হেডফোনের ছেঁড়া তারই ধরিয়ে দিল চিকিৎসক-খুনের আততায়ীকে! কে এই সঞ্জয় জানেন?

হেডফোনের ছেঁড়া তারই ধরিয়ে দিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের (R G Kar Hospital) ট্রেনি চিকিৎসক-খুনের আততায়ীকে! ইতিমধ্যেই খুন ও ধর্ষনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শুক্রবার রাতেই আটক করা হয় সঞ্জয় রায় নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি হাসপতালের কোনও কর্মী নন, তবে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। তাই সেমিনার হলে যে সিসিটিভি নেই, সেটা জনতো সঞ্জয়। তাই অবাধে ক্রাইম করার সুযোগও পেয়ে যায় সে। এই সঞ্জয় পেশায় একজন সিভিল ভলেন্টিয়ার। জেরায় অসঙ্গতি মেলায় সঞ্জয়কে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (R G Kar Hospital) জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুমে পড়েছিল একটি ব্লু-টুথ হেডফোনের ছেঁড়া তারের অংশ, সেটি সঞ্জয় রায়ের, সেই সূত্রেই তাঁকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মৃতার দেহের পাশের ওই তার ধরেই চলছিল সূত্র খোঁজার কাজ। সেই সূত্র ধরেই সঞ্জয়কে এদিন গ্রেফতার করে পুলিশ।

গতকাল টালা থানায় নির্যাতিতার বাবার করা অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করা হয়। তবে এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। আরজি করে পৌঁছলেন ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা।

গতকাল থেকে লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা হাসপাতালে থাকেন। হোমিসাইড শাখার পাশাপাশি উইমেন্স গ্রিভান্স সেলের সদস্যরাও ছিলেন। যে সেমিনার রুমে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে, সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় পারিপার্শিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন পুলিশ কর্তারা। কারা ছিল সেই সময়, কখন এই রুমে আসা হয়, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করেন তাঁরা। একাধিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই প্রাথমিকভাবে সঞ্জয়কে আটক করে পুলিশ। নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। এরপর আজ সকালেই তথ্যের অসঙ্গতি এবং হেডফোনের ছেঁড়া তারেই চিকিৎসক-খুনে গ্রেফতার সঞ্জয়হেডফোনের তারের সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রথমে আত্মহত্যা বলা হলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর সকলে শিউরে উঠছেন। আত্মহত্যা তো নয়, এ ঘটনা ভয়ঙ্কর এক খুনের। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছে আর জি করের ডাক্তারি পড়ুয়া ওই তরুণীকে। আঘাত থেকেই খুনের মোটিভ পরিষ্কার। পুরোনো রাগ, প্রতিহিংসা থেকেই এই খুন হতে পারে! পাশাপাশি, আততায়ী পূর্ব পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। খুনের সময় একের অধিক ব্যক্তির উপস্থিতি থাকতে পারে। কারণ, ভিকটিম মৃত্যুর আগে আততায়ী বা আততায়ীদের প্রবল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে অনুমান করা যায়।

তরুণীর সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত৷ শরীরজুড়ে কমপক্ষে ১০টা আঘাতের চিহ্ন৷ দু’টো চোখ থেকেই রক্ত বেরিয়েছে৷ মুখ, ঠোঁট, পেট, ঘাড়, হাত-পা কোথায় করা হয়নি আঘাত! রক্তাক্ত গোপনাঙ্গও৷ পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট যা বলছে, তাতে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়৷ তরুণী চিকিৎসকের শরীরে এতগুলি আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আততায়ী কোনও রাগ এবং প্রতিহিংসা থেকেই এই খুন করে থাকতে পারে৷ এমনকি, আততায়ী মৃতার পূর্ব পরিচিত হয়ে থাকতে পারে বলেও অনুমান করছে পুলিশ৷

পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে, ২২ বছরের ওই তরুণী চিকিৎসকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১০টি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে৷ প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে পুলিশের দাবি, তরুণীর দুই চোখ থেকেই রক্ত বেরিয়েছে। রক্তে বেরিয়েছে মুখ থেকেও। মৃতার গোপনাঙ্গেও ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। তরুণীর চিকিৎসকের বাঁ পায়ে, পেটে, বাম পায়ের গোড়ালিতে, ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে৷ ডান হাতের অনামিকা ও ঠোঁটেও ছিল আঘাতের চিহ্ন। আঘাত করা হয়েছে মুখে৷ আঘাতের চিহ্ন মিলেছে নখের কাছেও। দেহের কলার বোনের কাছে ডান দিকে হাড়ের একটা অংশ ভাঙা৷ যদি কারও গলা হাত দিয়ে টেপা হয়ে থাকে সজোরে, এমন হাড় ভাঙতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা৷ তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওই হাড় ভেঙে থাকতে পারে, তা নিয়ে চলছে তদন্ত৷

শুক্রবার সকালে তরুণীকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চারতলার এক সেমিনার হলে নিচু একটি খাটের মতো জায়গায় সংজ্ঞাহীন ও বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়৷ নিচু একটি খাটের মতো অংশে নীল চাদরের উপরে পড়েছিল তাঁর দেহ৷ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সেই নীল চাদরের কিছু জায়গায় রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে৷ পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, সেই নীল চাদরে রয়েছে প্রচুর চুল ও রক্ত৷ তরুণীর মাথা দেহের মাথা ছিল পশ্চিম দিকে আর পূর্ব দিকে পা ছিল। দেহ ‘অর্ধনগ্ন’ অবস্থায় মিলেছে। পরনের পোশাক, অন্তর্বাস ছিল অবিন্যস্ত। দেহের পাশে পড়েছিল পরনের নীল জিন্স ও একটি ভাঙা চুলের ক্লিপ৷ সেই সঙ্গে হেড ফোনের ভাঙা অংশ।

আরও পড়ুন: নজরদারির গাফিলতি থাকলে চিহ্নিত হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষীদের শাস্তির দাবি কুণালের 

 

Previous articleনজরদারির গাফিলতি থাকলে চিহ্নিত হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষীদের শাস্তির দাবি কুণালের 
Next articleপেইন কিলার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক, কমছে ৭০টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম!