মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে কপিলকেও ছাপিয়ে গেলেন ম্যাক্সওয়েল! আলোচনায় ক্রিকেট বিশ্ব

কোনটা সেরা? কেউ সদুত্তর দিতে পারছেন না। অলক্ষ্যে বুঝি হাসছেন ক্রিকেটের ভাগ্য বিধাতা!

একপায়ে দাঁড়িয়ে একার দায়িত্বে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে গেলেন অজি তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)। পায়ের ব্যথা, কোমরের যন্ত্রণা মাঠে বারবার ফিজিওকে আসতে বাধ্য করেছে বটে কিন্তু মাঠ ছেড়ে একচুল নড়ানো যায়নি ছেলেটাকে। সোমবার ক্রিকেট বিধাতা হয়তো শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডারের খেলাতেই মনোনিবেশ করেছিলেন। না হলে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ২০১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা সম্ভব ছিল না। অবশ্য অতিমানবীয় আখ্যা দিলেও সেটা কম হবে। অস্ট্রেলিয়ার (Australia vs Afghanistan) স্কোরবোর্ড যখন ৯১/৭ ততক্ষণে আফগান মুলুকে সেলিব্রেশন শুরু হয়ে গেছে। আবার এক অঘটনের বিশ্বকাপের সাক্ষী হতে চলেছেন বুঝি ক্রিকেট প্রেমীরা। কিন্তু ক্রিজে তখনও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)! খাদের কিনারা থেকে ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস। এরপরেও কপিলের (Kapil Dev)১৯৮৩ এর ইনিংসের সঙ্গে তুলনা আসবে না?

প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত (World Cup champion India)। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের ঐতিহাসিক সেই সফর। ফাইনালে লয়েড বাহিনীকে ধ্বংস করার আগে ভারতের কাছে কঠিন ধাপ ছিল জিম্বাবয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ। কিন্তু স্টেডিয়ামে থাকা দর্শক ছাড়া সেই ম্যাচের অনুভূতি কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি। বিবিসির ধর্মঘটের কারণে ভারত বনাম জিম্বাবোয়ের সেই ম্যাচ সম্প্রচার হয়নি। তাই তার কোনও ভিডিয়ো ফুটেজও নেই।লন্ডনের অদূরে টার্নব্রিজ ওয়েলসে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও জিম্বাবোয়ে। কপিল টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র ১৭ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেট হারায় ভারত। তখন পুরো ৬০ ওভার ইন্ডিয়া খেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। ১০০ পার হওয়া নিয়ম সন্ধিহান ছিলেন সকলে। তারপর ব্যাট হতে রূপকথা লিখলেন কপিল। মাত্র ১৩৮ বলে ১৭৫ রান। ভারত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ করে। আর ৩১ রানে ম্যাচ যেতে টিম।

কাট টু ২০২৩। এটাও বিশ্বকাপের ম্যাচ। মুম্বইয়ের ওয়েংখেড়েতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯২ রান তাড়া করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯ ওভারে মাত্র ৯১ রান, আর হাতে মাত্র ৩ উইকেট। এত বড় টার্গেট যে জয় করা যাবে না সেটা জানতেন সকলেই। অস্ট্রেলিয়ার ফ্যানেরাও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। হঠাৎ মাঠে ঝড় উঠল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মানসিক জেদের সাইক্লোনে মাত্র ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করলেন ম্যাক্সি। ৫০ ওভার ফিল্ডিংয়ের ধকল সামলে এবার যে আরও বড় পরীক্ষা। জার্সির হলুদ রং ততক্ষণে গাঢ় হতে শুরু করেছে। অবিশ্বাস্য কিছু শট খেললেন। কার্যত এক পায়ে একটা গোটা ইনিংস টেনে নিয়ে গেলেন। খেলা নয় কবিতা লেখা হচ্ছে যেন মাঠে। এও সম্ভব। কপিলের মতো ইনিও অপরাজিত। বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপ্টিলও। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এত প্রতিকূল ছিল না।

৪০ বছর পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা কপিল দেবের রূপকথার ইনিংসের সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক ইনিংসের তুলনা টানতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনটা সেরা? কেউ সদুত্তর দিতে পারছেন না। অলক্ষ্যে বুঝি হাসছেন ক্রিকেটের ভাগ্য বিধাতা!

Previous articleক্রিকেটের মহাকাব্যে ম্যাক্সওয়েল কোন কোন রেকর্ড গড়লেন ?
Next articleথানা থেকে হাওয়া বোতল বোতল ম.দ! আদালতে ‘আজব’ দাবি পুলিশের