‘বিচারের দাবি’তে বিজেপির অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ গেল প্রসূতির!

দুর্গাকে দেখে চিকিৎসক জানান, দেরি হয়ে গিয়েছে। দুর্গার নিষ্প্রাণ শরীর নিয়ে হীরা কান্নায় লুটিয়ে প্রলাপ করেন, অবরোধের জন্য সময়ে পৌঁছাতে পারলেন না হাসপাতালে

শুক্রবার ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে প্রাণ গিয়েছিল তরতাজা যুবকের। এবার আর জি করকে ইস্যু করে রাজনীতির ফায়দা তুলতে নামা বিজেপির অবরোধের জেরে প্রাণ গেল এক প্রসূতির। বিজেপির চাক্কা জ্যাম কর্মসূচিতে নদিয়ার ফুলিয়ায় আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সে। সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে মৃত্যু হল মাত্র ২৩ বছরের অন্তঃসত্ত্বা যুবতীর। পরিবার প্রশ্ন তুলেছে, যে প্রতিবাদে মানুষের প্রাণ যায়, সেই প্রতিবাদের কী অর্থ। নির্যাতিতা চিকিৎসকের বিচারের দাবি জানানোর আড়ালে আদতে কাদের নির্মম চেহারা বেরিয়ে আসছে, তা দুই মৃত্যুতে স্পষ্ট।

আর জি করের ঘটনা নিয়ে বিজেপি যে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে, তা আরএসএস কর্মীদের ছাত্র সমাজের আড়ালে মাঠে নামার ঘটনাই প্রমাণ করেছে। তারপরেও রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদের নামে বিজেপির অসভ্যতার ছবি স্পষ্ট হয়েছে তাদের আন্দোলনে। শুক্রবার চাক্কা জ্যামের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সেই আন্দোলন ঘিরে প্রবল অশান্তির ছবিও ফুটে ওঠে। তবে নদিয়ার ফুলিয়ার ঘটনা তার মধ্যে সবথেকে মর্মান্তিক। ২৩ বছরের দুর্গা শীল মৃগীর রোগী ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা দুর্গা শুক্রবার হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। পরিবার তাঁকে প্রথমে ফুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কিন্তু দুর্গার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। পেশায় সেলুন ব্যবসায়ী হীরা স্ত্রীকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠতেই বারবার তাঁদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে যায় বিজেপির অবরোধে। হবিবপুরের কাছে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্স এগোতে দেওয়ার জন্য কার্যত পায়ে ধরতে থাকেন হীরা। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে পৌঁছালে দুর্গাকে দেখে চিকিৎসক জানান, দেরি হয়ে গিয়েছে। দুর্গার নিষ্প্রাণ শরীর নিয়ে হীরা কান্নায় লুটিয়ে প্রলাপ করেন, অবরোধের জন্য সময়ে পৌঁছাতে পারলেন না হাসপাতালে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে হারালেন পৃথিবীর আলো না দেখা সন্তানকেও।

আর জি করে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে শ্রীরামপুরের বিক্রমের মৃত্যুর পরে তাঁর মা দাবি করেছিলেন, মায়ের কোল খালি করে কীসের বিচার চাইছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার নদিয়ার দুর্গার মৃত্যুর পর একই স্বর স্বামী হীরার মুখে। তাঁর প্রশ্ন, বিজেপির অবরোধের জন্য এগোতেই পারলেন না। তাহলে এই অবরোধ করে প্রতিবাদ করার কী অর্থ?

Previous article‘চুরি করে অলিম্পিক্সে গিয়েছেন বিনেশ’, অভিযোগ ব্রিজভূষণের
Next articleদেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচে আবেগঘন সুয়ারেজ