নির্বাচনী বন্ড ব্যবহারে সুপ্রিম ‘নিষেধাজ্ঞা’! দলের মুখ বাঁচাতে ‘আজব দাবি’ শাহের, বিরোধীদের হুঁশিয়ারি হিমন্তের

তবে এদিন শুধু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই নয় নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে রীতিমতো বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মাও।

নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond) অসাংবিধানিক! শুক্রবারই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে (SBI) সেকথা সাফ জানিয়ে নির্বাচনী বন্ড ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। আর তারপরই আসল সত্য সামনে আসায় মুখ পুড়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকারের (Modi Govt)। এরপরই লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দিনই সকাল সকাল ময়দানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) ও অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himant Biswa Sharma)। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ না করলেও শীর্ষ আদালতের রায়ে বিজেপির যে হালে পানি না পাওয়ার হাল হয়েছে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট। এদিন রাখঢাক না রেখেই শাহ বলে দিলেন, কালো টাকার জোগান নাকি বন্ধ হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতির জেরে। আর সেকারণেই এই রায়কে সম্পূর্ণ বাতিল না করে সংশোধন করা যেত বলেই মত তাঁর। তবে শাহ মুখে যাই বলুন বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি টাকা পকেটে পুরেছে বিজেপি। আগে এসবিআইয়ের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পেশিশক্তি দেখালেও শীর্ষ আদালতের রায় যে লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেকারণেই সিএএ-নিয়ে মনগড়া মিথ্যা বলার পর এবার নির্বাচনী বন্ডের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বোঝাতে একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই ইস্যুতে অমিত শাহ বলেন, “ভারতীয় রাজনীতি থেকে কালো টাকা হঠানোর লক্ষ্যে আনা হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সকলকে মানতে হবে। তাঁদের রায়কে আমি সম্মান করি। কিন্তু আমার মনে হয় নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল না করে সংশোধন করা উচিত ছিল।” পাশাপাশি এই ইস্যুতে বিরোধীদের তোলা একাধিক প্রশ্নের উত্তরে চাপে পড়ে পাল্টা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, “এর আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা চাঁদা নিতেন। ১১০০ চাঁদার মধ্যে ১০০ টাকা তাঁরা দলের নামে জমা করতেন বাকি ১০০০ টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকাতেন। বছরের পর বছর ধরে এই পদ্ধতি চালিয়ে এসেছে কংগ্রেস দল। কিন্তু মুখে বললে কী হবে প্রমাণ কিন্তু বলছে অন্য কথা যেখানে দেখা যাচ্ছে বন্ডের দোহাই দিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকেছে বিজেপির। ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’ কেন্দ্রের মোদি সরকারকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে। পাশাপাশি এসিন বিরোধীদের তোপ দেগে শাহ বলেন, ‘যখন আসল হিসেব সামনে আসবে বিরোধীরা মুখ লুকোনোর জায়গা পাবে না।’ আর শাহের এমন মন্তব্যের পর প্রকাশ্যে হাসতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা।

তবে এখানেই শেষ নয় এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আরও বলেন, “অনেকের ধারণা, বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে বলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। আমি একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিই, নির্বাচনী বন্ডে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে বিজেপি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। তবে এদিন শুধু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই নয় নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে রীতিমতো বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মাও। তিনি এদিন সাফ জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি নির্বাচন বন্ড নিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেসের কোনও নেতা অভিযোগ জানিয়ে কোনও পোস্ট করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে! সম্প্রতি নগাঁওয়ের কংগ্রেস সাংসদ প্রদ্যোত বরদলৈ শুক্রবার নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্যের উল্লেখ করে অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তোলাবাজি চালিয়েছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে অসমের একটি বাণিজ্যিক সংস্থার নাম উল্লেখ করেছিলেন প্রদ্যোত। দাবি করেন, সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের সঙ্গে মউ সইয়ের পরেই বড় অঙ্কের নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল ওই সংস্থা। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একেবারে কংগ্রেস সাংসদকে হুঁশিয়ারি হিমন্তের।

উল্লেখ্য নরেন্দ্র মোদির জমানায় পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে। সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল এসবিআই। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন। সেই অর্থ ভাঙিয়ে নেবে রাজনৈতিক দলগুলি। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল একেবারে অন্য ছবি।

 

Previous article‘রঞ্জির পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিক, তবেই ক্রিকেটাররা উৎসাহ পাবে’, রঞ্জিট্রফি খেলা নিয়ে বললেন গাভাস্কর
Next articleএবারেও ব্রাত্য জম্মু- কাশ্মীর! ভূস্বর্গে হচ্ছে না বিধানসভা ভোট