সময়ের আগেই নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ! কমিশনের তথ্যে বিজেপিকে ‘আড়ালের চেষ্টা’?

শেষমেশ আশঙ্কাই সত্যি হল। মামলাকারীদের অভিযোগই সঠিক প্রমাণিত হল শীর্ষ আদালতে (Supreme Court of India)। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond) সংক্রান্ত কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দাতা সংস্থাগুলির অধিকাংশের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি, সিবিআই অথবা আয়কর দফতরের তল্লাশি ও তদন্ত চলেছে। অন্যদিকে একাধিক দাতা সংস্থার বিরিদ্ধে আবার বিপুল পরিমাণে সরকারি বরাত পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। অর্থাৎ একদিকে যেমন এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে টাকা আদায়ের চাপ এবং অন্যদিকে আর্থিক অনুদানের বিনিময়ে সরকারি সুবিধা; দুই ধরনের প্রবণতাই স্পষ্ট হল নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশের পর। সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশের পর নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সকল তথ্য তুলে দিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (SBI)। বৃহস্পতিবারই সেই তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে কমিশন। আর তারপরই সামনে এসেছে রাজনৈতিক অনুদান দেওয়ার জন্য নির্বাচনী বন্ড কেনা সংস্থাগুলির নাম। সেখানে দেখা গিয়েছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সবথেকে বেশি রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছে ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা। যার সুযোগসুবিধা পেয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্থাটি ১৩৬৮ কোটি টাকার রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছে বলে খবর। এই সংস্থার মালিক সান্তিয়াগো মার্টিন, যিনি ‘লটারি কিং’ (Lottery King) নামে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কোন সংস্থা থেকে কোন দলে চাঁদা গিয়েছে, তার আলাদা করে উল্লেখ নেই এই তথ্যে। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) আগে নিজেদের দোষ আড়াল করতেই এমন চাল কেন্দ্রের মোদি সরকারের। যেখানে সবার আগে রাজনৈতিক অনুদান নেওয়ার দৌড়ে নাম উঠে এসেছিল গেরুয়া শিবিরের (BJP)। সেখানে তাঁদের আয়ের হিসাব ঢাকতেই তড়িঘড়ি স্টেট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বলে খবর।

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া এসবিআই-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ওই সংস্থা ৯৬৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও আশ্চর্যজনকভাবে মহারাষ্ট্রের কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড ৪১০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে এসবিআই। এই সংস্থার তিন অধিকর্তার এক জন রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার অধিকর্তা পদে রয়েছেন বলে খবর। পাশাপাশি হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড ৩৯৫ কোটি টাকার বন্ড ও মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী অনিল আগরওয়ালের বেদান্ত লিমিটেড আবার ৩৮৬ কোটি টাকার বন্ড অনুদান হিসাবে দিয়েছে। অন্যদিকে এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি সংস্থা ২২৪.৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে বলে কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তালিকায় দেখা গিয়েছে।

তবে এসবিআই সময় চাইলেও সেই আর্জি খারিজ করে একদিনের মধ্যেই নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিতে তাদের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মতোই এসবিআই মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে সেই তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হত কমিশনকে। তবে তার আগেই সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়। কত তারিখে, কোন সংস্থা, কোন দল, কত টাকার বন্ড কিনেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। তবে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকা করে নির্বাচনী বন্ড কেনার উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। মোট দু’টি তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। একটিতে কোন সংস্থা, কবে, কত টাকার বন্ড কিনেছে, তার হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। অন্যটিতে রাজনৈতিক দলগুলি কখন, কত টাকার বন্ড ভাঙিয়েছে, সেই হিসেব রয়েছে। দেশের কোন কোন সংস্থা, নির্বাচন বন্ডের মাধ্যমে কত টাকা করে চাঁদা দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলিকে, তার তালিকাও আছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা থেকে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। সূত্রের খবর বন্ড কেনার নিরিখে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দফতর-এর আধিকারিকেরা।

Previous articleনাম ঘোষণা হতেই লড়াইয়ের ময়দানে সিপিএমের নতুন প্রজন্মের ত্রয়ী
Next articleজুন মালিয়ার সমর্থনে শনিবার বেলদায় “জনগর্জন সভা অভিষেকের