যৌন নির্যাতনের শিকার চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়! ‘মিটু’ বিতর্কে বিস্ফোরক কৌশিক ঘরণী 

সমাজের সামনে এতদিন পর এই কঠিন সত্যিটা তুলে ধরতে পারার জন্য স্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)।

বাড়িতে হোক বা বাইরে, চেনা ঘেরাটোপে হোক বা কর্মজগতে প্রত্যেকটা মুহূর্তে যৌন নির্যাতনের (Sexual abuse) শিকার হচ্ছে মহিলারা। বাংলা থিয়েটারের জগতে যৌন হয়রানি (Sexual Harrasment) নিয়ে যখন টলিপাড়া সরগরম, নাট্যজগতের (Bengali Theatre Industry) মহিলাদের সুরক্ষার জন্য আবেদন জানালেন দামিনী বেণী বসু ঠিক তখনই শৈশবের বিভীষিকাময় দিনের কথা প্রকাশ্যে আনলেন অভিনেত্রী পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় (Churni Ganguly)! শিরোনামে উঠে এলো ‘মিটু’ (MeToo) নিয়ে অভিনেত্রীর একটি পোস্ট যেখানে লেখা , “আমি হয়তো ছোট ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলিনি। শিশু নির্যাতনের এক নীরব শিকারের দীর্ঘ দিনের জমে থাকা কান্না! শুধু মাত্র বলতে পারিনি বলে এত বছর চুপ থাকা।”

কৌশিক ঘরণী এই মুহূর্তে টলিউডের অত্যন্ত খ্যাতনামা এক অভিনেত্রী। পরিচালনাতেও নিজের দক্ষতাকে প্রমাণ করেছেন তিনি। কিন্তু ‘অর্ধাঙ্গিনী’ অভিনেত্রীর কিশোরকালের এক ঘটনা আজও তাঁকে ভেতর থেকে কুঁকড়ে রেখেছে। সেই যন্ত্রণার ক্ষত এখনও অমলিন। মাত্র ১২ বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন চূর্ণী। নিষ্পাপ কিশোরী সেদিন অপরাধীকে চিনতে পারেনি, মানসিক আঘাতির পাশাপাশি মনে জমেছিল অবিশ্বাসের পাহাড়। এতদিনে সবটা প্রকাশ্যে আনলেন। তাঁর কথায়, ‘আমার ভিতরে লম্বা সময় ধরে এই কান্না জমে আছে, শিশু নির্যাতনের শিকার আমি, নীরব থেকেছি। একজন তার বেড়ে ওঠা বছরগুলিতে চুপ থেকেছে কারণ সে প্রকাশ্যে এই সত্যিটা বলতে পারেনি। সেই অপরাধী স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি পায়নি। তবে আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই, কর্মফল সে ভুগবেই। কিন্তু আমি এখনও তার তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অন্তত এটা সে করতে পারে।’ অতীতের সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী বলেন সেই মুহূর্তে ভয় তাঁকে পুরোপুরি গ্রাস করেছিল। মুহূর্তের মধ্যে ঘর ছেড়ে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে যান তিনি। তখন এত কিছু বোঝার ক্ষমতা ছিল না কিন্তু আজ ন্যক্কারজনক সেই ঘটনার হাড়হিম করা দিনগুলোর কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিলেন চূর্ণী।

বেণী বসুর পিটিশনে সই করতে পারেননি চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সমাজমাধ্যমের পোস্টে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিলেন। তিনি লেখেন, ‘আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। শুধু থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য নয়, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। পারলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। তাহলেই এই ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপও। আজ, আমি যেভাবে এই ঘটনা শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ’। সমাজের সামনে এতদিন পর এই কঠিন সত্যিটা তুলে ধরতে পারার জন্য স্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। ভালবাসার আস্থা এবং আলিঙ্গনে সহধর্মিণীর যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির ভার কমাতে চেয়েছেন তিনি। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক (Kaushik Ganguly) নিজের পোস্টে লেখেন, এত বছর গুমরে থাকা বাষ্প তোমার মনের যে ক্ষতি করেছে, তার বিচার কিন্তু ঠিক হচ্ছে অন্য আঙ্গিকে, অন্য চেহারায়! আমি নিজে চোখে সেই দোষীর তিলে তিলে ক্ষয় দেখছি! একদিন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সেই হাত ! কিশোর বয়সের সারল্যে পৃথিবীর খারাপ দিকটাকে চিনতে পারেননি চূর্ণী। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে যাতে এই ঘটনা না হয় তার জন্য সকলকে সরব হওয়ার আবেদন করেছেন অভিনেত্রী।

 

Previous articleসন্দেশখালিতে বাড়ির মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্রের!
Next articleআরও এক মরশুম বার্সায় জাভি