ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালেও বুধবার পাঞ্চেত ও মাইথন ড্যাম থেকে আরও বেশি মাত্রায় জল ছাড়ল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। এই অতিরিক্ত জলছাড়ের ফলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ফের জলমগ্নতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষত হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরে নদী ও খালবিলগুলিতে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে।

ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে বুধবার দিনভর ৩৭ হাজার কিউসেক এবং মাইথন ড্যাম থেকে ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। অর্থাৎ দুই ড্যাম মিলিয়ে মোট ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে রাজ্যের দিকে। এর ফলে দামোদর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক অতীতেই বৃষ্টিপাত ও ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা প্লাবিত হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য প্রশাসন নবান্ন থেকে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জেলাভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে ডিভিসির আরও জলছাড় প্রশাসনের মাথাব্যথা আরও বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের ক্ষোভ তীব্রতর হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ডিভিসি এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন?” তাঁর দাবি, “১৫ বছর ধরে আমরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে, নীতি আয়োগের বৈঠকেও এই বিষয়ে কথা হয়েছে, তবুও কোনও ফল মেলেনি।”

রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ওয়েস্ট ডিভিশন) ইতিমধ্যেই পরপর ইমেইল পাঠিয়েছেন ডিভিসিকে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারগুলির জল ধারণ ক্ষমতা থাকলেও কেন টানা জল ছাড়া হচ্ছে?” মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকাল—এই দুই সময়েই নবান্নের তরফে ডিভিসিকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, “ডিভিসির জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ার ফলে রাজ্যে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে ডিভিসিকেই।”

রাজ্য বনাম কেন্দ্রের এই জলবিভাজন রাজনীতির জেরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যে আরও বাড়বে, সে বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞ মহল। এখন দেখার, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না।

আরও দেখুন – নদী পার হওয়ার সময় আচমকা হড়পা বান! কোনক্রমে বাঁচলেন বাসযাত্রীরা

_

_

_

_
_
_
_
_