Thursday, July 10, 2025

শমীক-শুভেন্দুর বিপরীতমুখী মত: একজনের মুখে সম্প্রীতি, অন্যজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী!

Date:

Share post:

একজন সদ্য রাজ্য সভাপতি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, আরেকজন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বিজেপির (BJP) এই দুই নেতা হাঁটছেন দুপথে। একজন সংখ্যালঘুদের নিশানা করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচারে ব্যস্ত। অন্যজন সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিচ্ছেন। আর তাই দেখে রাজনৈতিক মহল বলছে, শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharjee) আর শুভেন্দু অধিকারীর (Shubhendu Adhikari) পথ একেবারে বিপরীতমুখী।

অনেক জল্পনার পরে শেষে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Mujumder) হাত থেকে রাজ্য সভাপতি ব্যাটন শমীক ভট্টাচার্যর হাতে তুলে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। শিক্ষিত, সাহিত্য চর্চা করা শমীক বিজেপির (BJP) অন্দরের কোন্দল মিটিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে আশা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কারণ ২৬-এর নির্বাচনের আগে বিজেপির সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এক একজন নেতা তাঁদের এক একজন অনুগামী, এই লবি সঙ্গে ওই লবির কোন্দল- এই ঠেকাতেই নাজেহাল দীনদয়াল মার্গ। বিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ পদ্ম শিবিরের। সুকান্ত মজুমদার বিজেপি সভাপতি হওয়ার পরে তাঁকে সবাই শুভেন্দু অধিকারীর শিবিরের লোক বলেই জানত। কিন্তু দুজনেই দুজনের বিরুদ্ধে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নালিশ করে এসেছেন। আবার শিক্ষিত কলেজ অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও সুকান্ত মজুমদারের ভাষা বিশেষ করে মহিলাদের প্রতি তার উক্তি অত্যন্ত অসম্মানজনক। যার নিন্দা হয়েছে সব মহলে। এই পরিস্থিতিতে শমীককে নিয়ে এসে অন্তত গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে চাইছে নাড্ডা-শাহরা। কিন্তু সেই কোন্দল আদৌ মিটবে কি!

বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে একমাত্র মনোনয়ন দিয়েছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। সুতরাং তিনি সভাপতি হয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে দায়িত্বভার তুলে দেওয়ার জন্য যে মঞ্চ করা হয়েছিল সেই মঞ্চেই দু’রকম সুর দুই নেতার গলায়। দায়িত্ব নেওয়ার পরে সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন বিজেপির নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “বিজেপির লড়াই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়, বিজেপির লড়াই মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়। আপনাদের বাড়ির যে ছেলেরা হাতে পাথর নিয়ে ঘুরছে, আমরা আসলে সেই পাথরটা কেড়ে নিয়ে তার হাতে বই ধরিয়ে দিতে চাই। যারা তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তাদের তলোয়ার কেড়ে নিয়ে হাতে কলম ধরাতে চাই। এটা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি করে দেখাবে।”

অনেকের মতে, সাধু মন্তব্য সন্দেহ নেই। বিজেপির ভাবভূর্তি বদলাতে এই মনোভাব জরুরি। কারণ ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি বাংলা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে উগ্র ধর্মীয় বিভাজনের পক্ষে গলা তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, “আমাদের দায়িত্ব কন্যা বাঁচাও, মমতা তাড়াও। হিন্দু বাঁচাও, মমতা ভাগাও।”

একই মঞ্চ থেকে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলছেন শমীক। আর শুভেন্দু হিন্দু ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন! সুতরাং যতদিন শুভেন্দু এইভাবে হিন্দু ঐক্যের ডাক দেবেন এবং বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের বাংলাদশি বলে ধরপাকড় করা হবে, ততদিন শমীক ভট্টাচার্যের একতার বাণীতে ছিঁড়ে ভিজবে না। কারণ বাংলায় অত্যন্ত শক্তিশালী তৃণমূল। উন্নয়নমূলক প্রকল্প, নারী ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদির কারণে তারা যে জায়গায় রয়েছে, তাতে যে কোনও বিরোধী দলকেই সঙ্গবদ্ধ হয়ে তবেই লড়াইয়ে নামতে হবে। না হলে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে। কিন্তু যেখানে দলের রাজ্য সভাপতি আর বিরোধী দলনেতা একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু’রকম কথা বলেন, সেখানে পদ্ম শিবিরের ঐক্য কী করে হবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। কারও কারও মতে আবার এই বিভাজনে বিজেপির লাভের বদলে আরও বেশি ক্ষতি হবে।

 

spot_img

Related articles

গালুডি জলাধারের ছাড়া জলে ভাসছে বাংলা! ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশাকে কাঠগড়ায় তুললেন সেচমন্ত্রী

টানা বর্ষণ ও জলাধার থেকে হঠাৎ জল ছাড়ায় বিপর্যস্ত পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম। গালুডি জলাধার থেকে এক লক্ষ...

বিতর্কিত ভোটার তালিকা সংশোধনী নিয়ে সাফাই কমিশনের: ১০ প্রশ্ন তৃণমূলের

বিহার নির্বাচনের আগে কোনও এক গোপন উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়া...

২১ জুলাই সমাবেশ সফল করার আহ্বানে কোন্নগরে তৃণমূলের বিশাল মিছিল ও সমাবেশ

২১ জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক সমাবেশকে সফল করতে হুগলি জেলার কোন্নগরে অনুষ্ঠিত হল বিশাল মিছিল...

প্রকল্প অনুমোদনে দফতরগুলিকে নির্দিষ্ট আর্থিক ক্ষমতা দিল রাজ্য

প্রকল্প রূপায়ণে গতি আনতে এবার প্রশাসনিক দফতরগুলিকে নির্দিষ্ট আর্থিক ক্ষমতা দিল রাজ্য সরকার। নবান্ন থেকে অর্থ দফতরের জারি...