Saturday, August 23, 2025

মহাযুদ্ধে মোদি, প্রচারে একসঙ্গে ২৪০ সাংসদ! কণাদ দাশগুপ্তের কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

উল্টোদিকে কোনও জাতীয় দল নেই৷ মিসকলে ‘বিশ্বের বৃহত্তম দল’ বলে দাবি করা বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় রাজনীতিতে নবীন একটি দল৷ তাতেই গেরুয়া শিবিরের ‘নিদ্রা গিয়াছে টুটি৷’

দিল্লিতে জাতীয় কংগ্রেস বা বামেরা কার্যত লড়াইয়েই নেই৷
আর ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আম আদমি পার্টি’ একাই দিল্লির ভোটে বেআব্রু করে চলেছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-কে৷

অথচ রাজনীতিতে ডাকসাইটে কোনও নেতাকেই দিল্লিতে আপ- এর হয়ে প্রচারে দেখা যায়নি৷ মুখ একটাই, অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ এই ‘মাফলার-ম্যান’-ই দিল্লিতে বিজেপির কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন৷ না হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সব কাজ ফেলে কেন ঝাঁপাবেন একটি উপ-রাজ্যের ভোট- বৈতরনী পার হতে৷ মোদি-শাহ যখন নেমেছেন, তখন গেরুয়া শিবিরের বাকি নেতারা চুপ করে বসে থাকতে পারেন না৷ বসে নেইও৷ দিল্লির বিভিন্ন পকেটে একাধিক রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মানুষ বসবাস করেন৷ বিজেপি সেই সব রাজ্য থেকে বাছাই করা নেতা তুলে এনে দিল্লিতে জড়ো করেছে মাসখানেক আগে থেকেই৷ পেশাদার একাধিক এজেন্সি বিজেপির প্রচার কাজ পরিচালনার দায়িত্বে৷ সেই সব এজেন্সির ঠিক করা কর্মসূচি অনুসারে বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতা-সাংসদরা পৌঁছে যাচ্ছেন দিল্লিতে থাকা তাঁদের রাজ্যের মানুষদের কাছে৷ নিবিড় জনসংযোগ চলছে৷ ওদিকে বড় সমাবেশে মোদি-শাহ সমানে তোপ দেগে চলেছেন আপ’কে লক্ষ্য করে৷ মোটের উপর দিল্লি ভোটকে বিজেপি এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্ব দিয়েই মাঠে নেমেছে৷ দিল্লি এবার চাই-ই৷ বামপন্থীদের কাছ থেকে স্লোগান ধার নিয়ে পর্দার আড়ালে হয়তো বা বলছেও, “এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে”৷

কিন্তু দিল্লির ভোটের- জমিতে এই ভাবে ট্রাক্টর চালিয়েও বিজেপি কি ঘরে সন্তোষজনক ফসল তুলতে পারবে? সরকারিভাবে এর উত্তর মিলবে ১১ ফেব্রুয়ারি ৷

ভোট পূর্ববর্তী একাধিক জাতীয়স্তরের ‘ওপিনিয়ন-পোল’ বলছে, বিজেপির কাছে এবারও “দিল্লি দুরস্ত”৷ ভোট ঘোষনার দু’দিন পর-ই ‘সি-ভোটার’- এর জনমত সমীক্ষা জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লির ৬৯.৫% মানুষ অরবিন্দ কেজরিওয়লকেই চাইছেন৷ ২০১৫-র দিল্লি ভোটে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে আইপিএস কিরন বেদি’র নাম ঘোষনা করেছিলো৷ ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপি’র এক ‘দুর্গ’ আসনে প্রার্থী হওয়া কিরন বেদি-কে আপ-প্রাথী হেলায় হারিয়ে দিয়েছেন৷ তাই বিজেপি এবার দিল্লিতে ‘মুখহীন’৷ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর বিজয়ী বিধায়করা বসে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন বলে বিজেপি জানিয়েছে৷ তাই সি-ভোটাররের সমীক্ষায় কেজরিওয়ালের বিপক্ষে একজন বিজেপি-মুখ্যমন্ত্রী রাখা সম্ভব হয়নি৷ সমীক্ষায় রাখা হয় ৪ বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী- পদপ্রার্থীকে৷ তা, দিল্লির ভোটাররা কী বললেন ? যেখানে কেজরিকে ৭০% মানুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চাইছেন, সেখানে বিজেপি’র ডাঃ হর্ষ বর্ধনকে চাইছেন ১০.৭% মানুষ, বিজয় গোয়েলকে চাইছেন ১.১% মানুষ, দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তেওয়ারিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছেন ১% মানুষ, বিজেন্দ্র গুপ্তাকে ০.৪% মানুষ৷
‘সি-ভোটার’-এর ‘Vote Share Projection’- এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আপ যেখানে ৫৩.৩% ভোট পেতে চলেছে, সেখানে বিজেপির প্রাপ্তি ২৫.৯% ভোট৷

এতো গেলো এক মাস আগের জনমত সমীক্ষা৷ মাঝের এক মাসে যমুনা দিয়ে কয়েক হাজার গ্যালন জল গড়িয়েছে৷ মোদি এবং শাহ চোখা চোখা শব্দ ব্যবহার করে আপ ও কেজরিকে বিঁধেছেন এই সময়সীমায়৷ তার পর, গত সোমবার, ‘টাইমস-নাও’-এর জনমত সমীক্ষার প্রকাশিত হয়েছে৷ কী বলেছে সেই সমীক্ষা ? মোদি-শাহের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিজেপি কতখানি এগোতে পারলো? ‘টাইমস নাও’ -এর Vote Share Projection’ বলছে, আপ যেখানে ৫২%, বিজেপি সেখানে কিছুটা উন্নতি করে দাঁড়িয়েছে ৩৪%-এ৷ যে গতিতে বিজেপি এগিয়েছে, দিল্লির ভোট যদি ফেব্রুয়ারি-র ৮ তারিখ না হয়ে মার্চ বা এপ্রিলের ৮ তারিখে হতো, তাহলে হয়তো বিজেপি আরও এগিয়ে ছুঁয়ে ফেলতে বা অতিক্রম করতে পারতো আপ-কে৷ জানি না শেষ মুহুর্তে ‘জাতীয় স্বার্থে’ ভোট পিছানো সম্ভব কি’না৷

বিজেপি এসব দেখে হতাশায় ডুবছে৷ ২০১৫ সালে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব কালেই দিল্লির বিগত বিধানসভা ভোটে মোট ৭০ আসনের ৬৭টিতে জিতেছিলো আম আদমি পার্টি৷ বিজেপি পায় ৩ আসন৷
এরপর ২০২০-তেও দিল্লিতে সেই মোদি-ই৷ ভোট হবে দিল্লির৷ এবারও যদি দিল্লি-দখল না হয়, তাহলে আর কবে হবে ?

তাই ঝাঁপিয়েই চলেছে মোদি-শাহ-নাড্ডার বিজেপি৷ ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচার শেষ হবে ৬ তারিখ৷ একেবারে ‘বিশ্বযুদ্ধকালীন’ পরিস্থিতিতে অনেকটা ‘হাল্লা চলেছে যুদ্ধে’-র মেজাজে বিজেপি মঙ্গলবার স্থির করেছে, প্রচারের শেষলগ্নে
দলের ২৪০ জন সাংসদ একযোগে দিল্লির বস্তিতে গিয়ে থাকবেন এবং সময় কাটাবেন সেখানকার মানুষদের সঙ্গে৷ সংখ্যাটা আর একবার শুনুন, ২৪০ জন৷ রাজধানীতে ক্ষমতা করায়ত্ত করতে এবার পিছিয়ে থাকা এলাকায় প্রচার চালাবে বিজেপি।
মঙ্গলবার ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জে পি নাড্ডা সংসদীয় বৈঠকে এমন ঘোষণাই করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে৷
২৪০ জন গেরুয়া- সাংসদ শেষ ৩ দিনের প্রচারে যেখানে সময় কাটাবেন, সেই এলাকাগুলি মূলত দরিদ্র-প্রধান, এমনটাই জানিয়েছেন সভাপতি নাড্ডা।
ঘটনাচক্রে, সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এদিনই প্রথমবার দলীয় বৈঠক সারলেন নাড্ডা। আর প্রথমদিনেই এই মহাযুদ্ধের ঘোষনা৷

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...