ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয়, তা ফের একবার প্রমাণ হয়ে গেল। কলকাতার কয়েক জন শিক্ষানুরাগী পরিকল্পনা করেছিলেন, গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যেও গড়ে তুলবেন বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ। সেই উদ্যোগে সামিল হয়েছিলেন গ্রামের অশীতিপর প্রাক্তন এক প্রধান শিক্ষক। শেষ পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পলাশপাই গ্রামে গড়ে উঠেছিল ‘বিজ্ঞান বাড়ি’। রবিবার তাই বাস্তব রূপ পেল। পলাশপাই গ্রামের স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য খুলে গেল বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ। বাঁশ, মাটি ও টালির তৈরি নিতান্তি সাদামাটা একটি বাড়ি। কিন্তু ভিতরে ঢুকলেই চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বাড়িতে রয়েছে টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, আলোকবিজ্ঞানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, রসায়নের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম, এমনকী বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই। এরই পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বানানোর কম করে ৫০ রকমের সরঞ্জাম। মাসে অন্তত এক বার কলকাতা থেকেই কোনও প্রশিক্ষক গিয়ে হাতে-কলমে গ্রামের পড়ুয়াদের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরির পাঠ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। কাজটা শুরু হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে ২০১৯ সালে।

এদিন পলাশপাইয়ের প্রায় ছ’টি বিদ্যালয়ের জনা ৮০ জন পড়ুয়া হাজির হয়েছিল বিজ্ঞান বাড়িতে। তাদের কেউ কেউ উৎসাহের সঙ্গে টেলিস্কোপে চোখ রেখে অজানা মহাবিশ্বের অনুসন্ধান করার চেষ্টা করল। কেউ আবার হাতে কলমে শিখল, কী ভাবে মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। আলোক বিজ্ঞানের হাত ধরে লেজার রশ্মির খেলাতেও নেচে উঠল অনেকে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রতি শনিবার বিকেলে এবং রবিবার সকাল-বিকেলে তিন ঘণ্টা করে খোলা থাকবে এই বিজ্ঞান বাড়ি। ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’র গবেষক দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়, বোস ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত গবেষক গৌতম বসু, আইআইএম-ইন্দোরের অর্থনীতির গবেষক জয়শঙ্কর ভট্টাচার্য, আমেরিকার একটি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক দীপঙ্কর মৈত্র, ‘সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’-এর প্রাক্তন অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের এমিরেটাস শিক্ষক পার্থপ্রতিম রায় ও আইবিএমের সিনিয়র পরামর্শদাতা সৌম্য চট্টোপাধ্যায় এই গুরু দায়িত্বভার পালনের অঙ্গিকার করেছেন।


তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিদ্যালয়ের চার দেওয়াল এবং পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বেরিয়ে হাতেকলমে বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে প্রান্তিক অঞ্চলে। বিষয়টি জানার পর নিজের বাড়ির সামনের জমি বিজ্ঞান বাড়ি তৈরির জন্য স্বেচ্ছায় দিতে রাজি হয়ে যান স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ জানা ও তাঁর ভাই ভবতোষ জানা। তারা বলেছেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে সরকারকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র করতে দিয়েছি, একটি প্রাথমিক স্কুলও করেছি। আর যেটুকু জমি ছিল, তা আগামী প্রজন্মের কাজে লাগবে, এমন ভাবনা থেকেই জমি দিয়েছি। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে কোভিড শুরুর পরে থমকে গিয়েছিল বিজ্ঞান বাড়ি তৈরির কাজ।পরে অবশ্য সেই কাজ ফের শুরু হয়। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। অনেকেই এই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
