ঐতিহাসিক বাজেট! আর্থিক সঙ্কটেও দেখিয়েছি কীভাবে এগোতে হয়: মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর

কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও বিকল্প পথ কীভাবে তৈরি করতে হয় তা দেখিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ঐতিহাসিক বাজেটে রাজ্যে উন্নয়নে জোয়ার এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার, বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের (Chandrima Bhattacharya)। সেখানে একদিনে যেমন রাজ্যের প্রকল্পে ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, একই সঙ্গে নতুন স্কিম চালু করা হয়েছে। বরাদ্দ বেড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

মহিলা ক্ষমতায়নে বরাবরই জোর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজ্যের মহিলাদের হাত খরচের জন্য আগেই চালু করেছেন লক্ষ্মী ভাণ্ডার। কিন্তু সেখানে সাধারণ মহিলারা এতদিন পেতেন ৫০০ টাকা। এই বাজেটে সেটা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাজেটের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, তিনি ভাগাভাগি পছন্দ করেন না। সেই কারণে তিনি সেটা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করে দেন।

কেন্দ্রের হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বারবার জানিয়েছেন অর্থ সংস্থান হলেই তিনি সাধ্য মতো চেষ্টা করবেন। কথা রাখলেন তিনি। এবার বাজেটেও ৪ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা বাড়িয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মাস্টারস্ট্রোক! লক্ষ্মীবার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এ লক্ষ্মীলাভ

দেশের মধ্যে সবচেয়ে বঞ্চিত বাংলা। কেন্দ্র বেশিরভাগ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। পরিস্থিততে বাজেটে সামগ্রিক উন্নয়নের দিশা দেখানো হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের বকেয়া বাবদ ৩৭০০ কোটি বরাদ্দ করে রাজ্য। ২১ ফেব্রুয়ারি মাসে ২১ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজের টাকা হিসাবে ওই অর্থ দেওয়া হবে। মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন প্রকল্প ‘সমুদ্র সাথী’ চালু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্ষায় যে দুমাস মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যেতে পারেন না, সেই দুমাস তাঁদের ৫০০০টাকা করে দেওয়া হবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই বাজেটেও সুখবর শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এবার থেকে ক্লাস টুয়েলভের বদলে ক্লাস ইলেভেনই ট্যাব কেনার টাকা পাবে পড়ুয়ারা।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের বঞ্চনার জেরে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই রাজ্য কর পরিকাঠামো অপরিবর্তিত রেখেছেন তিনি। কোনও কর বৃদ্ধি করা হয়নি। উল্টে আলুচাষিদের সহায়তা, শস্য বিমার প্রিমিয়াম সরকার সম্পূর্ণ ভাবে বহন করবে রাজ্য সরকার। এর জন্য বাজেটে অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

কাজ করিয়েও বাংলাকে ১০০দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। এই নিয়ে এদিন ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বাংলার উন্নয়নকে স্তব্ধ করতেই এই ষড়যন্ত্র। বঞ্চিতদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, ১০০ দিনের কাজের পাল্টা এবার রাজ্যবাসীদের জন্য ৫০দিনের কাজের প্রকল্প চালু করছে রাজ্য। রাজ্য বাজেটে এই ঘোষণা করা হয়। নতুন এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কর্মশ্রী’। আগামী মে মাস থেকে কার্যকর হবে নতুন এই প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত আর্থিক সংকটের মধ্যেও দেশ যখন ডুবে আছে ঋণের বোঝায়, দেশে যেখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ওষুধে কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতার ফলে ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছে। সেখানে বাংলার মা–মাটি–মানুষের সরকার তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়। কী করে কাজ করতে হয়। কী করে মানুষের কথা ভাবতে হয়। চিন্তাশক্তি থাকতে হয়, ভাবতে হয়। শুধু অকথা, কুকথা, মিথ্যে বলে, কুৎসা করে, অপপ্রচার করে আর ভাগাভাগির রাজনীতি করে উন্নয়ন হয় না।”

এছাড়া রাস্তা থেকে শুরু করে সেতু নির্মাণ, পদকজয়ী খেলোয়াড়দের চাকরি- সব কিছুর সংস্থান এই বাজেটে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আর্থিক সঙ্কটেও আমরা দেখিয়েছি কীভাবে এগোতে হয়।

Previous articleজেল থেকেই ভোট দিলেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান, পারলেন না বুশরা বিবি
Next articleদেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, মায়ানমার সীমান্তে অবাধ যাতায়াত বন্ধের ঘোষণা শাহের