বাঙালির নস্টালজিয়া মানেই উত্তমকুমার। বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রতীক কিন্তু আজও সেই ‘নায়ক’ উত্তম কুমার। তাঁর ব্যক্তিত্ব, অভিনয়শৈলী প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বিদ্যমান। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও তাঁকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সিনে প্রেমীদের। জন্মশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করে এবার একটি উৎসবের আয়োজন করল দিল্লির প্রবাসী বাঙালিরা। দিল্লি বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে ‘উত্তম একাই একশো’ দু’ দিনের উৎসব শেষ হল রবিবার।

এবারের এই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। তিনি এদিন বাঙালি জীবনে উত্তমকুমারের উপস্থিতি ও ব্যক্তিত্বের কথা জানিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করলেন। এদিন অভিনেত্রী বলেন উত্তমকুমারকে নিয়ে এমন উদ্যোগ তাঁর খুব ভাল লাগছে। দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, মুক্তধারা অডিটোরিয়াম পুরোটাই ‘উত্তমময়’ হয়ে উঠেছে। ফ্লেক্স, কাট-আউট দিয়ে সাজানো হয়েছে। শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ”স্বামী, প্রেমিক, সন্তান যে চরিত্রেই অভিনয় করুন না কেন—সব চরিত্রেই, সাবলীল অভিনয় করতেন উত্তমকুমার। তাঁর ছিল নিজস্ব স্টাইল, তারকাসুলভ গুণ। যাকে বলে উত্তম ক্যারিশমা।” এখানেই শেষ নয়, উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনয় জীবনের বেশ কিছু ছোট গল্প শুনিয়েছেন শর্মিলা। বিভিন্ন ছবিতে অভিনয়ের কথাও উঠে আসে।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোহিনী ঘোষ শর্মিলার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি অভিনেত্রী এদিন মঞ্চ থেকে দর্শকদেরও প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। অভিনেতার অভিনয় ও জনপ্রিয়তা নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমার উত্তম’ পর্বে অনেক ধরণের আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস, তপতী মুখার্জি, কবিতা ব্যানার্জি ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সঞ্চালনায় ছিলেন গোপা বসু। সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন শিলাদিত্য ভট্টাচার্য ও পিয়ালি হালদার।

অ্যাসোসিয়েশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক রাহুল মুখার্জি জানালেন, আজও বাঙালিরা উত্তম নিয়ে নস্টালজিক। অনুষ্ঠান উপলক্ষে ‘ডোনার কার্ড’ ও উত্তমকুমার অভিনীত ছবি নিয়ে তৈরি বিশেষ ফ্রিজ ম্যাগনেট বিক্রির মাধ্যমে যে অর্থ জোগাড় করা হয়েছে সেটা দেওয়া হবে ‘অঙ্কুর’-এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য। তবে উত্তম কুমারের সিনেমা ছাড়া যেকোন অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ সেই কথাও এদিন স্পষ্ট হয়ে গেল। উৎসবে দেখানো হয়েছে ‘নায়ক’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘জতুগৃহ’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘সপ্তপদী’ ও ‘শেষ অঙ্ক’।

বর্তমানে দিল্লিতে প্রায় ১৬ লাখ বাঙালি থাকে। তাদের মধ্যে উত্তমকুমারের প্রতি অবিচল ভালোবাসা ও উন্মাদনা আরও একবার প্রকাশ্যে এল। পরবর্তী প্রজন্মকে উত্তমকুমারের ছবিব সঙ্গে পরিচিত করানো ছিল এই উৎসবের উদ্দেশ্য। বলা যায় বাঙালির দুর্গাপুজোর আগেই হয়ে গেল মহানায়ক পুজো। এই প্রসঙ্গে দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরাংশু সিংহ জানিয়েছেন মহানায়ক আগেও এক নম্বরে ছিলেন, আগামী দিনেও থাকবেন। জন্মশতবর্ষের শুরুতে ‘উত্তমকুমার একাই একশো’ অনুষ্ঠানটিকে উত্তম ফ্যান ফেস্টিভ্যাল হিসেবেই হন্য করছেন তারা।

–

–

–

–

–
–
–