সত্যি হল মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা। বাংলার ভোটারদের এপিক নম্বর জাল করে ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে ভিনরাজ্যের ভোটার! নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India)মদত ছাড়া কি এই কাজ সম্ভব? তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যা বলেছিলেন, তা যে একশো শতাংশ সত্য, তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে বাংলায়। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ছে কেউটে। একই এপিক নম্বরে বাংলা এবং বিজেপি শাসিত গুজরাট ও হরিয়ানার ৬১১ ভোটারের সন্ধান মিলেছে।

রাজ্যের ভোটার তালিকায় ‘বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী’র অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা শুনে জ্বলে উঠেছিলেন বঙ্গ বিজেপির ‘সিংহ’রা। নেত্রীর নির্দেশে তৃণমূল স্ক্রুটিনি প্রক্রিয়া শুরু করতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে চলে আসছে। মুর্শিদাবাদের রানিনগর বিধানসভা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৬১১ জন এমন ভোটারের সন্ধান মিলেছে, যাঁদের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের নম্বরের লোক রয়েছে গুজরাট ও হরিয়ানায়। অর্থাৎ বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যের এপিক কার্ডধারীদের ঢোকানো হয়েছে বাংলার ভোটার তালিকায়। মূলত ‘এক্সওয়াইজেড’ ও ‘এলপিজেড’ সিরিজের এপিক কার্ডেই এই ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সবথেকে বেশি ৪৮২ জন এমন ভোটার রয়েছে। তাঁদের এপিক কার্ডের যে নম্বর, একই নম্বর গুজরাটের দানিলিমডা, গান্ধীনগর সাউথ, ঘাটলোডিয়া, কালল, নাবোদা, ঠক্করবাপা নগর, গোন্ডল, মানসা ও ভেজালপুর বিধানসভার ৪৮২ জন ভোটারের। আর মুর্শিদাবাদের রানিগরের এমন ভোটার রয়েছে ১২৯ জন। তাঁদের এপিক কার্ডের নম্বরের মিল রয়েছে হরিয়ানার বারওয়ালা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারদের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার ভূতুড়ে ভোটার ধরা পড়ে। এক বছরের মধ্যে বেড়ে যায় ওই বহুল পরিমাণ ভোটার। তারপরই নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। নেতাজি ইনডোরের দলীয় সাধারণ সভা থেকে ভোটার কার্ড জালিয়াতি নিয়ে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গুজরাট এবং ওড়িশার দুটি সমীক্ষক এজেন্সিকে দিয়ে এ রাজ্যের ভোটারদের ‘ডেটা’ সংগ্রহ করে অনলাইনে এই কাজ করানো হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে মুখ্যসচিব ভোটার তালিকা ‘খতিয়ে’ দেখার জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন। এরপর একই নম্বরের দুটি এপিক কার্ডের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। রানিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার মহম্মদ সাইদুল ইসলাম। তাঁর এপিক কার্ড নম্বর এক্সওয়াইজেড ০৬০০৮৪১। ওই একই নম্বরের এপিক কার্ড রয়েছে হরিয়ানার বারওয়ালা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার সুনীতার। আবার রানিনগরের সাইদুল ইসলামের এপিক কার্ড নম্বর এক্সওয়াইজেড ০৫৯৯৭২০। ওই একই নম্বরের এপিক রয়েছে বারওয়ালার ভোটার সুরেন্দ্র কুমারের। গঙ্গারামপুর বিধানসভার ভোটার মানিক রায়, এপিক কার্ড নম্বর এলপিজেড২৫২৫৯৭০। একই নম্বরের কার্ড গুজরাটের দানিলিমডা কেন্দ্রের নরেশকুমার সোনির। মানিকবাবুর ভাই বিপ্লব রায়ের এপিক কার্ড নম্বর এলপিজেড২২৬৮০৮৪। ওই নম্বরেরই কার্ড রয়েছে গান্ধীনগর সাউথ কেন্দ্রের গোমতীবেন ঠক্করের।

–

–

–

–

–

–

–

–

–