যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনার ২১ দিন কেটে গেলেও এখনও এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সবপক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিল। বৈঠকে শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী, গবেষক ও পড়ুয়ারা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে ‘আজব’ দাবি করল ছাত্র সংগঠনগুলি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোথায় কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এমনকী সিসিটিভি কারা নজরদারি করবে তাও লিখিতভাবে জানানোর অদ্ভূত আবদার করেছেন ছাত্র সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।

এই দাবি সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, ক্যাম্পাসে কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে তাও কি নির্ধারণ করে দেবেন পডু়য়ারা? বরং প্রশ্ন উঠেছে,যেদিন মৃত পড়ুয়া হস্টেলের বারান্দা থেকে পরে গিয়েছিলেন তখন কোন দায়িত্ব পালন করেছিল ছাত্র সংগঠন।তখন কেন কর্তৃপক্ষকে তারা কিছু জানায়নি?বরং ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত ছিল সবাই। দ্রুত ওই পড়ুয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো সে এ যাত্রায় বেঁচে যেতে পারত।কিন্তু তা না করে ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা জেনারেল বডির মিটিং করেছিলেন। কোন মুখে তারা এই দাবি শুক্রবার করলেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

পডুয়াদের জানানো হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যেই সিসিটিভি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তারপরই তা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এমনকী প্রাক্তন সেনাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় মোতায়েন করার বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছে স্টেকহোল্ডাররা। এই নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু স্টেক হোল্ডার হলেই তাদের আপত্তি মানতে হবে কেন? ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক চললেও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ হয়নি।

এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের TMCP ইউনিটের সভাপতি রাজন্যা হালদার বলেন, ‘আমি এই ধরনের কোনও কিছু শুনিনি এখনও। কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে সেটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। কোনও আইনে লেখা নেই যে এটা নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এমন যদি কেউ দাবি করে থাকে সেটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’
উল্লেখ্য, ৯ অগাস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মৃত পড়ুয়াকে র্যাগিং করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে পরিবার। পুলিশি তদন্তে সেই তত্ত্বই আরও জোরাল হয়। তদন্তে নেমে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও পড়ুয়াসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন এই মুহূর্তে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। একাধিকবার ঘটনার পুনর্নিমাণ করেছে পুলিশ। পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঠান্ডা মাথার খুন, আত্মহত্যা না নিছকই দুর্ঘটনা তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘যাদবপুর কাণ্ডে খুব ভালভাবে তদন্ত এগোচ্ছে। এটাতে আমাদের হোমিসাইড, লোকাল পুলিশ স্টেশন যুক্ত আছে। যারা র্যাগিংয়ের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। প্রমাণ জোগাড়ের কাজ চলছে। আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ করে আমরা কেসটির সমাধান করতে পারব।’
