শাওনী দত্ত
২০১৪ মহারাষ্ট্র নির্বাচনে কংগ্রেস ও শিবসেনা জোটকে সরিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পিছনে একটা ভূমিকা কারণ ছিল ২০১৩ মুম্বই সিরিয়াল ব্লাস্টের রায় ঘোষণা। সেই রায়ে অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে (Sanjay Dutt) ৫ বছরের জন্য জেলে পাঠানোর ঘোষণা বিজেপির দেশভক্তির নীতিকে মহারাষ্ট্রে খাড়া করার সুযোগ দিয়েছিল। সুফল মিলেছিল বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে। সেই থেকেই মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) বিজেপির গোড়াপত্তন। সেই গোড়াপত্তনের কারিগর সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমকে (Ujjwal Nikam) এবার স্বীকৃতি বিজেপি সরকারের। তাঁকে রাজ্যসভার (Rajyasabha) জন্য মনোনিত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu)।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয় রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার শূন্য আসনের জন্য চারজনকে মনোনিত করেছেন। তার মধ্যে প্রথম নাম আইনজীবী উজ্জ্বল দেওরাও নিকম। ১৯৯৩ মুম্বই সিরিয়াল ব্লাস্টের মামলায় ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অস্ত্র আইনে দোষী সাব্যস্ত হন কংগ্রেসের মন্ত্রী সুনীল দত্তর ছেলে অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। এরপর ২০১৩ সালে সর্বশেষ রায়েও সঞ্জয় দত্তকে দোষী বলেই চিহ্নিত করে শীর্ষ আদালত। আর নির্বাচনে সেই রায়কেই কংগ্রেসের (Congress) বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে বিজেপি। নির্বাচনের ঠিক আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সঞ্জয় তাস ফেলার সুফল মেলে ২০১৪ মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে।

তবে শুধুমাত্র মুম্বই সিরিয়াল ব্লাস্ট নয়, ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার মামলাতেও বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসাবে ছিলেন উজ্জ্বল নিকম। মূলত টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপ্টিভ অ্যাক্টিভিটিস অ্যাক্ট (TADA) সংক্রান্ত মামলায় মহারাষ্ট্রের আইনজীবী হিসাবে বারবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন উজ্জ্বল নিকম। কংগ্রেস আমলে জেলের ভিতরে আজমল কাসভকে বিরিয়ানি দেওয়া হচ্ছে, এই তথ্য প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস-এনসিপির বিরুদ্ধে বিজেপির হাতে হাতিয়ার তুলে দিয়েছিলেন নিকম। যদিও পরে নিজেই স্বীকার করেছিলেন বিরিয়ানির কাহিনী আবেগকে উস্কে দিতে করেছিলেন তিনি। যদিও ততদিনে বিজেপির নির্বাচনী ফায়দা তোলার কাজ সারা হয়ে গিয়েছিল।

আজমল কাসভকে ফাঁসিতে ঝোলানোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (Special PP) উজ্জ্বল নিকমের (Ujjwal Nikam)। তার পুরস্কারও ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিলেন তিনি। মুম্বই নর্থ সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে উজ্জ্বল নিকমকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। যদিও তিনি কংগ্রেস প্রার্থী বর্ষা গায়কোয়াড়ের কাছে পরাজিত হন। লোকসভার সাংসদ পদ হাতছাড়া হওয়ায় এবার রাজ্যসভার সাংসদ পদ তাকে উপহার দিতে চলেছে বিজেপি।

শুধুমাত্র উজ্জ্বল নিকম নন, প্রত্য়াশিতভাবে এবার রাজ্যসভার (Rajyasabha) আসন পেতে চলেছেন প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা (Harsh Vardhan Shringla)। ২০২৩ সালে ভারতে জি-২০ সম্মেলন আয়োজন করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শ্রিংলার। দীর্ঘ সময় আমেরিকা, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডের মতো দেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ায় তাঁর পক্ষে জি-২০-র (G-20 Summit 2023) মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করা সহজ ছিল। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ অশান্তির পরিস্থিতিতে শ্রিংলার মধ্যস্থতার আভাস রাজনৈতিক মহল থেকে পাওয়া গিয়েছিল। এবার রাজ্যসভার মঞ্চ থেকে সরাসরি ভারতকে বাংলাদেশ ইস্যুতে সাহায্য করতে পারবেন হর্ষবর্ধন।

পাশাপাশি কেরলে বিজেপির মাটি শক্ত করার চেষ্টা লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই করে চলেছে বিজেপি। সেখানে বাম ও কংগ্রেসের দুর্বলতা এবং সমন্বয়ের অভাবকে হাতিয়ার করে ক্রমশ সাংসদ সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে চলেছে নরেন্দ্র মোদির দল। ১৯৯৪ সালে সেখানে সিপিআইএম-এর হামলায় দুই পা হারিয়ে ছিলেন শিক্ষক তথা বিজেপি কর্মী সি সদানন্দন মাস্টার (C Sadanandan Master)। তাঁকেই রাজ্যসভার জন্য মনোনয়ন করে কেরালার রাজনীতিকে ঘোরানোর চেষ্টা বিজেপির।

আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লুর স্টেশনের কাছে ট্রেনে ভয়াবহ আগুন, লাইনচ্যুত তিনটি বগি!

দিল্লি থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনিত করা হল পদ্মশ্রী ইতিহাসবিদ মীনাক্ষি জৈনকে (Meenakshi Jain)। ২০২০ সালে মীনাক্ষি জৈনকে পদ্মশ্রী (Padmasree) দিয়েছিল মোদি সরকার। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপিকা উত্তরপ্রদেশ থেকে উত্তর ভারতের একাধিক ভারতীয় স্থাপত্যের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যায় বিজেপি সরকারের পক্ষে তথ্য তুলে ধরে সাহায্য় করেছেন। তাই পদ্মশ্রীর পরে এবার সোজা রাজ্যসভার পদ।
–

–

–
–
–
–