Wednesday, November 5, 2025

‘ভরসা থাকুক’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

” ইক বরহামন নে কহা হ্যায়

কে ইয়ে সাল আচ্ছা হ্যায়”
” জুল্ম কি রাত বহুত জল্দ
ঢলেগি অব তো
আগ চুল্হো মে হর ইক
রোজ জ্বলে গি অব তো
ভুখ কে মারে কোই বাচ্চা
নেহি রোয়েগা
চৈন কি নিন্দ হর ইক শক্স
ইয়াহাঁ সোয়েগা … ”

আশা ও স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন । অন্তহীন আশাবাদের এই গান লিখেছেন জনাব মির্জা গালিব । এক ব্রাক্ষ্মণ বলেছেন এ বছরটা ভালো যাবে । পীড়নের দুঃসহ রাতের অবসান হবে । ঘরে ঘরে উনুন জ্বলবে , রান্না হবে । খিদের জ্বালায় কোনো শিশু কাঁদবে না । প্রতিটি মানুষ শান্তিতে ঘুমোনোর অবকাশ পাবে এবার । সবার জন্য শুভ হবে এই বছরটা । ভালো কাটবে এই বছর ।

গীত , বাদ্য ও নৃত্যের সুসম সমন্বয়ের নাম সঙ্গীত ।‌সঙ্গীতের সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই । আদিকাল থেকেই অর্থাৎ আধুনিক রূপ গ্রহণের বহু আগে থেকেই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গানবাজনা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে নি । সুরবাদ্য , তালবাদ্য এবং নানা ধরনের গান যুগে যুগেই মানুষের জীবন যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে। সুরের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সর্বজনবিদিত । এ নিয়ে চর্চারও কোনো শেষ নেই । সুর যেমন মুমূর্ষু অন্তরের অবিরাম শুশ্রূষা , ঠিক তেমনই গানের বাণী অর্থাৎ কথাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । শ্রোতার হৃদয়ে আলোড়ন তোলে অতি সহজেই । ভাঙা মনে নতুন আশার সঞ্চার করতে , দুমড়ে যাওয়া কোনঠাসা হৃদয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগাতে কথাপ্রধান গানের কোনো বিকল্প নেই । কথায় আছে , আশায় বাঁচে চাষা । হতাশ ও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা আরো জমাট অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় । মানুষ বারবার ব্যর্থ ও বিফল হওয়ার পরেও , এমনকি সর্বস্ব হারানোর পরেও ভালো কিছুর আশা ছাড়তে পারে না । স্বপ্নের যেমন মৃত্যু নেই , ঠিক তেমনই ‘ আশা ‘ যতই কুহকিনী ও ছলনাময়ী হোক না কেন , মানুষ শেষ পর্যন্ত আশাবাদী । দিন বদলের স্বপ্ন মানুষের রক্তে । তাই , যে গান মানুষকে নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠার প্রেরণা জোগায় , সেই গান শ্রোতারা বারবার শুনতে চান ।

” আঁধি নফরত কি ঢলেগি
না কহিঁ অব কে বরস
প্যার কি ফস্ল উগায়েগি
জমি অব কে বরস
হ্যায় ইয়কিন অব না কোই
শোর-শরাবা হোগা
জুল্ম হোগা না কহিঁ
খুন-খরাবা হোগা … ”

ঘৃণা , হিংসা ও বিদ্বেষের বিষঝড় এবার আর তছনছ করবে না জীবন । প্রেমের ফসলে উথলে উঠবে এবার মানবজমিন । চিৎকার , চেঁচামেচি , হাতাহাতি , লাঠালাঠি এবার আর হবে না , এই ভরসা আছে । খুন ,জখম , অত্যাচার এবার আর হবে না , এই ভরসা আছে ।
সভ্য সমাজ তো এমনই আশা করে । সাধারণ মানুষ তো চায় এমনই শান্তশীতল , প্রাণোচ্ছল জীবন । যেখানে থাকবে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পারস্পরিক নিবিড় আদান-প্রদান । একজন আরেকজনের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে , কাঁধে রাখবে ভরসা ও আশ্বাসের বিশ্বস্ত হাত ।

” ঔস অউর ধুপ কে সদমে
ন সহেগা কোই
অব মেরে দেশ মে
বেঘর ন রহেগা কোই
নয়ে ওয়াদোঁ কা জো ডালা হ্যায়, বো জাল আচ্ছা হ্যায়
রহনুমাওঁ নে কহা হ্যায়
কে ইয়ে সাল আচ্ছা হ্যায়
দিল কে খুশ রখনে কো গালিব ইয়ে খয়াল
আচ্ছা হ্যায় ” ।

মৃদু অথবা তীব্র আঘাতে বিদীর্ণ হবে না কোনো হৃদয় । এবার আমাদের দেশে কেউ থাকবে না গৃহহারা । স্বপ্নসম নতুন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে এবার । প্রজ্ঞাবান দিশারীবৃন্দ আশা করছেন , এ বছরটা ভালো যাবে । গানের অন্তিমে এসে গালিব বলছেন , মন ভালো রাখার জন্য এমন ইতিবাচক ভাবনা খুবই উপাদেয় , খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ।

‘ মিরাজ ‘ অ্যালবামের এই গানটি গেয়েছেন জগজিৎ সিং । দুর্বোধ্য শব্দচয়নের জন্য তাঁর সমকালে নিন্দিত মির্জা গালিব কত সহজ শব্দবন্ধের সমাহারে এই গানটি লিখেছেন ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় । আজ থেকে ২০০ বছর আগে তৎকালীন সমাজের সমস্ত বিধিনিষেধ ও প্রচলিত ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে স্বপ্ন দেখার কবিতা লিখে গেছেন গালিব । তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সমাজচিন্তক । ছিলেন মনুষ্যত্বের পূজারী । তাঁর ধর্ম ছিল মানবধর্ম ।‌

আশা ও প্রত্যয়ের এমন অপূর্ব সমন্বয় ছাড়া কোনো গান কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠতে পারে না । নিজের সমকাল থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন গালিব । তিনি জানতেন তাঁর লেখাগুলি সময়কে অতিক্রম করে যাবে । হয়েছেও ঠিক তাই । আমাদের আলোচ্য গানটি প্রকৃতই উত্তরাধুনিক ।

সহজ-সুন্দর শব্দচয়ণে রচিত এই গানের অন্তর্বস্তু আশা ও আস্থায় পরিপূর্ণ । দু’শো বছর আগে লেখা কবিতা নিজের সুরে ও নিজস্ব শৈলীতে যখন গাইছেন শিল্পী জগজিৎ , তখন মনে হচ্ছে গানটি যেন কয়েক মুহূর্ত আগে লেখা । স্তোত্রের মতো , মন্ত্রের মতো , তীব্র দাবদাহে পরম আকাঙ্ক্ষিত প্রসাদবারীর মতো ঝরে ঝরে পড়ছে অমোঘ ও অপরূপ শব্দধারা , নৈরাশ্যের অতল অন্ধকারের বুক চিরে যা বেরিয়ে আসছে ভোরের স্নেহস্নিগ্ধ আলোর মতো । দুর্গত , হতাশ ও বিপন্ন জনসাধারণের জন্য যে আলো বয়ে আনছে একরাশ আশা ও আশ্বাসের দৃপ্ত প্রতিশ্রুতি ।

আরও পড়ুন- মার্চের শুরুতেই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ! বাংলায় কত দফায় নির্বাচন? বড় আপডেট কমিশনের

 

 

spot_img

Related articles

বিলাসপুরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে ৮: মৃত চালকের উপরই দায় চাপানোর চেষ্টা!

বরাবর যেভাবে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ট্রেনের চালকের উপর দায় চাপিয়ে অব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর অভাবকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে...

ঠাকুরবাড়িতে প্রকাশ্যে ঘরোয়া কোন্দল! শান্তনুর সঙ্গ ছাড়লেন দাদা সুব্রত 

মতুয়া সংগঠন ঘিরে দীর্ঘদিনের অন্দরের টানাপোড়েন এবার প্রকাশ্যে। পারিবারিক অশান্তি এবং সংগঠনের ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে দেখা দিল...

বিরোধীদের কুৎসায় কালি: রাজ্যে SIR প্রক্রিয়ার প্রথমদিন শান্তিপূর্ণ, তথ্য পেশ কমিশনের

নির্বাচন কমিশনের তরফে বিএলও। রাজনৈতিক দলের তরফে বিএলএ। রাজ্যের নাগরিক ভোটার। এই তিনের সমন্বয়ে মঙ্গলবার থেকে গোটা রাজ্যে...

খুব তাড়াতাড়ি আসবেন কলকাতায়, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তার উত্তরে জানান শাহরুখ

রবিবার শাহরুখ খানের ৬০তম জন্মদিন ছিল। এদিন শাহরুখকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শুভেচ্ছার এবার উত্তর...