ডায়মন্ড হারবারের ৭০ হাজার মহিলাকে বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হবে তৃণমূলের তরফে। নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। শুক্রবার ফলতায় বস্ত্রবিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে একথা ঘোষণা করে দিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে সঙ্গে তুলে ধরলেন কেন গোটা দেশের মধ্যে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয় ডায়মন্ড হারবার। নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে একইসঙ্গে আক্রমণ শানালেন ধর্মের নামে বিভাজনকারী বিজেপিকে।
কিছু সমস্যার জন্য নতুন আবেদনকারীদের বার্ধক্যভাতা আটকে রয়েছে। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের মানুষও এই সমস্যার ভুক্তভোগী। বয়স্ক মানুষের অসহায় অবস্থায় গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই শুক্রবার ফলতার সভা থেকে অভিষেক বলেন, “ডায়মন্ড হারবারে ৭০ হাজার বয়স্ক মহিলাকে রেজিস্টার করা হয়েছে বার্ধক্যভাতার জন্য। কিছু সমস্যার জন্য তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না।” এরপরই অভিষেক বলেন, “সরকার যবে দেবে দেবে। তবে তৃণমূলে ১ থেকে ১.৫ লক্ষ কর্মী রয়েছেন এই ডায়মন্ড হারবারে। তাঁরা এই বয়স্ক মহিলাদের আর্থিক সাহায্য করবেন। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে তাঁদের।” একইসঙ্গে অভিষেক যোগ করেন, “এটাই ডায়মন্ড হারবার মডেল। এটাই জনপ্রতিনিধির কাজ। জনপ্রতিনিধির কাজ ‘জুমলা’ বলা নয়, টাকা নিয়ে সেটিং নয়, মানুষের টাকা আটকে রাখা নয়, ধর্মের নামে ভেদাভেদ নয়। এইসব বিভাজনকারীদের আপনারা চিনে রাখুন।” এর সঙ্গেই ১০০ দিনের বকেয়া টাকার কথা তুলে ধরে অভিষেক বলেন, “৭০ হাজার বয়স্কদের যদি বার্ধক্যভাতা দিতে পারি তবে ধৈর্য্য ধরুন ১০০ দিনের বঞ্চিতদের ব্যবস্থাও করব আমি।”
ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে অভিষেক বলেন, “২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি বলেছিলাম মানুষের কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আমাজ্র কেন্দ্রে প্রতিবছর উন্নয়নের কাজ বই আকারে প্রকাশ করেছি। ১৪০০ কোটি টাকা খরচ করে এই ফলতায় শুরু করেছিলাম দেশের সর্ববৃহৎ জল প্রকল্প। আমরা নতুন নতুন রাস্তা করেছি। শুধু ফলতা বিধানসভায় গত ৯ বছরে ৬০০ কোটি টাকার রাস্তার কাজ করেছি। ২১ টা কমিউনিটি কিচেন খুলে মানুষকে খাবার দিয়েছি আমরা কোভিডের সময়। কোভিড টেস্টে গোটা দেশে নজির স্থাপন করেছিল এই লোকসভা কেন্দ্র। বাস টার্মিনাস, অডিটরিয়াম, মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। আমরা জিতেছি কিন্তু আমাদের কোনও মুল্য নেই। মুল্য মানুষের। মাথা নত করতে হলে আপনাদের কাছে করব।”
শুধু তাই নয় ২০২৪ সালে ডায়মন্ড হারবার থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে একজোট হয়েছে বিরোধী শিবির। ওই কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন বাম সমর্থিত আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “ডায়মন্ড হারবারে যে দাঁড়াতে চায় দাঁড়াতে পারে। এটাই গণতন্ত্র। উত্তরপ্রদেশ গুজরাট যেখান থেকে পারেন দাঁড়ান। তবে ২০১৯ সালে ৩ লক্ষ ২১ হাজারের ব্যবধানের মধ্যে ফলতার ব্যবধান ছিল ৪৫ হাজার। এবার সেটা ৭০ হাজার করতে হবে। এই সভায় যে সংখ্যায় মানুষ এসেছেন, আর যারা রাস্তায় আছেন, ১৫ টা অঞ্চল থেকে ৫০ হাজার মানুষ রাস্তায়। এরা ভোট দিলে ওরা উড়ে যাবে। ৩.২১ লক্ষের ব্যবধানকে ৪ লক্ষে পৌঁছে দিতে হবে এবার।” একইসঙ্গে বিরোধীদের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপি চেষ্টা করেছিল এখানে দাঙ্গা লাগানোর। আমি দাঁড়িয়ে থেকে সেই দাঙ্গার আগুন নিভিয়েছিলাম। ডায়মন্ডহারবারকে অশান্ত করতে চাইলে আমার মৃতদেহের উপর থেকে করতে হবে। সিপিএম চেষ্টা করেছিল সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে সংখ্যালঘু প্রার্থী করে কীভাবে হারানো যায়। তবে বিভাজনের অঙ্কে যারা ভোটে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের নামও কেউ মনে রাখেনি।”