নিষিদ্ধ ‘টু ফি.ঙ্গার’ পরীক্ষা! নারী নি.র্যাতন ইস্যুতে বড় পদক্ষেপ বাংলাদেশের  

খায়রুল আলম, ঢাকা

 

সম্প্রতি ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মেডিকেল পরীক্ষায় (Medical Examination) ‘টু ফিঙ্গার’ (Two Finger) পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। এই প্রসঙ্গে হাই কোর্টের দেওয়া রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার এমনই তথ্য সামনে আনল রিটকারী সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST)।

২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল এই সংক্রান্ত বিষয়ে রায়দান করেন হাই কোর্টের (Bangladesh High Court) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ। আর সেই রায়কে উল্লেখ করে বাংলাদেশের এই সংগঠনটি জানায়, আদালত এই মামলায় মোট আটটি নির্দেশ দিয়েছে।

নির্দেশগুলি হল:

  • ধর্ষণের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে দুই আঙ্গুলের পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক, অনির্ভরযোগ্য এবং অবৈধ। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে দুই আঙ্গুলের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
  • রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘হেলথ রেসপন্স টু জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স-প্রোটোকল টু হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার’-এ প্রোটকলটি সব ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ফিজিশিয়ান যারা ধর্ষণের শিকার নারীদের ডাক্তারি পরীক্ষা করে পুলিশ কর্মকর্তা যারা ধর্ষণের মামলার তদন্ত করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলার সরকারী প্রসিকিউটর এবং আইনজীবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
  • এরপর চিকিৎসকরা ধর্ষণের শিকার নারীদের ডাক্তারি পরীক্ষার সনদে ধর্ষণের বিষয়ে মতামত দেবেন। কিন্তু কোনওভাবেই অমর্যাদাকর শব্দ, যেমন- অভ্যাসগতভাবে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত প্রয়োগ করতে পারবেন না এবং ধর্ষণের শিকার নারীকে তার অতীতের যৌন সম্পর্ক নিয়ে কোনওরকম জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না।
  • ধর্ষণের শিকার নারীদের যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে হবে।
  • কোনও শিশু বা কিশোরীর ক্ষেত্রে পার স্পেকুলাম এক্সামিনেশন করা যাবে না, যদি না কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন থাকে।
  • বায়ো ম্যানুয়াল পরীক্ষার সঙ্গে দুই আঙ্গুলের পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। সেকারণেই ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা কোনওমতেই করা যাবে না। আর যদি পরীক্ষা করতেই হয় সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকাদের নিয়োগ করতে হবে।
  • পরীক্ষার চলাকালীন একজন মহিলা পুলিশ, নির্যাতিতার আত্মীয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সুবিধা অনুযায়ী একজন মহিলা চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে।
  • কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবে।
  • এর আগে ২০১৬ সালে এ পদ্ধতিকে ‘সেকেলে ও অনৈতিক’ বলে হাইকোর্টে মৌখিকভাবে মতামত উপস্থাপন করেছেন পাঁচ ফরেনসিক মেডিকেল বিশেষজ্ঞ।
  • নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে, আদালতে নারীকে এমন প্রশ্ন করা যাবে না, যা তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।
  • বিশেষজ্ঞরা আদালতে জানান, এই পদ্ধতি সেকেলে। বর্তমানে যৌন নির্যাতনের পরীক্ষার আধুনিক অনেক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে।
  • সনাতন পদ্ধতিতে (দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে পরীক্ষা) ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষা করার কারণে অনেক ভিকটিম পরীক্ষা করাতে আসেন না। আর এ কারণে অনেকে ধর্ষিত হয়েও বিচার পান না। ভারতে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
  • সনাতন পদ্ধতিটি একজন নারীর জন্য চরম বিব্রতকর ও অবমাননাকর।

তবে নতুন ও আধুনিক মানবিক পদ্ধতি প্রবর্তন করার জন্যই এই আবেদন জানানো হয়। যাতে ভবিষ্যতে কোনও মহিলা অবমাননার শিকার না হওয়ার পাশাপাশি সঠিক ও মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক মানবিক পদ্ধতিতে মেডিক্যাল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাঁরা যেন সুবিচার পান।

 

 

 

 

Previous articleINDIA’তে প্রধানমন্ত্রী মুখ একাধিক, NDAতে মাত্র ১জন: উদ্ধব ঠাকরে
Next articleঅমিতাভকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি জানালেন মমতা, দুর্গাপুজোয় বাংলায় আসার আমন্ত্রণ