তারকেশ্বরে টোটো চালান জীবন্ত দুর্গা, রাত বিরেতে মহিলাদের ভরসা শুধুই তনুশ্রী

সুমন করাতি, হুগলি

দুর্গা পুজো আসতে আর মাত্র ২২ দিন বাকি। চারিদিকে সাজো সাজো রব। কোথাও থিম কোথাও সাবেকি, চিন্ময়ী মাকে মৃন্ময়ীতে আবাহনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ৫ দিনের নয় তারকেশ্বরের দত্তপুকুর গ্রামে থাকেন ১২ মাসের, ৩৬৫ দিনের দুর্গা। অভাবে তাড়নায় স্বামীর মতোই টোটো চালান তিনি। তবে আর পাঁচটা টোটোর মতো স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড যান না। শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ বিপদে পড়লে হাসপাতাল ডাক্তার-খানা ও রাতে মহিলাদের দিয়ে আসা নিয়ে আসার কাজ করেন। স্বামী বছর পাঁচেক আগে কাজ হারিয়েছেন। তাই সংসারের হাল ফেরাতে ভাসুরের টোটোটি কিস্তিতে কিনে নেন তনুশ্রী। শুরু হয় নতুন পথচলা। আজ তিনি সকলের আদর্শ হয়ে উঠেছেন।

অন্যান্য টোটো চালকদের মতো তনুশ্রী স্টেশন থেকে বাস স্ট্যান্ড বা এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে টোটো চালান না। গ্রামের মানুষরা ডাক্তার দেখাতে যাওয়া হাসপাতালে যাওয়া অথবা পড়াশোনা করে গ্রামের কোন মেয়ে রাতে বাইরে থেকে এলে তাদের একমাত্র ভরসা তনুশ্রী। তিনি বাস্তবের দুর্গা। স্থানীয়রা বলছেন রাতে মেয়েরা গ্রামে ফিরতে তনুশ্রীর উপরেই ভরসা করেন। আমরা চাই এইরকম আরো মহিলার টোটো চালক তৈরি হোক গ্রামে। এ কাজ করে নিজেই উপার্জন যেমন করছেন, সাথে সাথে তনুশ্রী গ্রামের মানুষের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন। এই বিষয়ে তনুশ্রী জানান, বাড়িতে তিন বোনের মধ্যে ছোট ছিলাম আমি। নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম। স্বামী টোটো থেকে উপার্জনের অর্থে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল।সংসারের হাল ফেরাতে বাধ্য হয়ে ভাসুরের বিক্রি করা টোটো চালাতে শুরু করি আমি। গ্রামের সকলেই আমাকে দরকার পড়লেই ডাকতে থাকেন। মহিলা ও বয়স্করা আমার প্রধান যাত্রী। রাতে স্টেশন থেকে গ্রামের কোন মেয়েকে আনতে তাদের পরিবারের লোকজন আমাকেই খবর দেন। রাতে বেশি হলে একটু ভয় লাগে, তবে বেশিরভাগ মানুষই সহযোগিতা করেন। বহু মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছি। তিনি বলছেন , প্রয়োজনে লজ্জা ভয় ত্যাগ করে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে নিজের পছন্দের পেশায় আসুক এটাই তাঁর কাম্য।

Previous articleকুণালের কোটি কোটি টাকার প্র.তারণার তথ্য জানতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ গোয়েন্দারা
Next articleভারত-কানাডা সম্পর্কের জেরে বাড়তে পারে ডালের দাম