২১৩ বছরেও কাদা খেলার মাটি দিয়ে ময়নাগুড়ির বসুনিয়া বাড়ির দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয়!

পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে । যদিও ময়নাগুড়িতে দিন দশেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে সলতে পাকানোর পর্ব। জানলে অবাক হবেন, প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দিন কাদা খেলার মধ্য দিয়ে ময়নাগুড়ির আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বসুনিয়া বাড়ির দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। ময়নাগুড়ির বসুনিয়া বাড়ির পুজো এ বছর ২১৩ বছরে পদার্পণ করল। ঐতিহাসিক এই পুজো কোচবিহারের রাজা প্রাণনারায়ন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন দীপু বসুনিয়া।

 

ময়নাগুড়িতে প্রাচীন দুর্গাপুজো হিসেবে পরিচিত বসুনিয়া বাড়ির দুর্গাপুজো। জানা গিয়েছে, বসুনিয়া বাড়ির পূর্বপুরুষ ধনবর বসুনিয়া কোচবিহারের রাজবাড়িতে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। আজ থেকে ২১৩ বছর আগে কোচবিহারের রাজা প্রাণ নারায়ণ বাংলাদেশ থেকে প্রতিমা নিয়ে কোচবিহারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন চাপগর এলাকায় তার সেনাপতির গড়ে বিশ্রামের জন্য আসেন সে সময় অবিরাম ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। প্রতিমা নিয়ে কোচবিহারে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তিনি তার সৈন্যদের রাজবাড়িতে পাঠান এবং বলেন প্রতিমা নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এরপর রাজা তার হিসেবরক্ষক ধনবর বসুনিয়ার বাড়িতে মূর্তি পুজো করেন। সেই সময় থেকেই এই পুজা শুরু হয়। কথিত আছে, সেই সময় বসুনিয়া বাড়িতে প্রতিমা দিয়ে পুজো হলেও রাজ বাড়িতে ঘট পুজো হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, বর্তমানে বসুনিয়া বাড়ির প্রতিমা গড়েন সীমান্ত রায়। তিনি গত ১০বছর ধরে মূর্তি তৈরি করছেন। এর আগে তার পূর্বপুরুষেরা মূর্তি তৈরি করতেন। বসুনিয়া বাড়ির প্রতিমা অন্যান্য প্রতিমার থেকে আলাদা। এখানে দেবী দুর্গা রাজবংশী বধূর সাজে আসেন। সাধারণ ঘরের মেয়েদের মতোই সাজানো হয় দেবী দূর্গাকে।
এক সময় এই পুজো উপলক্ষে বসুনিয়া বাড়িতে পালাটিয়া গান, কুশাণ গান হতো। তবে এখনো এই পুজোয় প্রচুর আনন্দ করেন এলাকার মানুষ। অসম, নেপাল, কোচবিহার থেকেও প্রচুর বিদ্বজনেরা পুজোর সময় বসুনিয়া বাড়িতে আসেন। এখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সুনীল বসুনিয়া বলেন, আমাদের এই পুজো বহু পুরাতন পুজো হিসেবে পরিচিত। আমাদের আমগুড়ি এলাকায় প্রচুর লোকজন আমাদের বাড়ির পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে। প্রতিবছর কাদা খেলার যে মাটি সেই মাটি দিয়েই দেবীর মূর্তি তৈরি হয়। অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠার সাথে আমাদের এই পুজো হয়। পুজোর সময় আমাদের সমস্ত আত্মীয় পরিজনেরা একত্রিত হই। আমাদের মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের এই পুজোর সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন:অপহৃ.ত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র! শুরু পুলিশি তদন্ত

Previous article‘প্রস্তুতি নিয়ে মুখ খুলতে চাই না, মুখ খুললেই বিপদ’, বাংলাদেশকে হারিয়ে বললেন সুনীল
Next articleরাজনৈতিক প্রতিহিং.সা থেকেই অভিষেককে হেন.স্থা প্রমাণিত, হাইকোর্টের রায়ের পরই সরব তৃণমূল