দেখা হলেই বাবার পা ছুঁতেন: মোদি-প্রণবের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনলেন কন্যা শর্মিষ্ঠা

বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডায়েরির গোপন তথ্য সমৃদ্ধ বই প্রকাশ করেছেন কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়(Sharmistha Mukherjee)। সেখান থেকেই প্রকাশ্যে এলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিক ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুত সম্পর্কের কথা। প্রণব কন্যা জানালেন, যখনই দেখা হত বাবার প্রায় পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন মোদি।

বাবাকে নিয়ে লেখা শর্মিষ্ঠার স্মৃতিচারণমূলক বই ‘ইন প্রণব, মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বার্স’ গ্রন্থে তাঁর বাবার বিস্তারিত জীবন কাহিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী না করার জন্য বাবার মধ্যে সোনিয়া গান্ধীর প্রতি কোনও বিদ্বেষ ছিল না। এমনকী মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য তাঁর মধ্যে বিরোধিতার মনোভাব ছিল না। নরেন্দ্র মোদি প্রসঙ্গে শর্মিষ্ঠা জানিয়েছেন, “বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে সব সময় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতার পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেন।” প্রধানমন্ত্রী মোদি এই কাজটি সততার সঙ্গে প্রকাশ্যেই করতেন বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা। তিনি আরও জানান, তাঁর বাবা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সময় নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে খুব ভালো করেই ওয়াকিবহাল ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদিকে তিনি বলেছিলেন, ভিন্ন মতাদর্শের হলেও তিনি তাঁর শাসনে কখনো হস্তক্ষেপ করবেন না।

প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর ডায়েরিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধী সম্পর্কে আলাদা আলাদা করে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে নানা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট। সেগুলিই তাঁর বইতে চ্যাপ্টার অনুযায়ী তুলে ধরেছেন কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যখন মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তখন বাবা লিখেছিলেন—তিনি কংগ্রেস সরকার এবং এর নীতির তীব্র সমালোচক কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি সর্বদা আমার পা ছুঁতেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায় বিশ্বাস করতেন, নির্বাচিত সরকারে হস্তক্ষেপ না করাও তার দায়িত্ব। তাই প্রথম সাক্ষাতেই মোদিকে প্রণব বলেছিলেন, আমরা ভিন্ন মতাদর্শের, কিন্তু জনগণ আপনাকে একটি ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমি সরকারে হস্তক্ষেপ করব না, এটা আপনার কাজ। তবে সাংবিধানিক কোনও বিষয়ে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমি সেখানে থাকব।

শুধু তাই নয়, মোদির প্রশংসা করে প্রণব লিখেছেন, “ইন্দিরা গান্ধীর পর নরেন্দ্র মোদিই এমন প্রধানমন্ত্রী যিনি সঠিকভাবে জনতার পালস বুঝতে পারেন।” ওই বইতে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর ডায়েরির একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন শর্মিষ্ঠা। যেখানে প্রণব লিখেছেন, “এই বছরের দীপাবলি সিয়াচেনের জওয়ান ও শ্রীনগরের বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কাটানোর সিদ্ধান্ত দিয়ে বোঝা যায়, নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক বোধ কতটা প্রখর। ইন্দিরা গান্ধী ছাড়া আর কারও এই রাজনৈতিক বোধ ছিল না।” মোদি প্রসঙ্গে প্রণবের ডায়েরিতে উল্লেখ করা রয়েছে, ১. ওঁর চিন্তায় স্বচ্ছতা রয়েছে, দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। ২. জনতার পালস খুব ভালো বুঝতে পারে। ৩. মিস্টার সবজান্তা নয়, জানার আগ্রহ রয়েছে । ৪. আরএসএস সদস্য হওয়ায় ভয়ঙ্করভাবে দেশপ্রেমী ও জাতীয়তাবাদী।

Previous articleমকাইবাড়ি চা-বাগানে দুটি পাতা-একটি কুঁড়ি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী, আপ্লুত শ্রমিকরা
Next articleকল্যাণীতে রাজ্যপালকে কালো পতাকা, ‘মহম্মদ বিন তুঘলক’ ক.টাক্ষ তৃণমূলের