একের পর এক অভিযোগ। বিক্ষোভ, প্রাণহানি বিএলও-দের। তারপরেও রাজ্যে এসআইআর-এর গা-জোয়ারি অব্যাহত। সেই নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া (SIR) খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার কলকাতায় পৌঁছেছেন উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী (Gyanesh Bharati)। তাঁর নেতৃত্বে যে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল কলকাতায় আসে তাঁরা মঙ্গলবারের বৈঠকেই স্পষ্ট করে দেন, ইনিউমারেশন ফর্ম (enumeration form) মৃত বা ভুয়ো ভোটারের নামে জমা হলে তার দায় থাকবে বিএলও-দের (BLO)।
মঙ্গলবার শহরে পা দিয়েই জ্ঞানেশ ভারতী নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়াল, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং দুই জেলার ইআরওদের (ERO) সঙ্গে বিস্তারিত বৈঠক করেন। এরপর আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরের কনফারেন্স রুমে আরেক দফায় আলোচনায় বসেন কমিশনের কর্তারা।
সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar) যে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার কলকাতায় পা রেখেই সেই একই সতর্কবার্তা আরও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী। তিনি পরিষ্কার বলেন, মৃত ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার বা ভুয়ো ভোটারের নাম কোনও অবস্থাতেই ভোটার তালিকায় থাকা চলবে না। এ ধরনের কোনও ভুল ধরা পড়লে তার জন্য বিএলও-র পাশাপাশি সিইও পর্যন্ত সবাই দায়ী থাকবেন। রেয়াত কোনও অবস্থাতেই নয়।
বৈঠকে জ্ঞানেশ ভারতী জানান, যেখানে বিএলএ (BLA) ফর্ম পূরণ করে বিএলওর (BLO) হাতে তুলে দিচ্ছেন, সেখানে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩১ নম্বর ধারায় তাঁদের লিখিত দিতে হচ্ছে—ফর্মে কোনও ভুল বা মিথ্যে তথ্য থাকলে তার সম্পূর্ণ দায় তাঁদেরই। এরপর বিএলও সেই ফর্ম মোবাইল অ্যাপ (BLO App) দিয়ে স্ক্যান করে কমিশনের (Election Commission) পোর্টালে আপলোড করবেন। আর এখানেই শুরু হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—এআই-নিয়ন্ত্রিত (AI based) বিশেষ অ্যাপ। কমিশনের তৈরি এই নতুন অ্যাপ (BLO App) এক নিমেষে ফর্মে থাকা যে কোনও অসংগতি ধরে ফেলবে। যেখানে সমস্যা চিহ্নিত হবে, সেখানকার সংশ্লিষ্ট ভোটারকে তৎক্ষণাৎ ডেকে পাঠানো হবে।
নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানান, শুধু বিএলএ বা বিএলও নন, কোনও ভোটার ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বা মিথ্যে তথ্য দিলে তাঁর বিরুদ্ধেও কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিহারের পরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বারোটি রাজ্যে চলা এসআইআর প্রক্রিয়ায় কমিশন কোনও ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করতে নারাজ—বৈঠকে এমনটাই স্পষ্ট করে জানান জ্ঞানেশ ভারতী। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন ও নির্দেশ যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে হবে, নচেৎ বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন : ‘নিয়মের বাইরে’ কাজের চাপ: এবার আন্দোলনে CEO দফতরে রাজ্যের BLO-রা
এসআইআরের কাজ নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েই কমিশন জানিয়ে দিয়েছে— আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ১০০ শতাংশ স্বচ্ছতা বজায় রেখে এক নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। এখন দেখার বিষয়—কড়া নজরদারি, এআই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কঠোর নির্দেশিকা সত্ত্বেও আদৌ কি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সত্যিকারের ‘ত্রুটিমুক্ত’ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
–
–
–
