দুর্গাপুজোয় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো

Date:

Share post:

শুভদীপ চক্রবর্তী, অফিসার ইন চার্জ, হোমিসাইড স্কোয়ার্ড, গোয়েন্দা বিভাগ, লালবাজার

দিদা যখন বেঁচে ছিল তখন দুর্গাপুজোর আগে থেকেই একটু একটু করে আমাদের মামাবাড়ির দেওয়ালগুলোর মধ্যে অদ্ভুত একটা পুজো পুজো গন্ধ জেগে উঠত। সারা বছরের খসে পড়া ক্লান্তির ঘোর সরিয়ে, টাটকা গন্ধে জীবনতলায় আগরবাতি দিয়ে, নতুন আশা ভিজিয়ে, উদযাপনের ইমারত গড়ে নেয়ে ধুয়ে বসে পড়তাম পুজোর শিউলি গন্ধ নিতে।

ওই কয়েকটা দিন সকাল-বিকেল-সন্ধে পাড়ার প্যাণ্ডেলে শুয়ে-বসে-গড়িয়ে কাটিয়ে দিতাম। মাঝে দুপুরে দিদার হাতের ভাত, মুগডাল, আলুরচোখা, বেগুনপোস্ত, আর টমেটোর টক। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেরিয়ে এটা-ওটা-সেটা খেয়ে সময় বয়ে যেত হৈহৈ করে। ওই সময়ে মামাবাড়ির ঘর, বারান্দা, উঠোন, মন্দিরের দালান ঝকমক করত আল্পনায়। পুজোর আবেশ পিঠে নিয়ে বয়ে চলা বাতাস ম ম করত মায়াময় এক মেঠো গন্ধে।

রাত ঘন হলে, চাঁদের আলো নরম হয়ে ওঠে। আর ঠিক তখনই আমরা সবাই মিলে উঠোনে একসঙ্গে বসে গল্প করতাম। কে নেই সেই আড্ডায়? আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই থাকত। রামায়ণ, মহাভারতের গল্প থেকে শুরু করে উত্তম-সুচিত্রায় এসে শেষ হত। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গোগ্রাসে এক এক করে গিলে ফেলতাম সেইসব গল্পগুলো। দূরে মণ্ডপে তখন বাজছে, ‘আমার মনের এই ময়ূরমহলে এসো আজ প্রেমের আতর ঢেলে দাও’।

কলকাতা পুলিশে আমাদের ভূমিকা অনেকটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো। মূল প্রসেসকে সঙ্গত করাই প্রধান কাজ। গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার পুরোনো ঐতিহ্যকে আজও আমরা বহন করে চলেছি সুনামের সাথে। যেকোনো ধরণের আন-ন্যাচারাল ডেথ কেসের তদন্তের মাধ্যমে রহস্যের উন্মোচন ঘটানোই এই শাখার অফিসারদের প্রধান কাজ। আর সেই ট্র্যাডিশনে মেনেই কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া সাড়া জাগানো মার্ডার কেসগুলো ডিটেক্ট করে অপরাধীদের সাজা করিয়ে চলে এই শাখার অফিসারেরা। পুজোর দিনগুলোতেও আমরা ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ এর পাশাপাশি তদন্তের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাই নিরলস ভাবে। পুজোর এই আনন্দ ঘন মুহূর্ত গুলোতে রাত গভীর হলে, মণ্ডপগুলোতে একে একে জ্বলে ওঠে আলো।

আজও ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে আসে বারবার। দিদা আজ অনেক দূরে অচেনা মেঘেদের বিছানার ভিতর গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন আছে। আর আমি পুলিশের পোশাকে পুজোর কোলাহল মেখে একলা মনের দালানে আল্পনা দিয়ে যাই নিঃশব্দে। ঢাকের শব্দ কানে নিয়ে দর্শনার্থীদের ঢল নামলে না জানি কেন অচেনা মানুষজনের ভিড়ে নিজেদের স্ত্রী আর সন্তানদের মুখগুলো মনে করে আজও মনখারাপির নোনা জল মাখি আর মানুষের সেবায় ব্রতী হয়ে নিজেদেরকে বলি – ‘All Izz Well’, ‘All Izz Well’.

আরও পড়ুন – তামিলনাড়ুতে বিজয়ের সমাবেশে পদদলিত হয়ে প্রাণ গেল ৩১ জনের, আহত বহু 

_

 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

চাপ দিয়ে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়: বিস্ফোরক নারদ মামলার প্রথম তদন্তকারী CBI আধিকারিক

বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি নারদ (Narada Case) মামলার প্রথম তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিক রঞ্জিত কুমারের (Ranjit Kumar)। একটি অডিও সাক্ষাৎকারে তিনি...

ছটপুজোয় বন্ধ থাকবে রবীন্দ্র – সুভাষ সরোবর, বিকল্প ঘাটে আয়োজনের প্রস্তুতি 

ছটপুজো উপলক্ষে এ বছরও সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হবে রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর। জলদূষণ রোধ ও পরিবেশ...

বোনের কাছে ভাইফোঁটা শোভনদেবের, টলিনায়িকারা ফোঁটা দিলেন অরূপকে

বাংলা জুড়ে আজ উৎসবের আমেজ। সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রেটি সকলেই মাতলেন ভাইফোঁটা উদযাপনে। সকাল গড়িয়ে বিকেল তবু এখনও...

জলাভূমির গুরুত্ব বোঝাতে নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার গড়া হবে নলবনে

পূর্ব কলকাতা (East Kolkata) জলাভূমির পরিবেশগত গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নলবন (Nalban) ভেরিতে একটি প্রকৃতি...