Thursday, August 28, 2025
উৎপল সিনহা

‘ দুঃখকে স্বীকার করো না ,—
সর্বনাশ হয়ে যাবে ।
দুঃখ করো না , বাঁচো ,
প্রাণ ভ’রে বাঁচো ।
বাঁচার আনন্দে বাঁচো ।
বাঁচো , বাঁচো এবং বাঁচো ।

যদি মরতেই হয়
আনন্দের হাত ধ’রে মরো ।
বলো , দুঃখ নয় , আনন্দের মধ্যেই আমার জন্ম ,
আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্যু ,
আমার অবসান ।
( কবিতা: দুঃখ করো না বাঁচো
কবি : নির্মলেন্দু গুণ )

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছেন , দুঃখগুলি দশজনের সঙ্গে ভাগ করে নিলে দুঃখ কমে যায় এবং আনন্দ ভাগ করে নিলে আনন্দ বেড়ে যায় । কে না জানে , হতাশার ফল গভীরতর হতাশা । একথাও ঠিক যে , সবসময় ইতিবাচক থাকা সম্ভব নয় , কিন্তু ইতিবাচক না থাকতে পারলে নিরাশা এসে মগজে বাসা বাঁধে । তাহলে উপায় ?

উপায় ‘ আনন্দ হরমোন ‘ ।
‘ ফিল গুড ‘ হরমোন ।
ভয়াবহ চাপের এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই ।
কোথায় পাওয়া যায় এটা ?

পাওয়া যায় অনেক জায়গাতেই । শুধু খুঁজে নেওয়ার আগ্রহ চাই । আমাদের মানব শরীরেই রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন একটি হরমোন , যেটির নাম ডোপামিন । এটি হলো মস্তিষ্কে তৈরি একটি নিউরোট্রান্সমিটার , যা সারা শরীর জুড়ে বহুসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আনন্দের অনুভূতি জাগাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে ডোপামিন , মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া রাসায়নিক অনুভূতি ছাড়াও আরও অনেক কাজ করে ডোপামিন । আনন্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোনো কাজে আনন্দ পেলে সেই কাজ পুনরায় করার অনুপ্রেরণা জোগায় এই হরমোন । মানব শরীরের অনেকগুলো হরমোনের মধ্যে ৪ টি মৌলিক হরমোন হলো ডোপামিন , সেরোটোনিন , অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন । এগুলোকে বলা হয় ‘ হ্যাপি ‘ হরমোন । শরীরে এগুলোর মাত্রা যথাযথ থাকলে মানুষ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকে । আর কমে গেলে এর উল্টোটা ঘটে , মন খারাপ হয় , বিমর্ষতার অন্ধকার গ্রাস করে মনকে । খাবারদাবারের পাশাপাশি কিছু অভ্যাস আমাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় । একাগ্রতা , নিবিষ্টতা , স্মৃতি ,
মনঃসংযোগ ও কর্মক্ষমতা বাড়ায় ডোপামিন । এটি উৎপন্ন হয় শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে । শরীরে এই হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে অ্যামিনো অ্যাসিড। মাছ এবং হাঁস ও মুরগীর মাংসে অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকে । এগুলো উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার । এছাড়াও দুধ , পনির , দই ইত্যাদি নিরামিষাশীদের জন্য অ্যামিনো অ্যাসিডের বড়ো উৎস । স্ট্রবেরি , আপেল এবং অন্যান্য ফলমূল ডোপামিনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে । সবুজ শাকসবজি যেমন লেটুস , পালং শাক , বাঁধাকপি , ফুলকপি ও ব্রকলির মতো সবজি ডোপামিন বুস্টার হিসেবে কাজ করে । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য ও পানীয় এক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয় । গ্রিন টি খুব গুরুত্বপূর্ণ । ডিম তো আছেই , কারণ ডিম সুপারফুড । ছোলা ও বাদাম খুব উপকারী। এছাড়াও মাত্রা বুঝে কফি পান করলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর ও মন তাজা ও চনমনে হয়ে উঠতে পারে ।
ডোপামিন বৃদ্ধির ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় । কিন্তু এইসব ওষুধ ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া খাওয়া উচিত নয় । অ্যালকোহল , নিকোটিন , মাদকদ্রব্য এবং শরীরে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা আনে , এমন ওষুধ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় ।‌ মাত্রাতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের পক্ষে ভালো নয় । ডোপামিনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীতে কেউ হারতে হারতে জেতে , কারোর আবার জেতাটাই অভ্যাস , কেউ আবার হেরেও দমে না গিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় । এসবই মানব শরীরে ডোপামিন হরমোনের খেলা । হাসি , কান্না , রাগ , বিরক্তি , মান-অভিমান , উৎকণ্ঠা , উদ্বেগ , যৌনতা , ভালবাসা ও বিদ্বেষ ইত্যাদি ব্যক্তিগত অভিব্যক্তিগুলোর সমস্তটাই নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন । চোখে দেখা যায় না বলে আমজনতার এই হরমোন নিয়ে মাথাব্যথা নেই । তাই অধিকাংশ মানুষ বুঝতেই পারেন না তাঁদের আচার , আচরণ ও বিভিন্ন রকম অভিব্যক্তির আড়ালে রয়েছে ডোপামিনের খেলা । এই বিশেষ হরমোনটি আমাদের মনে যে উদ্দীপনা তৈরি করে তাক ‘ reward effect ‘ বলা হয় ।

এবার শরীরের বাইরে আসা যাক । ধরা যাক , মনখারাপের এক সন্ধ্যায় হঠাৎ একটা গান শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল । মনের ভার তাৎক্ষণিকভাবে নেমে গেল , চাপ কেটে গিয়ে মেজাজ হয়ে উঠলো ফুরফুরে । এটাও তো ডোপামিনের কাজই করলো , হ্যাঁ , অবশ্যই শরীরের বাইরে থেকে , বিমূর্তরূপে । একটা কবিতা কিংবা একটা ছোট গল্প কয়েক মুহূর্তের মধ্যে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে আলো জ্বেলে দিতে পারে ।

আলি আকবর খানের সরোদ , নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতার , বিসমিল্লার শানাই , জাকিরের তবলা কিংবা কিশোর কুমারের গান কি আসলে ডোপামিনের কাজই করে না ? নাচ , গান , গল্প , কবিতা , উপন্যাস , নাটক , সিনেমা এবং খেলাধুলা শরীরের বাইরে থেকে ডোপামিনের কাজই তো করে । সঙ্গে যোগ করতে হবে মহাপুরুষদের বাণী । তবে হ্যাঁ , পারিবারিক ভালবাসার সম্পর্কগুলোর কথা উল্লেখ করার পরেও বলতেই হয় যে , সেরার সেরা ‘ ডোপামিন ‘ হলো একজন ভালো বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানো ।

আরও পড়ুন- দল থেকে সাসপেন্ডের পর এবার সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রে.ফতার উত্তম সর্দার

Related articles

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...

সুখবর! পুজোর আগে পার্ট টাইম কর্মীদের বেতন বাড়াল রাজ্য 

পুজোর আগে রাজ্যের আংশিক সময়ের কর্মীদের জন্য বড় সুখবর দিল নবান্ন। বিভিন্ন দফতর ও সরকার অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত...
Exit mobile version