Friday, November 14, 2025

কাহার-বেহেরাদের কাঁধে চড়ে বিসর্জনের পথে যান স্বামী ব্রহ্মানন্দের ঘোষ বাড়ির দেবী

Date:

বাংলার (West Bengal) প্রতিটি কোণায় রয়েছে দুর্গাপুজোর (Durga Pujo) নানা রীতি। কোথাও বিশেষত্ব ভোগে, কোথাও প্রতিমায় তো কোথাও আচারে। তেমনই বসিরহাটের (Basirhat) ট্যাট প্রাণিবাসী রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন হয় কাহার সম্প্রদায়ের বেহেরাদের কাঁধে চড়ে। সালটা ১৫৮০। হয়তো সবে মাত্র ভারতে পদার্পণ ব্রিটিশরা (British)। এই সালেই হুগলির (Hoogli) আকনা গ্রামের ঘোষ বংশের সপ্তদশ বংশধর সদানন্দ ঘোষ বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন বসিরহাটের ট্যাট প্রাণিবাসী রায়চৌধুরী বাড়ির কন্যার সঙ্গে। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে যখন জব চার্নকের (Job Charnak) কলকাতা (Kolkata) ছিল ক্যালকাটা, বয়স ছিল মাত্র ১০বছর। বসিরহাটের শিকড়া কুলিনগ্রামে সেই সালেই গোল পাতায় ছাওয়া মাটির আটচালায় দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন ঘোষ বংশের দেবীদাস ঘোষ (Devidash Ghosh)। পরবর্তীতে ১৮১০ থেকে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কালীপ্রসাদ ঘোষ পাঁচ খিলান যুক্ত পাকা দুর্গা দালান নির্মাণ করেন। তারপর থেকে সেই দুর্গাদালানেই দেবী দুর্গার আরাধনা হয়ে যাচ্ছে।১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ এই ঘোষ বংশেই আনন্দমোহন ঘোষ ও হেমাঙ্গিনী দেবীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস ঘোষ, যিনি পরবর্তীতে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মানসপুত্র ও স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাই স্বামী ব্রহ্মানন্দ হিসেবে পরিচিত হন। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, বালক রাখাল দুর্গাদালানের দেবী দুর্গার রূপ দেখে ধ্যাবনস্থ হতেন। অনতিদূরে বোধন তলায় সহপাঠীদের সঙ্গে তিনি মেতে উঠতেন পুজো পুজো খেলায়। বোধনতলার চারপাশে ঘুরে ঘুরে তিনি শ্যামাসংগীত গাইতেন। পরবর্তীকালে শিকড়া কুলিন গ্রামে এসে বোধন তলায় হেমাঙ্গিনী দেবীকে আভূমি প্রণাম জানিয়েছিলেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে স্বামী ব্রহ্মানন্দের জন্মভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় শিকড়া কুলিন গ্রাম রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। আরও পড়ুন : রোদবৃষ্টির বিশ্বকর্মা পুজো, উত্তরে কমলা সর্তকতা -দক্ষিণে বাড়ছে অস্বস্তি!স্বামী ব্রহ্মানন্দ তার পরিবারের সদস্য দের জানিয়েছিলেন, “দেখিস এই পুজো যেন বন্ধ না হয়।” তাঁর কথা মেনেই এই বংশের উত্তরপুরুষরা এখনও পর্যন্ত সমস্ত রকম প্রথা মেনে এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করে থাকেন। রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই বংশের সদস্যরা পুজোর সময় ফিরে আসেন বাড়িতে।

মহালয়ার পর প্রতিপদে পুজোর সূচনা হিসেবে বসে দেবীর ঘট। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন। মহাসাড়ম্বরে বংশের প্রথা এনে হয় মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী ও মহানবমীর পুজো। মহাষ্টমীর দিন ভক্তদের জন্য থাকে লুচি ভোগের আয়োজন। মহাদশমীতে দুর্গাপুজোর সমস্ত রকম রীতি মেনে পুজো সম্পন্ন হওয়ার পরে কাহার সম্প্রদায়ের বেহারাদের কাঁধে চেপে মা দুর্গার কৈলাস যাত্রা শুরু হয়। দেবীর মৃন্ময়ী রূপকে স্থানীয় একটি পুণ্যপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রাচীন ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে সমস্ত রকম রীতিকে পাথেয় করে স্বামী ব্রহ্মানন্দের এই পুজোকে এখনো ঐতিহ্যবাহী করে রেখেছে সমগ্র শিকড়া কুলিন গ্রাম।

Related articles

সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানি! গ্রেফতার RG Kar আন্দোলনের ‘বিপ্লবী’ ডাক্তার

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে। ঘটনায় গ্রেফতার বারাসাত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের...

আন্দুল রোডে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড! ভস্মীভূত দুই স্পঞ্জ কারখানা 

রাতের হাওড়ায় ভয়াবহ আগুনে কার্যত ছারখার হয়ে গেল আন্দুল রোডের পাশে হাঁসখালি পোল এলাকার দুটি স্পঞ্জ তৈরির কারখানা।...

সোনারপুরে শুরু হচ্ছে প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে নিউমোনিয়া ও ফ্লু টিকাকরণ কর্মসূচি

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে রাজ্যজুড়ে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই রোগ অনেক সময় প্রাণঘাতী...

প্রকাশিত হল আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি

প্রকাশিত হল আগামী বছরের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি। কাউন্সিলের তরফে এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি...
Exit mobile version