উত্তরাখণ্ডের টানেল বিপর্যয়ের দিকে যখন তাকিয়ে সারা বিশ্ব, ৪১ জন পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধার এখনও অধরা, তখনই উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট। ২৮ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝুঁকি প্রশমনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে চলবে এই চিন্তন শিবির। একদিকে যখন সিল্কিয়ারা টানেল থেকে ৪১ জন শ্রমিককে বের করে আনতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি এজেন্সিগুলি, তখন সেই কাজে মনোনিবেশ না করে কেন সামিটের পিছনে লোকবল ও অর্থব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ১৬ দিন ধরে ভূগর্ভের অনিশ্চয়তায় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা, অথচ সেই বিপর্যয়ের দায় এড়িয়ে রাজ্যের বিজেপি সরকার এখন ব্যস্ত আন্তর্জাতিক স্তরে দুর্যোগ মোকাবিলার সামিট আয়োজনে! বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনায় ঢালাও আয়োজনের পাশাপাশি দেরাদুনকে সাজানো হচ্ছে ডিজাস্টার কংগ্রেস এবং বিজনেস সামিটের জন্য। সিল্কিয়ারা টানেল ডিজাস্টারের পিছনে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের দায় ও নজরাদারির অভাব স্পষ্ট। উদ্ধারকাজও অসম্পূর্ণ। তারপরেও কীভাবে এই সরকারের ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগ মোকাবিলার সামিট হতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের উদ্ধারে দায়িত্বভার হাতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। অন্যদিকে প্রতিদিন নতুন সময়সীমার কথা শুনে টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে । উত্তরকাশীর এই সুড়ঙ্গ এখনও পর্যন্ত একটি অমীমাংসিত রহস্যে পরিণত হয়েছে, যার সমাধান কেউই করতে পারছে না। আমেরিকা থেকে আনা অগার মেশিন ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও দিশা দিতে পারেনি । এখনও পর্যন্ত একাধিক উদ্ধারকারী দল উদ্ধারকার্যে নামলেও শ্রমিকদের উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, আইটিবিপি, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড, ওএনজিসি, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিআরও, এনএইচএআই, তেহরি হাইড্রোপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং টানেল নির্মাণের অনেক বিশেষজ্ঞ এই মিশনে নিযুক্ত আছেন। কিন্তু সবার হাতই খালি। এইমুহূর্তে টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে দুটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। একদিকে সেনাবাহিনী ম্যানুয়াল ড্রিলিং করছে। অন্যদিকে প্ল্যান বি-এর আওতায় ভার্টিক্যাল ড্রিলিং করে শ্রমিকদের উদ্ধারের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য বিআরও প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে এবং এখন দুটি জেসিবির সাহায্যে সড়ক দিয়ে কয়েক টন ওজনের মেশিন আনা হয়েছে। এত উদ্ধার পরিকল্পনা সত্ত্বেও কেন শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না, তা নিয়ে ক্ষোভ সর্বস্তরে।
প্রসঙ্গত, সোমবার উত্তরাখণ্ডের ওই সুড়ঙ্গ পরিদর্শনে যান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলেন এবং তাদের বের করে আনার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জিতল হুগলির হকার-মায়ের কন্যা