সন্দেশখালি কাণ্ড: সুকান্তকে সুপ্রিম ধাক্কা, সংসদীয় কমিটির নোটিশে স্থগিতাদেশ শীর্ষ আদালতের

সন্দেশখালি মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটির নোটিশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল। সাংসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে, স্বাধিকার রক্ষা কমিটি রাজ্যের মুখ্য সচিব, ডিজিপি, ডিএম এসপি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার থানা প্রধানকে সমন জারি করেছিল এবং তাদের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। এবং মামলার শুনানির পর শীর্ষ আদালতে বড়সড় স্বস্তি রাজ্যের।

বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটির নোটিশকে চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ করে সোমবার সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্যের মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা। লোকসভার সচিবালয়ের ওই নোটিশে আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। ৪ সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি। সোমবারই সংসদীয় কমিটির তলবের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মুখ্যসচিব। এদিন বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। পাশাপাশি আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপরেই এই হাজিরা নোটিশে স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত। এদিনের শুনানিতে, রাজ্যের মুখ্যসচিবের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “সন্দেশখালির ঘটনা একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। সেখানে একজন সাংসদের অধিকারভঙ্গের কোথাও কোনও প্রশ্ন নেই। ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা হচ্ছিল। তাতেই বাধা দিয়েছে পুলিশ। তিনি আরও সওয়াল করেন, “ অভিযোগ করা হচ্ছে, সুকান্ত মজুমদারকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার প্রমাণ ভিডিয়োতে নেই। বরং ভিডিয়োতে যা প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে সুকান্ত মজুমদারই দলের এক কর্মী তাঁকে টেনে নামান। তাঁর ধাক্কাতেই কার্যত সুকান্ত মজুমদার পড়ে গিয়েছিলেন।” পাশাপাশি এদিন আইনজীবী কপিল সিব্বল আরও জানান, “যেদিন ঘটনা ঘটেছিল, ঘটনাস্থলে মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এসপি কেউই ছিলেন না। তাঁদের কেন এক্ষেত্রে তলব করা হয়েছে। এই বিষয়টি কোনওভাবেই প্রিভিলেজের আওতায় পড়ে না।” অন্যদিকে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ভিও সওয়াল করেন, “যে যে অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাধিকার ভঙ্গের ধারা যুক্ত হয়, তার কোনওটিই এক্ষেত্রে হয়নি। অন্যদিকে, লোকসভার অধ্যক্ষের তরফ থেকে সওয়াল করা হয়, কোনও সাংসদ যখন কোনও অভিযোগ করেন, তখন সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য প্রত্যেকের একটা মৌখিক-অ্যাভিডেন্স নেওয়া হয়”।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করে সন্দেশখালিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল বিজেপি প্রতিনিধি দল। কিন্তু প্রশাসনের তরফে টাকির হোটেলে আটকে দেওয়া হয় রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। এরপরই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হোটেলের অন্য গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর উঠে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি রাজ্য সভাপতি। গাড়িও এগোতে পিছতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। প্রবল ঝাঁকুনিতে মাটিতে পড়ে যান সুকান্ত। যদিও বিজেপির দাবি, পুলিশই ফেলে দেয় তাঁকে। সংজ্ঞা হারান সুকান্ত। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে দিন তিনেক ভর্তিও ছিলেন তিনি। বিষয়টি লোকসভার অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান সুকান্ত মজুমদার। তার প্রেক্ষিতেই মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষ, বসিরহাটের পুলিশ সুপার হাসান মেহেদি রহমান-সহ পাঁচজনকে তলব করে লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি। সোমবার সকালে কমিটির সদস্যদের মুখোমুখি হতে বলা হয়েছিল। তার আগেই সকালে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মুখ্যসচিব। শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভি। সুপ্রিম কোর্টে সিব্বল দাবি করেন, সুকান্ত মজুমদার সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। এরপরই স্বাধিকার রক্ষা কমিটির নোটিশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত। আদলতের তরফে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানি চার সপ্তাহ পর।

 

 

 

 

Previous articleইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বরেকর্ড যশস্বীর
Next articleদলের সঙ্গে রাঁচি যাচ্ছেন না বুমরাহ, চতুর্থ টেস্টে কি খেলবেন তিনি?