামনে আনুক মোদি সরকার।

এর মধ্যেই সামনে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গিয়েছে, আকসাই চিন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ব্যাঙ্কার তৈরি করেছে চিন। সেনা বাহিনীকে বিমান থেকে সাহায্য করা অথবা মিসাইল হানার সুবিধা করে দেওয়া যায়, এমন নানান পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। আকসাই চীনের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে উপগ্রহ চিত্রে। ইতিমধ্যে সুড়ঙ্গ ও খাদ তৈরি করেছে লাল ফৌজ। উল্লেখ্য জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্বে লাদাখ সংলগ্ন অংশ, যা ১৯৬২-র যুদ্ধে দখল করে নিয়েছিল চিন, সেই অংশই আকসাই চিন নামে পরিচিত। গত ২৮ আগস্ট দেশের নতুন সরকারি মানচিত্র প্রকাশ করেছে চিন। আর সেই মানচিত্রে অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করা হচ্ছে৷ এদিকে, আগামী মাসেই দিল্লিতে জি–২০ সম্মেলন বসছে। সম্মেলনে হাজির থাকার কথা রয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এরও।
এর আগে গত এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম বদলে দেয় চিন। জি২০ এর একটি বৈঠক হয় অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী শহর ইটানগরে। সেই বৈঠকে গরহাজির ছিল চিন। তবে একদিকে, চীনের তরফে লাগাতার পদক্ষেপ, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল। যা নিয়ে ঘরে বাইরে চরম সমালোচনার সম্মুখীন কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের সমালোচনা করে তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেলে বলেন, জি২০ সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দিল্লিতে আসার আগেই এই মানচিত্র প্রকাশ করেছে বেজিং। এরপরই সাংসদের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি ২০২৪ নির্বাচনের প্রচারের জন্য নাচ এবং গানে ব্যস্ত থাকবেন নাকি তিনি অবশেষে সাহসের পরিচয় দেখাবেন?” অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জওহর সরকার মোদি সরকারের সমালোচনা করে এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে অবিলম্বে বিবৃতি দিন। আপনি দয়া করে নিজের ইগো সরিয়ে মৌনতা ভেঙে আসল তথ্য সামনে আনুন। আসলে জি২০ সম্মেলনে নিজেকে বিশ্বের সেরা হিসাবে প্রমাণিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেকারণেই তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

China has released its official "standard map," including the state of Arunachal Pradesh and the Aksai Chin region as part of its territory.
While such a national security threat looms over our nation, PM @narendramodi continues to maintain DEAFENING SILENCE on the issue.
Mr.…
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) August 30, 2023
Instead of taking firm steps against the inclusion of Arunachal Pradesh and Aksai Chin in China's standard map, a mere warning has been issued.
PM @narendramodi, we condemn your SILENCE!
Hear more from our leader @jawharsircar 👇 pic.twitter.com/JO9m2vHUnu
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) August 30, 2023
অন্যদিকে, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেন, আমি বছরের পর বছর ধরে বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী যে বলছেন লাদাখের এক ইঞ্চি জমিও হাতছাড়া হয়নি, একথা সম্পূর্ণ ভূল। তবে মানচিত্রের বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। ওরা আমাদের ভূখণ্ড দখল করে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই নিয়ে অবিলম্বে বিবৃতি দেওয়া দরকার। পাশাপাশি বিজেপি নেতা তথা মোদির সমালোচক হিসাবে পরিচিত সুব্রহ্মণ্যম স্বামী চিন নিয়ে মোদির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ২০২০ সালে মোদি বলেছিলেন চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করেনি এবং চিন ভারতমাতার অংশ দখল করেনি। তিনি একথা বলে সেই সময় ভারতবাসীকে ভুল বুঝিয়েছিলেন। মোদির এই মিথ্যা বড় পাপ। আমরা আগামী সপ্তাহে দেখতে পাব শি জিনপিং এর সামনে মোদি ঝুঁকবেন এবং তাঁকে অভিনন্দন জানাবেন।
