দেশের রাজনীতির ইতিহাসে কোনও রাজনৈতিক নেতা হেফাজতে থাকাকালীন আইনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন, এমন নজির মনে করতে পারছেন না কেউই। সোমবার সেই ছবিই দেখা গেল ঝাড়খণ্ড বিধানসভায়। জমি সংক্রান্ত মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন হেমন্ত। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সোমবারের আস্থাভোটে অংশ নেন তিনি। বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কড়া সুরে সমালোচনা করলেন বিজেপি সরকারের। জানালেন, আমার গ্রেফতারি গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়। এবং এই গ্রেফতারির নেপথ্যে রাজভবনেরও হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণের ভাষণ দিয়ে ঝাড়খণ্ডে শুরু হয় বিধানসভার অধিবেশন। এরপর বর্তমানে সরকারের দায়িত্ব সামলানো নতুন মুখ্যমন্ত্রী চম্পই সোরেনের পর বক্তব্য রাখেন হেমন্ত সোরেন। তিনি বলেন, “৩১ জানুয়ারি রাতে দেশে প্রথম বার এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হল। আমার গ্রেফতারি গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়।” এরপরই তাঁর সংযোজন, “আমি বিশ্বাস করি রাজভবন এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।” সরাসরি নাম না নিলেও এই গ্রেফতারিতে রাজ্যপালের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বিজেপিকেও তোপ দাগেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যদি তাদের সাহস থাকে, তবে যে জমিতে আমার নাম নথিভুক্ত হয়েছে, তার নথি দেখাক। যদি আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।” আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে বিজেপির এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, “এরা ভাবে, আমাকে জেলে ভরে উদ্দেশ্য সফল হবে। এটা ঝাড়খণ্ড। দেশের এমন রাজ্য, যার প্রতি কোণে আদিবাসী, দলিতেরা আছেন। রক্তের বিনিময়ে তাঁরা লড়াই করেছেন। আদিবাসীদের জোর এত কম নয়। এদের কাছে আদিবাসীদের চোখের জলের কোনও দাম নেই।”

জমি জালিয়াতি মামলায় হেমন্তকে গ্রেফতার করেছে ইডি। বুধবার দুপুর থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা তাঁর রাঁচীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। রাতে গ্রেফতার হন হেমন্ত। তার আগেই রাজভবনে গিয়ে তিনি ইস্তফা দেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে। গত শুক্রবার রাঁচীর বিশেষ অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) আদালত জেএমএম নেতাকে পাঁচ দিনের ইডি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। শনিবার হেমন্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁকে সোমবারের আস্থাভোটে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয় আদালত। তাঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে এ দিন বিধানসভায় যান হেমন্ত। সেখানেই তোপ দাগেন বিজেপি ও রাজভবনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।
