সাহারা থেকে থেকে ড্রিম ১১। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) কোষাগার ভরিয়েছে স্পনসররাই। বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ডের তকমা পাওয়া বিসিসিআইয়ের দম্ভের স্তম্ভ শাঁসালো স্পনসররাই। কিন্তু স্পনসর বাছাইয়ে আদৌও নীতি নৈতিকতা মানেন বিসিসিআই কর্তারা? সাহারা, বাইজুস, ড্রিম ১১ ভারতীয় দলে তিন কলঙ্কিত স্পনসরকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সাহারা আর্থিক কেলেঙ্কারি ইতিহাস সবার জানা, বাইজুস দেউলে খাতায় নাম লিখিয়ে লাটে উঠে গিয়েছে আর যুব সমাজকে ধংস্ব করা অন লাইন গেমিং নামে জুয়া কোম্পানি ড্রিম ১১, যাদের কেন্দ্র বৈআইনি ঘোষণা করেছে। জয় শাহদের স্পনসরনীতি নিয়ে প্রশ্ন অনেক।

বিজয় মালিয়া, নীরব মোদীরা দোষী হন কিন্তু বোর্ড কর্তাদের কোনও দায়ই থাকে না সাহারা- ড্রিম ১১-র মতো কোম্পানিকে নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু জয় শাহদের মতো বোর্ড কর্তাদের কেন তদন্তের আওতায় আসবেন না? বোর্ড কর্তারাই কলঙ্কিত স্পনসর এলে ক্রিকেটারদের দিয়ে প্রচার করান।

মাঠে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের উত্থান পতন হয়েছে কিন্তু স্পনসরদের টাকার অঙ্কের গ্রাফ উপরের দিকেই উঠেছে। একটু গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে বোর্ডের স্পনসর নীতি গঙ্গার মতো পবিত্র নয় বরং বেশ পঙ্কিল। মূলত ৯০-র দশকের শুরুতেই দেশজুড়ে আর্থিক উদারীকরণ ঘটে। খোলা হাওয়ার মতোই তা প্রবেশ করে বিসিসিআইতেও। ক্রিকেট শুধু ভারতের এক নম্বর খেলা নয়, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সর্বজনপ্রিয় একটা ধর্ম। কিন্তু মানুষের এই অন্ধ আবেগকে পুঁজি করেই বোর্ডের কোষাগার ভরিয়েছেন কর্তারা।

১৯৯০-র দশকে ভারতীয় দলের প্রথম স্পনসর হয় আইটিসি লিমিটেড। ২০০১ পর্যন্ত তাদের লোগোই থাকত ভারতীয় দলের জার্সিতে। টেস্ট ম্যাচ পিছু ৩৫ লক্ষ এবং ওডিআই ম্যাচ পিছু ৩২ লক্ষ টাকা দিতে আইটিসি।ভারত সরকার তামাক পণ্য নিয়ে কড়াকড়ি করলে আইটিসি অধ্যায় সমাপ্ত হয়।

এরপর সিহরন জাগিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আর্বিভাব হয় সাহারার (Sahara)। ২০০১ থেকের ২০১৩ পর্যন্ত তারাই ছিল মূল স্পনসর।লক্ষ থেকে কোটিতে চলে যায় টাকার অঙ্ক। সাহারা ৩.৩৪ কোটি টাকা ম্যাচ পিছু বোর্ডকে দিত। কিন্তু আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যায় সাহারা। জেলে যান মালিক সুব্রত রায়।

সাহার পর স্টার(Star) হয় ভারতীয় দলের মূল স্পনসর। ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ধোনি-কোহলিদের জার্সিতে জ্বলজল করত স্টারের নাম। এরপর চিনা মোবাইল কোম্পানি ওপো (Oppo) ভারতীয় দলের স্পনসর। কিন্তু তারা বিদায় নেওয়ার পর ২০১৯ বাইজুস (Byjus) আসে স্পনসর হয়ে। এডুকেশন অ্যাপটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের স্পনসর। কার্যত দেউলিয়া হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে চুক্তি ভঙ্গ করে বাইজুস।

২০২৩ সাল ৩৫৮ কোটি টাকার চুক্তি করে ভারতীয় দলের স্পনসর হয় অন লাইন গেমিং অ্যাপ ড্রিম ১১(Dream 11)। কিন্তু কেন্দ্র দেশজুড়ে অন লাইন গেমিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করতেই ড্রিম ১১ খসে গেল ভারতীয় দলের জার্সি থেকে। ৫৭৯ কোটি টাকার চুক্তি করে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতীয় দলের নতুন স্পনসর অ্যাপালো টায়ার্স।

এতো গেল নিছক তথ্য পরিসংখ্যান। একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে ভারতীয় দলের স্পনসরদের বোধনটা ভালো হলেও বিদায়টা হয়েছে একরাশ বিতর্ক ও লজ্জাকে সঙ্গী করেই। সাহারা থেকে ড্রিম ১১ ট্রাডিশান অব্যাহত।মানুষের চোখের জলের আর্থিক প্রতারণা সংস্থা থেকে যুব সমাজকে ধংস্বের পথে ঠেলে দেওয়া ড্রিম ১১ কে কেন স্পনসর হিসাবে নেন জয় শাহরা? বোর্ডের ক্ষমতায় থাকা কর্তারা কি কোম্পানির ইতিহাস না জেনেই তাদের স্পনসর করে? নাকি দেশে-বিদেশে কোম্পানি কম পড়িয়াছে! আসলে মাঠের বাইরের ক্রিকেটটা বড্ড নোংরা সেখানে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট স্বার্থান্বেষী শাহদের দাপট।

আসলে মুনাফার লোভে জয় শাহরা নীতি আদর্শের ধার ধারেন না লাভ হলেই হল।আসলে ক্রিকেট নিয়ে মানুষের উইক( পড়ুন আবেগ) পয়েন্টাই তো অমিত পুত্রদের ক্যাশ পয়েন্ট(পড়ুন আয়ের উৎস)। ক্রিকেট ভদ্র লোকের খেলা ওসব ইতিহাসের পাতায় ভালো লাগে, অডিটের খাতায় নয়। টাকা না থাকলে আইসিসিতে ক্ষমতায় আসা যাবে না ফলে নীতি নৈতিকতা বিদায় জানিয়ে জয় শাহরা বার বার বেছে নেন সাহারা-ড্রিম ১১কে। ভারতীয় দলের মাধ্যমে তাদের প্রচার প্রসার ঘটান। টাকার সঙ্গে প্রাপ্তি লজ্জাও!
ঠেলায় পড়ে শিক্ষা হয়ত নিয়েছে বিসিসিআই, তাই অন লাইন গেমিং, ভুইফোর আর্থিক সংস্থাকে স্পনসরশিপ থেকে দূরে রেখে বিসিসিআই। অ্যাপেলোর মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান নতুন স্পনসর হয়েছে। বিসিসিআইয়ের বিলম্বিত বোধদয়। কিন্তু কলঙ্কের কালি আর কি উঠবে!