দেশের অন্যতম বড় দুর্নীতির নাম NEET, মেডিক্যালের প্রবেশিকার ফলাফল নিয়ে সরব বাংলার চিকিৎসকরা

দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ছেলেখেলা করা মোদি সরকারের (Modi Government) আমলে মেডিক্যাল ব্যবস্থার অন্যতম বড় স্ক্যাম NEET পরীক্ষার ফলাফল। সব দুর্নীতিকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার রেজাল্ট। পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দিহান সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। গ্রেস নম্বর বিতর্কে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া নিয়েও আলোচনা তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, যোগ্য হবু ডাক্তারদের ভবিষ্যৎ কি তাহলে অন্ধকারে? যেখানে ডাক্তার মানেই তিনি ভগবান সেখানে চিকিৎসক হওয়ার যোগ্যতার পরীক্ষায় এত বড় স্ক্যাম! দেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্নীতি NEET ২০২৪-এর ফলাফল নিয়ে সমালোচনায় সরব বাংলার চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা চক্রে প্রখ্যাত চিকিৎসক ড. কুণাল সরকার (Kunal Sarkar) বলেন, যেভাবে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে অযোগ্যদের পাশ করানো হয়েছে তার থেকে এটা স্পষ্ট, ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় যে হারে দুর্নীতি হয়েছে সেটার কাছে অন্য সব স্ক্যাম চুনোপুটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। তাঁর কথায় ডাক্তারি সিটকে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। অ্যাডমিশন টেস্টের নামে ম্যানিপুলেশন চলছে। কারণ পরীক্ষায় অ্যাডমিট কার্ড-এর ভূমিকা কম আর ক্রেডিট কার্ড-এর ভূমিকা বেশি। এর পাশাপাশি গ্রেস নম্বর পাওয়া দেড় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীদের পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টিকেও ‘ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা’ বলে অভিযোগ করেছেন ডাক্তার সরকার।

গত দু’বছরের নিট- এ প্রথম স্থানে ছিল দুই থেকে কেবল তিন জন। কিন্তু সেখানে এবারে একসঙ্গে ৬৭ জন শীর্ষস্থানাধিকারী হওয়ায় সন্দেহ তৈরি হয়। এনাদের মধ্যে ৬ জন আবার একই পরীক্ষা কেন্দ্রের। বিষয়টি কি নেহাতই কাকতালীয়? NEET- এ মোট ৭১৮ বা ৭১৯ নম্বর পাওয়া কার্যত অসম্ভব। কারণ, এই পরীক্ষা হয় মোট ৭২০ নম্বরে। সেখানে এক একটি প্রশ্নের মান থাকে চার। একটি প্রশ্ন ভুল হলে সাধারণভাবেই ওই চার নম্বর কাটা যায়। সেই সঙ্গে আরও এক নম্বর কম পায় পরীক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে কীভাবে ৭১৮ বা ৭১৯ কেউ পেতে পারেন তা কোনও যুক্তিতেই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এই বিষয়ের ওপর এনটিএ-র হলফনামা দাবি করে হাইকোর্ট। এমনকি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চলতি বছরের নিট পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

এই পরিস্থিতিতে, এই পরীক্ষার আয়োজক সংগঠন ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির (এনটিএ) তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয় যে, সময় নিয়ে সমস্যার কারণে বহু পরীক্ষার্থীকে ‘গ্রেস মার্কস’ দেওয়া হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের দাবি, ‘কারচুপি’ এবং ‘দুর্নীতি’র ফল হিসেবে নিট-এর এই পরিসংখ্যানের পেছনে রয়েছে ষড়যন্ত্র ও বড়সড় দুর্নীতি। আর তা সামনে আনতে না চেয়েই নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগে অর্থাৎ লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের দিনই নিট-এর ফলাফল প্রকাশ করে দেওয়া হয়। যোগ্য হবু চিকিৎসকদের দাবি, ‘পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। আমরা জবাব চাই।’ কুণাল সরকার বলেন আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আগামী ৫-১০ বছর পর আমাদের পরিবার-পরিজনদের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব থাকবে এই চিকিৎসকদের হাতেই। তাই তাঁদের সকলের কথা মাথায় রেখে আমাদের এই লড়াই লড়তে হবে একসঙ্গে। এই প্রসঙ্গে ফিজিশিয়ান তথা শিক্ষক ড. অর্কদীপ বিশ্বাস (Arkadeep Biswas) বলেন, বিগত বছরগুলিতে যেখানে ৬০০ নম্বর পেলেই পড়ুয়ারা ভালো মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতেন, সেখানে এবারের এই ঘটনায় ৬৫০ নম্বর পেয়েও হয়তো বহু যোগ্য পড়ুয়া ডাক্তারি পড়ার সুযোগই হারিয়ে ফেলবেন।

 

Previous articleরাজ্যে বার্ড-ফ্লুতে কেউ আক্রান্ত নয়! সাফ জানাল স্বাস্থ্য দফতর
Next articleতৃতীয়বারের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হচ্ছেন অজিত ডোভাল