আজ কী ঘটেছিল?

নবনীতা দেবসেন (১৯৩৮-২০১৯) এদিন জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্রোহের সরবতাই বিপ্লবের আগমনি বার্তা বয়ে আনে। অথচ সেই সরবতা উচ্চকিত না হয়েও যে বৈপ্লবিক চেতনার বিস্তার করা যায়, তা লেখিকা নবনীতা দেবসেন দেখিয়ে দিয়েছেন। নারীবাদী লেখিকা হিসাবে কখনওই তিনি সরব হয়ে ওঠেননি। অথচ, তার অবকাশ ছিল। তাঁর পরিবারের মধ্যেই সে-রসদ মজুত ছিল। মা রাধারানি দেবী ছিলেন রক্ষণশীল পুরুষশাসিত সমাজের প্রগতিশীল নারীকণ্ঠের উজ্জ্বল প্রতিভূ। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে আয়োজিত বিতর্কসভায় ‘ডিভোর্স উচিত কি না’ বিষয়ে অনুরূপা দেবীর বিপক্ষ বক্তব্যকে খণ্ডন করে তাঁর সপক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন তেরো বছর বয়সে বাল্যবিধবা রাধারানি দেবী। শরৎচন্দ্রদের আপত্তিকে অতিক্রম করে নারী হিসাবে ‘রবিবাসর’-এর সাহিত্যের আড্ডায় তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, নারীকণ্ঠেও তাঁর আত্মমর্যাদাবোধকে দিয়েছেন বনেদি আভিজাত্য। সেই রাধারানি দেবীর কন্যা নবনীতা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি) থেকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনীতার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা ও গবেষণার ব্যাপ্তিই শুধু নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুদীর্ঘকাল (১৯৭৫-২০০২) অধ্যাপনার পাশাপাশি আমেরিকার কলোরাডো কলেজে মেটাগ প্রফেসর থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাধাকৃষ্ণন স্মারক লেকচারার সর্বত্র বিদ্যাচর্চায় স্বমহিমার বিস্তারিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েই আত্মতৃপ্ত হননি, স্বভাবসুলভ ভাবেই নিজেকে উচ্চশিক্ষার সোপানে শামিল করেছিলেন। হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া, সংস্কৃত, জার্মান, হিব্রু এবং ইংরেজি প্রভৃতি ভাষায় তাঁর বিদুষী প্রকৃতির অনন্যতা আপনাতেই সবুজ সজীবতা লাভ করে। ব্যক্তিত্বের বহুমুখী বিস্তারে নবনীতা রাধারানিকেও ছাপিয়ে যান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অবিসংবাদিত নারীব্যক্তিত্বের উৎকর্ষমুখর প্রকৃতি পুরস্কার-সম্মাননায় (পদ্মশ্রী, সাহিত্য অকাদেমি, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, দেশিকোত্তম প্রভৃতি) স্বীকৃতি লাভ করে।

১৯২৬ শক্তি সামন্ত (১৯২৬-২০০৯) এদিন বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে, ‘অমানুষ’ সেজে উত্তমকুমার প্রমাণ করেছিলেন—আসল ‘মাটির হাঁড়ে’ সুস্বাদু চা গোটা দেশে সুপারহিট হতে পারে। তাঁর হাত ধরেই হিন্দি সিনে পাড়ায় পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছেন শর্মিলা ঠাকুর, শাম্মী কাপুর, রাজেশ খান্নারা। নতুন ইমেজ, নতুন ধারা, নতুন কাহিনি দিয়ে মুম্বই সিনেজগতের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলিউডে রাজত্ব করা বাঙালি পরিচালকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। বাপি লাহিড়ীকে মুম্বইয়ে প্রতিষ্ঠার পিছনেও রয়েছে তাঁর অনেক অবদান। ‘চায়না টাউন’, ‘হাওড়া ব্রিজ’, ‘কাশ্মীর কি কলি’, ‘কাটি পাতাং’, ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’, ‘আরাধনা’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘অন্যায় অবিচার’-এর মতো একাধারে ব্যবসা-সফল ও আলোচিত ছবির জনক শক্তি সামন্ত ছিলেন বলিউডের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি শক্তি ফিল্মস-এর প্রতিষ্ঠাতাও বটে।

১৮৫৯ ভূপেন্দ্রনাথ বসু (১৮৫৯-১৯২৪) এদিন খানাকুলে রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হন। ১৮৮৩ সালে অ্যাটর্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। বি এন বসু অ্যান্ড কোম্পানি নামে ল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন, যার অফিস কলকাতার ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটে এখনও ‘টেম্পল চেম্বার’ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। মোহনবাগান ক্লাবের প্রথম সভাপতি।

১৮৯৪ রমানাথ বিশ্বাস (১৮৯৪-১৯৫৫) এদিন জন্মগ্রহণ করেন। সাইকেল নিয়ে বিশ্বভ্রমণ! ৯০ বছর আগে যে বাঙালির স্পর্ধায় অবাক হয়েছিল দুনিয়া তিনিই রমানাথ বিশ্বাস। ১৯৩১ সাল। সিঙ্গাপুর থেকে প্যাডেল চলা শুরু হল। দুটো চাদর, চটি, আর সাইকেল মেরামতির বাক্স সম্বল করে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই তিনি ঘুরলেন। তবে এখানেই থেমে রইল না যাত্রা। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৬ সালে আরও দু’বার সাইকেল বের হয় রাস্তায়। আফগানিস্তান, সিরিয়া, লেবানন হয়ে প্রায় গোটা ইউরোপ, এবং শেষমেশ আফ্রিকা আর আমেরিকা— রামনাথের কাছে হার মেনেছিল সমস্ত বাধা-বিপর্যয়।

১৯৫৯ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৬৭-১৯৫৯) এদিন প্রয়াত হন। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত, শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক ও ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ নামক অভিধানের প্রণেতা। ৪০ বছরের সাধনায় তিনি ওই অভিধান প্রণয়ন করেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘হরিজন’ পত্রিকায় হরিচরণকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিলবার্ট মারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।