Thursday, November 6, 2025

আলোর শহর চন্দননগরেই হতাশার অন্ধকার, শিল্পীর হাতে আঁশবটি-কর্ণিক

Date:

Share post:

আলোর শহর চন্দননগর।  পুজোয় যে আলোর রোশনাই কলকাতা, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছত, সেই আলোই আজ নিভেছে। অন্ধকারে ডুবেছে ফরাসডাঙা। যাঁদের হাতের কারিকুরিতে আলোকমালায় ফুটে উঠত কাশ্মীরের জঙ্গি হানা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-সহ আরও অসংখ্য ঘটনা, তাঁদের হাতে আজ মাছ কাটার আঁশবটি। কেউ ধরেছেন কর্ণিক। বাড়ির বউ এখন দোকান দিয়েছে রাস্তার মোড়ে। আলোক শিল্পী স্বামীর কাজ বন্ধ। মেয়ে দুটোকে কী করে বড় করবেন সে চিন্তায় ঘুম উড়েছে।

জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত ফরাসীদের প্রাক্তন উপনিবেশ চন্দননগর জুড়ে এখন হাহাকার। এ শহরের পরিচিতি তার আলোক শিল্পের জন্য। কলকাতার দুর্গাপুজো হোক বা মুম্বইয়ের গণেশ পুজো আলোর বরাত পান চন্দননগরের শিল্পীরাই। সুদূর বিদেশেও পাড়ি দেয় এখানকার আলো।

আরও পড়ুন : মেট্রো সুড়ঙ্গ থেকে স্রোতের মতো বইছে কাদাজল ! আতঙ্কে সবাই

তবে এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর সর্বনাশ ডেকে নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস ও লকডাউন। প্রভাব কিছুটা উমপুনেরও।চন্দননগরের আলোক শিল্প ঘিরে হাজার হাজার মানুষের রুটি রুজি ছিল।কুলু পুকুর ধার থেকে বিদ্যা লঙ্কা। বিস্তীর্ণ এলাকার দু’পাশে শুধুই সারিবদ্ধ আলোর দোকান।

বছরের শুরুতেও সেখানে গেলে আপনি দেখতে পেতেন আলোয় ঝলমল করছে সে সমস্ত দোকান। কারখানায় দম ফেলার সময় থাকত না।কত রকমের পুজো। বরাত নেওয়া শুরু হত জানুয়ারি থেকেই। বিহার, অসম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে আলো নিয়ে যেত লোকে। এখন আলো নেওয়া দূরের কথা অগ্রিম বাবদ পুজো উদ্যোক্তারা যা দিয়েছেন তা ফেরতের জন্য তাগাদা আসছে। আলো ঝলমলে দোকানের সমস্তরই ঝাঁপ বন্ধ।

শুধু চন্দননগর নয় হুগলি জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আলোকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। যে মানুষগুলো আলো জ্বালিয়ে এতদিন সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তাঁরাই আজ অঝোরে কাঁদছেন। বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। কেউ আলোর সরঞ্জাম গুটিয়ে সবজি, মনোহারি ও মুদিখানার দোকান দিয়েছেন। কেউ পুঁজির অভাবে দোকান বন্ধ করে মাছ কি মুরগির মাংস বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন: করোনা-যোদ্ধা ও সফল পড়ুয়াদের সম্মান প্রদর্শন কাঁকুড়গাছিতে

ঘরের বউ এসে দোকানদারি শুরু করেছে। কেন এই অবস্থা হল প্রশ্ন করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, শুধু নিজের সংসার নয় আরো ১০-১৫টি সংসার চলত তাঁদেরই আলোর ব্যবসাতে।কিন্তু লকডাউন, চিন থেকে মাল আসা বন্ধ হওয়াতেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাই। তিনি ধারদেনা করে দোকানে মুদি ও মনোহারি জিনিস তুলে দোকানদার সেজে দাঁড়িয়েছেন সংসার বাঁচাতে।

একদিন যাঁদের আলোকশিল্পী বলেই জানা যেত তাঁরা আজ কেউ মাছ বিক্রি করছেন, কেউ সবজি। প্রত্যেকের মুখেই একটি কথাই শোনা গিয়েছে, “আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।এখন সংসার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে এই ব্যবসাতেই নামতে হয়েছে”।লকডাউনে চিন থেকে মাল আসা বন্ধ, ট্রেন বন্ধের জন্য বাইরের লোক আসা বন্ধ। পুজোর অর্ডার ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। তাই বাঁচার জন্য এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।

আলো ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে শহর চন্দননগর।

spot_img

Related articles

বিনামূল্যে হৃদরোগের চিকিৎসা – জটিল অপারেশন! ‘শিশু সাথী’ প্রকল্প নিয়ে পোস্ট মুখ্যমন্ত্রীর

নয়া মাইলফলকে পৌঁছাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘শিশু সাথী’ প্রকল্প । কলকাতা, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তরবঙ্গ...

বিমানবন্দর থেকে ‘পলাতক’ বাঁদর, তুলকালাম নেটপাড়া

অবাক কাণ্ড! কলকাতা বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের এক যাত্রীর ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এল দুটি ছোট বাঁদর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়...

জামিন পেলেন না জীবনকৃষ্ণ, জেল হেফাজত ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত

নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার জামিনের আবেদন খারিজ করল বিশেষ ইডি আদালত। বৃহস্পতিবার বিচার ভবনে শুনানি...

KIFF: কেউ নস্টালজিক, কারোর নজরে বিশ্বের সিনেমা – চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে খোশমেজাজে তারকারা

অপেক্ষার অবসানে শুরু হল ৩১-তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ (31st Kolkata International Film Festival)। বৃহস্পতিবার আলিপুরের ধনধান্য...