লোকসভা ভোট ও বিধানসভা উপনির্বাচনে সাফল্যের পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রবিবার প্রথম বড় কর্মসূচি পালন করল। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চকে ঘিরে উপচে পড়েছিল দলীল কর্মী-সমর্থকেরা ভিড়। সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন ধর্মতলায়। রবিবারের মঞ্চ থেকে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কী বার্তা দেন, তার অপেক্ষাতেই ছিলেন তামাম তৃণমূল পরিবার। দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার সভাস্থলে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সর্বময় নেতা অখিলেশ যাদবও। তাঁকে দেখেই ধর্মতলার ভিড় থেকে উল্লাসধ্বনি ওঠে। হাততালি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানান উপস্থিত সকলে।

এদিন একুশের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যেমন বিরোধীদের তুলোধনা করেছেন, একইভাবে দলের নেতা, কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মসমালোচনার পাঠও দিয়েছেন। লোভ বর্জন করে মানুষের কাজ করতে হবে। মানবসেবার মধ্যে সকলকে নিয়োজিত হওয়ার বার্তা ও নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যায়ের সঙ্গে কোনও আপস যে তিনি করবেন না, এদিন ছত্রে ছত্রে তা বুঝিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। নেতা নয়, কর্মীরাই দলের সম্পদ, বক্তব্যের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত এই আপ্তবাক্য তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী।

যাঁরা কাজ করবে না, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। জিতে মানুষের কাজ করতে হবে। আমরা সকলে সামাজিক কর্মী। মনে রাখবেন, গাড়িতে ঘোরার চেয়ে পায়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। তাতে শরীর-মন ভাল থাকে। বড় গাড়িতে ঘোরার থেকে স্কুটার, সাইকেলে ঘোরা ভাল। মানুষকে যারা পরিষেবা দেবে না তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”
অন্যায় করলে কাউকে রেয়াত নয়

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্যায় করলে আমি দলের কাউকে ছাড়ি না। গ্রেফতার করি। অন্যায় করবেন না, অন্যায় সহ্য করবেন না। আমি পরিষ্কার বলছি, মা-বোনেদের সম্মান দেবেন। মমতা তৃণমূলের সকল বিধায়ক, কাউন্সিলর, সাংসদ, নেতানেত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘যেন কারও বিরুদ্ধে দল কোনও অভিযোগ না পায়। অভিযোগ পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। আমি চাই আপনার ঘরে যা আছে, সেটা খেয়ে বেঁচে থাকুন। লোভ করার দরকার নেই। দুর্নীতির সঙ্গে আপোস নয়। যত জিতব তত নরম হতে হব। দায়িত্ব বাড়বে। আমি এখানে বিত্তবান চাই না। এমন মানুষ চাই যার আবেগ আছে, মানবিকতা আছে। বিবেকবান মানুষ চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই। বৃষ্টি গায়ে লাগল তো? এ তো স্নান করলে ধুয়ে যাবে কিন্তু নোংরা গায়ে লাগলে সেটা ধোয়া যায় না। কেউ যেন আপনাকে লোভী বানাতে না পারে। আমাদের শপথ নিতে হবে, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপোষ নয়।”

যেখানে জিতেছেন ধন্যবাদ জানান, যেখানে জেতেননি সেখানে মানুষের কাছে ক্ষমা চান

যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। যেখানে যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানকার মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। মালদহে আমরা জিততে পারিনি। মালদহে আম ও আমসত্ব দুটোই চাই। ছাব্বিশে আমাদের মালদহ জিততে হবে।

এজেন্সির ধমকানির পরে মানুষ পাশে থেকেছেন

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্বাচনের একতরফা আচরণের পরেও লোকসভা নির্বাচনে, বিধানসভা উপনির্বাচনে মানুষ আমাদের পাশে থেকেছেন। এজেন্সির ধমকানির পরেও মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। লোকসভায় ৩৮ শতাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। আমরা একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা লোকসভায় ৩৮ শতাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা আমাদের সম্পদ।

তৃণমূল জমানায় দারিদ্রসীমা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে

ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দায়িত্বে আসার আগে দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন ৫৭.৬ শতাংশ মানুষ। আমাদের জমানায় তা ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এটাকে আমরা শূণ্যতে নিয়ে যেতে চাই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছি। ২ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছি। আমার কাছে ১০ লক্ষ চাকরি তৈরি আছে। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস আদালতে গিয়ে চাকরি আটকে দিচ্ছে, কারও চাকরি যাবে না, আমরা সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করছি। ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়েও লড়াই করছি আমরা। ২ কোটির বেশি ওবিসি সার্টিফিকেট দিয়েছি আমরা।
আরও পড়ুন: অসহায় মানুষ কড়া নাড়লে দরজা খোলা আছে: বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী