সন্ধে নামলেই তাঁদের রমরমা বাজার। যুগ যুগ ধরে রাতের অন্ধকার আর মায়াবী আলোয় দরজায় ঘন ঘন কড়া নাড়াতো খদ্দের। কিন্তু অদৃশ্য ভাইরাস তাঁদেরও ভাতে মারছে। একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে লকডাউন, সবমিলিয়ে কারণে আর দরজার সামনে আসে না কেউ। হাতে গুঁজে দেয় না নোটের বান্ডিল। গ্রাহক নেই, কর্মহীন জীবন বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে তাঁদের ভবিষ্যৎকে। থমকে গিয়েছে জীবন। অন্ধকার জীবনেই আলোর দিশা খুঁজছে তাঁরা। লকডাউন ও করোনা আবহে চরম দুর্দশায় পড়া অসহায় যৌনকর্মীরাও বিগত বছরগুলোর এবারও মাতৃ আরাধনা করবেন।

কলকাতার সোনাগাছি মহাদেশের সর্ববৃহৎ পতিতাপল্লী। এই কয়েক মাস আগেও রোজ হাজারও মানুষের যাতায়াত লেগে থাকতো সোনাগাছির অলিতে-গলিতে। কিন্তু করোনা আবহে “তালাবন্দি” যৌনপল্লি। রোজগার হারিয়ে মনখারাপ সোনাগাছির। চরম দুর্দশায় অনেকেই যৌনবৃত্তিকে পিছনে ঠেলে অন্য পেশার টানে সোনাগাছি ছেড়েছেন। অনেকে ফিরে গিয়েছেন নিজেদের বাড়ি। আসলে খদ্দেরই ওদের “লক্ষ্মী”। মারণ ভাইরাস তাঁদের এমুখ হতে দেয় না। কিন্তু চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের অংশীদার হবেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরাও।


মাতৃবন্দনায় ইতিমধ্যেই খুঁটি পুজো সেরে ফেলেছে যৌনপল্লির পুজো উদ্যোক্তারা। পুজোর আঙ্গিকে এবার যৌনকর্মীরা এই কঠিন সময়ে নিজেদের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে চায়। তাই এবার তাঁদের দুর্গাপূজার থিম কবিগুরুর গানে গানে “ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে…”!

এ বছর সোনাগাছির পুজোঅষ্টম বর্ষে পা দেবে। ২০১৩ সালে এই পুজোর সূচনার পর থেকে ছোট্ট ঘরের মধ্যেই তার আয়োজন সীমাবদ্ধ ছিল। শুরুর কয়েকটি বছর বাইরে পুজো করার অনুমতি পায়নি তাঁরা। আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শোভাবাজার এলাকার মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের উপরে মণ্ডপ করে দুর্গাপুজো করার অনুমতি পান যৌনকর্মীরা। তাই সেই অধিকার আর হাতছাড়া করতে চান না তাঁরা। ছাড়তে চান না অধিকার। তাই মহামারি আবহের মধ্যেই মাতৃবন্দনার প্রস্তুতিতে সোনাগাছি।


কোভিড পরিস্থিতিতে সমস্ত স্বাস্থ্য-সুরক্ষাবিধি মেনেই চলছে সোনাগাছির দুর্গাপুজোর আয়োজন। মণ্ডপে আসা দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক-স্যানিটাইজার-থার্মাল গান রেখে এবং যথাসম্ভব দূরত্ব-বিধি মেনেই এ বছর পুজো হবে সোনাগাছিতে।
