একদিনে আড়াইশো মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছিল শহরকে, মঙ্গলের সকালের কল্লোলিনীর ছবিটা এখনও ভুলতে পারছে না বইপাড়া। জলমগ্ন কলেজ স্ট্রিটে (College Street) ভেসেছে, ভিজেছে কোটি কোটি টাকার বই! জল ঢুকে বিকল বেশ কয়েকটি ছাপাখানার মেশিনও। পুজোর মুখে এই ক্ষতি সামাল দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? চোখে জল বিক্রেতাদের, চিন্তায় প্রকাশকরা।

মহানগরীর বইপাড়ায় (College Street Area) বৃষ্টি মরশুমে জলজমাট ছবি নতুন নয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি যেন ছাপিয়ে গেল সবকিছু। তুলনায় আসছে আটাত্তরের বন্যার কথাও। সেপ্টেম্বরের প্রায় শেষ লগ্নের দুর্যোগে, দুর্ভোগের ছবি কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে। তবে সেটা জলমগ্নতার জন্য নয় কারণ লক গেট খোলার পরই শুকনো-খটখটে হয়েছে রাস্তা। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। জলে ভিজে নষ্ট কোটি কোটি টাকার বই। তালিকায় পূজাবার্ষিকী, কমিক্স, খেলাধূলা, বোর্ড পরীক্ষার বই, পড়াশনার সরঞ্জাম। মঙ্গলবার ভোররাতের বৃষ্টিতে জলে ডুবে বিকল হয়ে গিয়েছে একাধিক ছাপাখানার যন্ত্রও। প্রকাশকরা বলছেন, “এই ক্ষতি এড়াতে মা দুর্গাই ভরসা!”

দীপ প্রকাশনের (Deep Prakashan) কর্ণধার দীপ্তাংশু মণ্ডল বলেন, “পুজোর মুখে নতুন প্রকাশ পাওয়া দু’টি বই হটকেকের মতো বিক্রি হচ্ছিল। মহাস্থবির জাতক, আলো আঁধারির গোপাল পাঁঠা ভিজে দফারফা।প্রায় তিন লক্ষ টাকার বই জলে ভিজে শেষ।” কোথাও বইয়ের পাতা ছিড়ে গেছে কোথাও বা জল ঢুকে মলাট ফুলে গেছে। ছোটখাটো প্রকাশকরা এখনও ভাবতে পারছেন না এরপর কী হবে। রোজ ঝলমলে আকাশে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে কলকাতা। কিন্তু বইপাড়ায় মন খারাপের সুর। ধ্যানবিন্দু প্রকাশনার অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avik Banerjee) বলছেন, ‘প্রায় ৬০ হাজার টাকার লিটল ম্যাগাজিন জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’ এটাই কলেজ স্ট্রিটের এই মুহূর্তের ছবি। পুজোর মুখে এত বড় ক্ষতি সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। বই ভিজে এমন অবস্থা, তা বিপুল ছাড়েও বিক্রি করা যাবেনা। এই প্রসঙ্গে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের (Tridib Chatterjee) কথায় বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকাশনা সংস্থা ইন্সুরেন্স ক্লেম করেছে। পত্রভারতীর সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ছোট বিক্রেতাদের অনেকেরই আধার কার্ড নেই, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা করা যাবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। একদিকে যখন শারদ আকাশে আগমনীর আনন্দ তখন শহরের বুকে মা সরস্বতীর খাস তালুকে বিষাদের সুর। মন খারাপ বইপ্রেমীদেরও।

–

–

–

–

–

–

–