মুখে বললেও কাজে ‘অশ্বডিম্ব’! মোদির সঙ্গে মমতার “গ্যারান্টি”-র তফাৎ বোঝালেন বাবুল-সাগরিকা

বাবুলের স্পষ্ট অভিযোগ, মুখে যতই গ্যারান্টির কথা মোদি বলুন না কেন বাস্তবে তার কোনও বাস্তবায়ন নেই। অন্যদিকে বাংলার কথা মনে করিয়ে বাবুল বলেন, গণতন্ত্রকে ধবংস করছেন মোদি।

লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই ফের ‘লাফালাফি’ শুরু মোদি সরকারের (Modi Govt)। সিএএ (CAA) থেকে শুরু করে নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond) ভোটের আগে জোড়া ধাক্কায় বেসামাল অবস্থা কেন্দ্রের। তবুও সেসব বিষয় থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতে একের পর এক গাজোয়ারি করে চলেছে গেরুয়া শিবির। মঙ্গলবার মোদি সরকারের ‘গ্যারান্টি’র আসল চেহারা সামনে এনে প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক প্রশ্নবাণ তৃণমূলের (TMC)। এদিন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে (Constitution Club) সাংবাদিক বৈঠক করেন বাংলার মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ (Sagarika Ghosh)। এদিন বাবুল ও সাগরিকা একদিকে যেমন নরেন্দ্র মোদির ‘গ্যারান্টি’র (Gurranty) বাস্তব চেহারা যেমন তুলে ধরেন ঠিক তেমনই লোকসভা ভোটের মুখে মোদির ‘দাদাগিরিকে’ও কটাক্ষ করেন। বাবুল সুপ্রিয় এদিন নিজের বক্তব্যের শুরু থেকেই মোদিকে কটাক্ষ করেন। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, মুখে যতই গ্যারান্টির কথা মোদি বলুন না কেন বাস্তবে তার কোনও বাস্তবায়ন নেই। অন্যদিকে বাংলার কথা মনে করিয়ে বাবুল বলেন, গণতন্ত্রকে ধবংস করছেন মোদি। দেশের বিচারব্যবস্থাকেও নিজের কথায় চালানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। আর সেকারণে দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কথা বললেও মোদি সরকারের হস্তক্ষেপে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাংলায় দিদির গ্যারান্টির দিকে তাকান, সেখানে কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে রূপশ্রী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রীতিমতো দেশ তথা আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে। ঝুলিতে এসেছে একাধিক সম্মানও। আর বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে তারই নকল করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের বিচারব্যবস্থাকেও ধবংসের অভিযোগ তুলে মোদিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বঙ্গ তনয়। বাবুলের অভিযোগ, ভোট এলেই ভোট এলেই একাধিক জিনিসের দাম কমিয়ে ‘ভাঁওতাবাজির রাজনীতি’ করে কেন্দ্রের মোদি সরকার। আর ভোট মিটলেই সেই দাম মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়িয়ে দেশবাসীকে বিপদের মুখে ঢেলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। বাবুল মনে করিয়ে দেন যেখানে দেশবাসী বারবার আর্তনাদ করলেও তেলের দাম কমানোর বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ নেননি প্রধানমন্ত্রী, সেখানে ভোটের মুখে তেলের দাম কমিয়ে মানুষের হাতে ‘ললিপপ’ তুলে দিচ্ছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। বাবুল এরপরই নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলে দেশের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরেন। বাবুলের অভিযোগ, নোটবন্দি দেশের মানুষকে সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এরপরও রাতারাতি ২ হাজার টাকার নোট সরিয়ে ফের দেশবাসীর ভোগান্তি বাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, এদিন বাংলায় সাত দফা নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাবুল। তাঁর অভিযোগ, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই বাংলার একাধিক প্রান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভোটের মুখে লাগাতার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে বিরোধীদের উপর লাগাতার আক্রমণের ইস্যুতেও সরব হন বাবুল। মন্ত্রীর সাফ অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে একেবারে ‘তোতাপাখি’ বানিয়ে রেখেছে কেন্দ্র। এছাড়া সিএএ নিয়েও মোদির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বাবুলের অভিযোগ, একেবারে স্পষ্ট করে একটা জাতিকে বাইরে রেখে নোংরা রাজনীতি শুরু মোদি-শাহদের।

তবে বাবুল মুখে বললেও এদিন মোদি সরকারের ‘ভাঁওতাবাজির’ আসল চেহারা একেবারে তথ্য পেশ করে একে একে সামনে আনেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। মোদির গ্যারান্টিকে ‘স্বপ্নের গ্যারান্টি’ কটাক্ষ করে সাগরিকা বলেন, মোদির গ্যারান্টি সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা কানের কাছে শোনা গেলেও আসলে তার বাস্তবায়ন মানুষের চোখে পড়ে না। পুরোটাই ভোট এবং ভাঁওতাবাজির রাজনীতি। এরপরই নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে রাজ্যসভার সাংসদের দাবি,”উনি প্রধানমন্ত্রী নন, উনি দেশের ইলেকশন মন্ত্রী”। নির্বাচন সামনে এলেই মোদি বড় বড় গ্যারান্টি, প্রতিশ্রুতি দেন। আর ভোট মিটলেই তিনি স্বাভাবিভাবে সবকিছু ভুলে যান এবং সরকার চালানোর সময়কালে একবারের জন্যও সেই বিষয় প্রাধান্য পায় না। এরপরই মোদির ‘মডেল ভিলেজ’ বারানসির জয়াপুরের নাম উল্লেখ করে সাগরিকা বলেন, আমি নিজে সেখানে গিয়ে দেখেছি মডেল গ্রামের আসল চেহারা। যেখানে না আছে রাস্তা, না আছে জল ও শৌচালয়, এমনকি বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য একটা পার্কও নেই। মানুষ সেখানে থাকতে রীতিমতো আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন। ২০১৪ সালে মোদি প্রথমে আচ্ছে দিনের কথা বলেছিলেন, এরপর ২০১৯ সালে মোদির কথায় উঠে আসে নিউ ইন্ডিয়া প্রসঙ্গ। আর ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদির নয়া স্লোগান অমৃতকাল, বিকশিত ভারত। এরপরই সাগরিকা বলেন, এগুলো ভোটের প্রমোশন ছাড়া আর কিছুই নয়। যা ভোটের আগে সবাই জানতে পারেন, দেখতে পারেন কিন্তু ভোট মিললেই একেবারে ধাঁ সেসব প্রতিশ্রুতি। তবে এদিন রাজ্যসভার সাংসদের মন্তব্য কেন্দ্রে সরকারে আসার পর দুটি বড় দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমটা বেকারত্ব এবং অপরটি মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের রাজনীতি। তবে মোদির গ্যারান্টির পাশে এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে সাগরিকা তথ্য পেশ করে জানান, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার প্রায় ৮৩ লক্ষ মেয়ে উপকৃত হয়েছেন এবং রাষ্ট্র সংঘ এই প্রক্লপকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি সম্মানিতও করেছে। এরপরই সাগরিকার বক্তব্যে উঠে আসে নারীশক্তির প্রসঙ্গ। তিনি সাফ জানান, মোদির মুখে নারীশক্তির জয়গান শোনা গেলেও যখন দেশের মহিলা কুস্তীগিররা রাস্তায় বসে বিজেপির মন্ত্রী ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেদিকে একেবারেই নজর দেননি মোদি। এটাই বিজেপির আসল কালচার। তবে এখানেই না থেমে সিএএ নিয়ে কেন্দ্রের গাজোয়ারিকে আক্রমণ করে সাগরিকার প্রশ্ন মোদি বা অমিত শাহ নন মানুষ ঠিক করবেন কোন জায়গায় কারা বহিরাগত।

Previous articleগুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে CAA নিয়ে বিতর্কসভায় ABVP-র উস্কানি! হাতাহাতিতে আহত ৬ ছাত্র
Next articleবিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তথাগত রায়ের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ মতুয়াদের