‘আস্থা অর্জন’ পুলিশের, সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরাতে গ্রামে ডিজি রাজীব কুমার

বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে বেরিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। একেবারে সেই সব গ্রামে ঢুকে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন ডিজি রাজীব কুমার। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় আইন নিজের হাতে না তুলে নেওয়ার জন্য।

কড়া হাতে সন্দেশখালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দিনভর বিভিন্ন এলাকায় আস্থা অর্জনের (confidence building) কাজ করেন ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি সুপ্রতীম সরকারের। নতুন করে কয়েকটি জায়গায় অশান্তি ছড়ানোর পর বৃহস্পতিবারই জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তারপরেও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে বেরিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। একেবারে সেই সব গ্রামে ঢুকে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন ডিজি রাজীব কুমার। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় আইন নিজের হাতে না তুলে নেওয়ার জন্য। এমনকি এডিজি বিক্ষোভস্থলে দাঁড়িয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্প খোলার ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরা। রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের এই পদক্ষেপে গ্রামবাসীরা হাত জোড় করে জানান পুলিশের ওপরই আস্থা রয়েছে তাঁদের।

বৃহস্পতিবার থেকে সন্দেশখালিতে শুরু হয়েছে বঞ্চিতদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। তারপরেও বেড়মজুর এলাকায় আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয় বেড়মজুর গ্রাম। সেখানেই পৌঁছান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার। গ্রামবাসীদের অনুরোধ করেন প্রত্যেকের অভিযোগ নথিবদ্ধ করতে। তাতেও বাসিন্দারা আশ্বস্ত না হলে সেখান থেকেই জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীকে ফোন করেন তিনি। তাঁকে নির্দেশ দেন তখুনি গ্রামে একটি ক্যাম্প খুলে অভিযোগ জমা নিতে। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের বোঝান যে সব এলাকায় মানুষ জমি ফেরৎ পেয়েছেন তাঁরা আনন্দে চোখের জল ফেলছেন। গ্রামে শান্তি যত তাড়াতাড়ি আসবে, গ্রামবাসীদের দাবি তত তাড়াতাড়ি পূরণ হওয়া সম্ভব হবে।

এরপরই স্থানীয় তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির বাড়িতে ভাঙচুর চালান কিছু গ্রামবাসী। সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন। অজিত মাইতিকে এডিজি হুঁশিয়ারি দেন তাঁর নামেও অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনে তাঁকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তাঁকে দেখেই সাধারণ মানুষ ক্ষোভের কথা জানাতে এগিয়ে আসেন।

একদিকে ডিজি তাঁদের আশ্বস্ত করেন এই বলে, ‘কারো অভিযোগ থাকলে আমরা দেখব। সকলের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার দ্বায়িত্ব আমাদের। পুলিশ সব অভিযোগের তদন্ত করছে। মহিলাদের অভিযোগ নিয়ে আগে তদন্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাকি অভিযোগেরও তদন্ত চলছে।’ সেই সঙ্গে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় পুলিশকর্মীদের স্নেহের সঙ্গে নির্দেশ দেন অভিযোগকারীদের সঙ্গে বসে তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর নথিভুক্ত করতে।

তবে অশান্তি ছড়ালে কাউকে ছাড়া হবে না, একথাও স্পষ্ট করে দেন রাজীব কুমার। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘সকলের দ্বায়িত্ব আইনের শাসন (rule of law) প্রতিষ্ঠা করা। অনেকেই প্ররোচনা দিচ্ছে, কৃত্রিম (artificial) আগুন ধরাচ্ছেন। সেখানে আধিকারিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে গ্রামের মানুষের অভিযোগের তদন্ত দেরি হয়ে যাচ্ছে। যারা আইন হাতে তুলে নেবে তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তাদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হবে।’

বেড়মজুর গ্রামে বিক্ষুদ্ধ মানুষ ডিজিপি-র কথা শুনে তাঁকে ধন্যবাদ জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা বজায় রাখার অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি কাছারিবাড়ি, রামপুর এলাকাতেও ঘোরেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা।