প্রাইমারি টেট পরীক্ষায় NIOS ডিগ্রি বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট, স্ব.প্নভঙ্গ হবু শিক্ষকদের

রাজ্যের নানা বিদ্যালয়ে এদের পুরো ১৮ মাস ক্লাস হয়েছিল এবং এদের যথারীতি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তারপরে এদের বৈধ অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট ও সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় বাংলা তথা সারা ভারতের কয়েক কোটি বেকার যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। ২০১৭ সালে হঠাৎ কেন্দ্রীয় সরকার (NCTE ) ঘোষণা করে  যে যারা কোন প্রাইভেট বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত (পড়ুন- প্রাইমারি আপার প্রাইমারি বা উচ্চ মাধ্যমিক হতে পারে।) তারা সেই বেসরকারি বিদ্যালয়ের কোডটি ব্যবহার করে ফর্ম ফিলাপ করতে পারবে এবং ১৮ মাসের D.El.Ed সম্পন্ন করতে পারবে অনলাইনে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং) NIOS থেকে করতে হবে। বিশেষত যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পরা সম্প্রদায়ের, তারা ৪৫০০ টাকায় ফর্ম ফিলাপ করতে পারবেন। সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০১৭ সাল থেকে হিসেব অনুযায়ী প্রায় লাখ পাঁচেক হতদরিদ্র ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের এই ফাঁদে পা দেয়।

রাজ্যের নানা বিদ্যালয়ে এদের পুরো ১৮ মাস ক্লাস হয়েছিল এবং এদের যথারীতি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তারপরে এদের বৈধ অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট ও সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষায় পাশ করার পরে তারা ২০১৭ সালের প্রাইমারি টেটে অধিকাংশই বসেছিলেন এবং তারা চাকরিও করছেন। যদিও যারা চাকরি করছেন তাদের চাকরি নাও যেতে পারে। কিন্তু মাথায় বজ্রাঘাত হয়েছে সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের, যারা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বিশ্বাস করে NIOS (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং) থেকে এই ১৮ মাসের কোর্স করেছেন।

অথচ আজ তারা প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিক পরীক্ষায় বসতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র তথা বিশিষ্ট শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষা এবং এর জন্য তারা রীতিমতো পয়সা খরচা করে বইপত্র কিনেছে, কেউ আবার কোথাও কোচিং  নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তারা আর পরীক্ষায় বসতে পারবে না। কেন্দ্রের তুঘলকি সিদ্ধান্তের জন্য আজ রাজ্যের কয়েক লক্ষ হবু শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।

আসলে সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার করে গত মঙ্গলবার রাজস্থান হাইকোর্টের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছেন যে প্রকৃতপক্ষে ২৪ মাসের কোর্সের সঙ্গে এই ১৮ মাসের কোর্সের কোনও সঙ্গতি নেই এবং পুরোপুরি অর্থহীন। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছে তাই সারা ভারতবর্ষে এই রায় বহাল হয়ে থাকল।

শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতে হবে। শুধু পরীক্ষায় বসতে পারবে নাই নয়, এর আগে ২০১৭ এবং ২০২০ সালে যারা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন এমন অনেক NIOS পাস পরীক্ষার্থী আছেন এবং যারা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকও পেয়েছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে,কেন ইচ্ছা করে সারা ভারতবর্ষের এই হতদরিদ্র বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে ছেলে খেলা করলো কেন্দ্রীয় সরকার। কিছুদিন আগে ঠিক একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী B:ED ডিগ্রিধারীরা এবং প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক পরীক্ষায় বসতে পারল না এবং সেটাও কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার জন্য। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের NCTE  ২০১৭ সালে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল, যে বিএড ডিগ্রিধারীরা প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী তারা ২০১৭ এবং ২০২০ সালে পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাদের ইন্টারভিউও কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে।

এখন বিয়ের ডিগ্রিধারীদের এই প্রাথমিক নিয়োগ পদ্ধতি থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই সঙ্গে  আবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওপরে আরেকটি চাপ এল। যারা NIOS থেকে পাস তারা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।এটা স্পষ্ট যে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের ফল প্রকাশ হচ্ছে না বা নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাচ্ছে না রাজ্য সরকারের জন্য, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।কারণ, এই BED এবং D.El.Ed (nios) ডিগ্রিধারীদের জন্য নতুন ভাবে ফের ইন্টারভিউয়ের বাছাই পদ্ধতি শুরু হচ্ছে। তসেই কারণেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরী হচ্ছে।

Previous articleদৃষ্টিহীন সংখ্যালঘু প্রৌঢ়কে মারধর, ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর চেষ্টা কর্নাটকে
Next articleঐক্যশ্রী স্কলারশিপের সুবিধা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় সাফল্য, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ পড়ুয়ার