নিষিদ্ধ ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’য়েই সাফল্য উত্তরকাশীতে, কিন্তু কী এই পদ্ধতি?

একের পর এক পদ্ধতি ব্যবহার করেও ১৬ দিন ধরে শুধুই ব্যর্থতা। অত্যাধুনিক যন্ত্র হার মানতেই আর সময় নষ্ট না করে নিষিদ্ধ পদ্ধতির উপরেই ভরসা রাখল উদ্ধারকারীরা। ‘র‍্যাট-হোল মাইনিং’য়ে (Rat-hole Mining) নামে হাতে হাতে খননের নিষিদ্ধ পদ্ধতিতেই আশার আলো দেখছেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু কী এই পদ্ধতি? আর কেনই বা এটি নিষিদ্ধ?

ইঁদুর যেভাবে মাটিতে গর্ত খোড়ে ঠিক সেই ভাবেই খনন প্রক্রিয়া চালানো হয় এই ‘র‍্যাট-হোল মাইনিং’য়ে। এই কৌশলে মাত্র একজন ব্যক্তি নামার মতো গর্ত খোঁড়া হয়। এর পর দড়ি বা বাঁশের মই ব্যবহার করে গর্তে নেমে বেলচা দিয়ে ঝুড়িতে কয়লা তোলেন শ্রমিকরা। রয়েছে সাইড কাটিং পদ্ধতি। এর জন্য পাহাড়ের ঢালে সরু সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। এবং বক্স-কাটিং পদ্ধতি, এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১০০ বর্গ মিটারের একটি আয়তাকার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেখানে উল্লম্বভাবে গর্ত খনন করা হয়। যা ২০০ ফুট অবধি গভীর হতে পারে। ঠিক ইঁদুরের গর্তের আকারে একাধিক অনুভূমিক সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। খনি শ্রমিকেরা কয়লার ভান্ডারের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে পাশ থেকে এই ধরনের গর্ত খোঁড়া হয়। সরু, ছোট সুড়ঙ্গ বেয়ে কয়লার কাছে পৌঁছে যান শ্রমিকেরা। তারপর কয়লা তুলে বাইরে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মূল ঝুঁকির কারণ হল, সুড়ঙ্গ অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়। ফলে যে কোনও মুহূর্তে ধস নেমে শ্রমিকের মৃত্যু হতে পারে। ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’-এ সাধারণত শাবল-গাঁইতির মতো ছোট জিনিস ব্যবহার করা হয়। এভাবে গর্ত খোঁড়ার প্রথম ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। তাতে দেখা গিয়েছে, চার জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে তিন জন একটি পাইপের ভিতর থেকে বেরিয়ে থাকা দড়ি টানছেন। আর চতুর্থ জন পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ের খনিগুলিতে এই বিপজ্জনক প্রক্রিয়ায় খনন চলে। মূলত নিরাপত্তার কারণেই ২০১৪ সালে এই ধরণের ‘র‍্যাট-হোল মাইনিং’য়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কারণ অবৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতির ফলে বহু শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছে। তবে এই পদ্ধতি শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন্য বিপজ্জনক নয়, পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভূমি ক্ষয়, বনভূমি ধ্বংস, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাতের মতো ঝুঁকি রয়েছে এই ধরণের খননে। তবে প্রাণঘাতী বিপজ্জনক এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই উত্তরকাশীতে সাফল্যের দোরগোড়ায় উদ্ধারকারী দল।

অন্যান্য পথ যখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিক সেই সময়ে তখন এই পদ্ধতিতেই আস্থা রাখেন উদ্ধারকারীরা। ১০-১২ মিটার বাকি থাকতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’-এর জন্য উত্তরকাশীতে সোমবার ডেকে আনা হয়েছিল খনি বিশেষজ্ঞদের। ১২ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করেছেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গর্ত খুঁড়ে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিকের কাছে পৌঁছন তাঁরা। এখন শ্রমিকের দুঃস্বপ্নের অবসানের অপেক্ষায় গোটা দেশ।

Previous articleরাজ্যে চিকিৎসকদের ওপর নজরদারি রাখতে নয়া পদক্ষেপ স্বাস্থ্য দফতরের
Next articleঅবশেষে  টানা ১৭ দিন পর উত্তরকাশীর সু.ড়ঙ্গে আ.টকে পড়া  শ্রমিকদের মুক্তির স্বাদ