শতাধিক সা.ম্প্রদায়িক হিং.সায় ‘ফে.ইক নিউজ’ দায়ী

খায়রুল আলম, ঢাকা

বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে শতাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ‘ফেক নিউজ’ দায়ী। ২০১২ সালে কক্সবাজারে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে কেন্দ্র করে নানা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যার উৎস ছিল- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য অনুসঙ্গ। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন মহল স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ ধরনের ভুয়া খবর পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে থাকে।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হোটেল সোনারগাঁয় ‘ফেইক নিউজ যা মহামারির চেয়েও দ্রুত ছড়ায়: এক নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ) এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আলোচ্য বিষয়ের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষক অরুপ রতন সাহা। এ সময় তিনি ফেইক নিউজ কী এবং অনলাইন মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে এই ফেইক নিউজ কীভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা তুলে ধরেন।

এছাড়া ফেইক নিউজ কিভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা কমিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের অ্যার্টনি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি। আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ও নাট্যব্যাক্তিত্ব ম হামিদ, ইন্ডিয়ান ল’ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এস সিভাকুমার। সংগঠনের ‍নির্বাহী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বলের সঞ্চালনায় মুক্ত আলচনায় অংশ নেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম মাসুম বিল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ডিন ড. রহমতউল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, সিনিয়ির সহকারী জজ কনক বড়ুয়া, প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি বলেন, বাকস্বাধীনতাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে এই ফেইক নিউজ বা গুজবের সৃষ্টি। প্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যেভাবে বাকস্বাধীনতার নামে গুজব ছড়ানো হয়, তা প্রতিরোধের জন্য আমাদের নিজেদের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করে সমাজে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে।

ভেঙ্কটরমানি আরও বলেন, ‘ফেক নিউজ’, সোশাল মিডিয়ার যুগের এক জটিল সমস্যা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এখন এই বিষয়টি মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। গণমাধ্যম শক্তিশালী হলেও কখনো কখনো এর বিরুদ্ধে ভূমিকা ব্যর্থ হচ্ছে। গণমাধ্যমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাগরিক সকলকেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

আরমা দত্ত বলেন, ফেইক নিউজ বৈশ্বিক শান্তি, সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ফেইক নিউজ বা গুজব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। মঃ হামিদ বলেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভুয়া খবরের শিকারে নানাভাবে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। দেশেও গণমাধ্যমগুলো নিজস্ব স্বার্থে ভুয়া খবর তৈরি করে। এমন কিছু ঘটনায় অনেকগুলো গণমাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে।

প্রফেসর এস. শিভাকুমার ফেইক নিউজ বা গুজব ছড়িয়ে পড়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন- যার মধ্যে হলুদ সাংবাদিকতা অন্যতম। তিনি বলেন, ফেইক নিউজ বা গুজবের বিষয়ে শুধু আইন করলে হবে না বরং সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। মুক্ত আলোচনায় আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফেইক নিউজ দেশে শুধুমাত্র অরাজকতা সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হয়ে থাকে।

প্রফেসর এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ফেইক এবং সংবাদ (নিউজ) শব্দ দুইটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সংবাদের তথ্যসূত্র যাচাই না করে অন্ধ বিশ্বাস করা যাবে না। ড. রহমতউল্লাহ আইনের ফাঁকফোকরগুলোকে সংস্কারের আহ্বান জানান। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বলেন, বাবরি মসজিদ, শাখারি বাজার এবং নাসিরনগরের ঘটনা ফেইক নিউজ থেকে সৃষ্ট। ফেইক নিউজের হাত থেকে আমাদের জাতীয় চার নেতাও মুক্তি পাননি। তাদেরকে নিয়েও অনেক ধরণের গুজব ছড়ানো হয়।

সিনিয়র সহকারী জজ কনক বড়ুয়া বলেন, গুজব প্রতিরোধে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য বিটিআরসিকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংবাদিক সেলিম সামাদ গুজব প্রতিরোধে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা থেকে রটনা তৈরি করে ফেইক নিউজ যেভাবে আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা রোধ না করা গেলে দেশে আরও অরাজকতার সৃষ্টি হবে। প্রায়শই রটনাগুলো ছড়িয়ে গিয়ে বেশি প্রধান্য পায়। এতে নাগরিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি শুধুমাত্র ইতিবাচক উন্নয়ন সাধন করেছে এমন নয়, বরং এর নেতিবাচক প্রভাবও ব্যাপক। যারা গুজব ছড়ায় তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিবাদ করতে হবে। গুজব যত দ্রুত ছড়ায় তার থেকেও দ্রুত সত্যকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সত্যই সর্বোত্তম এবং সব সমস্যার সমাধান।

আরও পড়ুন- ‘ভাঁ.ওতাবাজি’ নয়, ক্ষমতায় এলেই কৃষকদের ঋণ মুকুব! ছত্তিশগড়ের সভা থেকে মোদিকে ধুয়ে দিলেন রাহুল

Previous articleআগামিকাল ভারতের সামনে ইংল‍্যান্ড, দলে হতে পারে পরিবর্তন
Next articleবাড়ি ঢুকে তরুণীর উপর অ্যা.সিড হা.মলা বারুইপুরে! তদন্তে পুলিশ