মোদি সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এবার দেশের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হল সাংবাদিকদের ফোরাম। বিরোধী দল থেকে সংবাদমাধ্যম, যেকোনও বিরুদ্ধস্বর দমনে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার মারাত্মক প্রবণতা সম্পর্কে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ পোর্টাল নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে দিল্লি পুলিশ। চিনের টাকায় ভারত-বিরোধী প্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে ইডির তথ্যের ভিত্তিতে ইউএপিএ ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে অমিত শাহের পুলিশ। একাধিক সাংবাদিককে হেনস্থা ও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার জেরে এবার দেশের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখল দেশের ১৬ টি মিডিয়া সংগঠন। চিঠিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হল, সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার লাগাতার দমননীতি বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করুক দেশের বিচারবিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে থাকাকালীন আপনি দেখেছেন কীভাবে অসংখ্য ক্ষেত্রে দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে এই এজেন্সি-অস্ত্র। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাসের মামলা দায়ের করা হয়েছে। একাধিক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে সাংবাদিকদের হেনস্থার উদ্দেশ্যে। চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, সত্য তুলে ধরা সংবাদমাধ্যমের কাজ। নিজেদের স্বার্থে সেই কাজ থেকে সংবাদমাধ্যমকে বিরত করতে লাগাতার ষড়যন্ত্র চলছে। মিডিয়াকে ভয় দেখানো সমাজের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রভাবিত করে। প্রধান বিচারপতির কাছে মিডিয়া সংগঠনগুলির তরফে আবেদন জানানো হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ও সীমাহীন। অবিলম্বে বিচারবিভাগ যদি এর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয় সেক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। বিচারবিভাগের কাছে আমাদের সম্মিলিত আবেদন, তদন্তকারী সংস্থাগুলির তরফে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই দমন নীতি বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করুন।

চিঠিতে আদালতকে তিনটি বিষয় বিবেচনা করার জন্য বলা হয়েছে: প্রথমত, সাংবাদিকদের ল্যাপটপ, ফোন সহ অন্যান্য ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করা আটকাতে নিয়ম লাগু করা হোক। দ্বিতীয়ত, নির্দেশিকা জারি হোক সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বাজেয়াপ্ত করার মতো ক্ষেত্রে এবং তৃতীয়ত, এই সমস্ত ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থাগুলিও যাতে জবাবদিহি করতে বাধ্য হয় তা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করা। সবশেষে জানানো হয়েছে, গত কয়েক বছরে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে তদন্তকারী সংস্থা দ্বারা মুক্তমনা সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণের ঘটনায় বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়েছে। আমরা সেই মামলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আপনার কাছে আবেদন জানানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আমাদের অনুরোধ, দেরি হওয়ার আগে এবং স্বৈরাচারী পুলিশ রাষ্ট্রের মডেল হয়ে ওঠার আগে বিচারবিভাগ এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল থেকে সাংবাদিক সহ মোট ৪৭ জনের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। এরপর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নিউজ পোর্টাল নিউজ ক্লিকের এডিটর-ইন-চিফ প্রবীর পুরকায়স্থ ও এইচআর হেড অমিত চক্রবর্তীকে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন বা ইউএপিএ-তে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি-যোগ ও দেশদ্রোহের’ অভিযোগ এনেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি ৩৭ জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ৯ জন মহিলাকে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া তাঁদের বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস (মোবাইল, ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ ইত্যাদি) ও বহু নথি পরীক্ষা করার জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে এই তল্লাশি অভিযান চালানো হলেও পুলিশের কাছে ছিল না কোনও সার্চ ওয়ারেন্ট। পুলিশের যুক্তি, গত অগাস্টে নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায়, তাই কোনও সার্চ ওয়ারেন্টের প্রয়োজন নেই।