Saturday, May 3, 2025

‘নীতীশের DNA-তে গোলমাল আছে’, মোদির ওই মন্তব্য আজ ব্যুমেরাং, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ শুক্রবারই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে৷ ওদিকে বিহারে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট প্রচারও৷ আর এই প্রচারে NDA-কে তাড়া করছে পাটনার রাস্তা ছেয়ে যাওয়া একটি ব্যানার৷
প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ছবি দেওয়া ওই ব্যানারে তুলে ধরা হয়েছে নীতীশের বিরুদ্ধে মোদির সেই ‘DNA-মন্তব্য’৷ আর বেনামি এই ব্যানার-ই ঘুম ছুটিয়েছে বিহারের NDA- জোটের৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘DNA’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন৷ প্রায় ৫ বছর পর, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা NDA-র বিরুদ্ধে মোদির সেই মন্তব্যই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে৷ পাটনায় এখন পা রাখলেই নজরে আসবে বড় বড় রঙিন বিশেষ এক ব্যানার এবং পোস্টার৷ এই সব ব্যানার- পোস্টারে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে মোদির একটি মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে৷ এই ব্যানার বিজেপি ও জেডিইউ’র পিঠ দেওয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে৷

২০১৫ সালের জুলাই মাসে,গত বিধানসভা ভোটের আগে,, মোদি নীতীশ সম্পর্কে বলেছিলেন, “নীতীশ কুমার কে DNA মে হি গড়বড় হ্যায়”। হিন্দিতে লেখা এই ব্যানার ও পোস্টারে ঠিক এই কথাই বলা হয়েছে৷ ব্যানারে নীতীশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যবহৃত আরেকটি লাইন, ‘মারতে রহে বাস পালটি, নীতীশ কি হর বাত কাচ্চি’। এই সব ব্যানার যারা করেছে বা যারা ঝুলিয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি৷

২০১৫ সালের জুলাই মাসে ভোট প্রচারে এসে এক ‘পরিবর্তন- সমাবেশ’-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাটনা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে মুজাফফরপুরে এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “নীতীশ কুমারের ‘রাজনৈতিক DNA’ -তে কিছু সমস্যা আছে৷ সেই সমস্যার জন্যই জেডিইউ-র এই শীর্ষনেতা খুব সহজেই তাঁর শরিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন”৷ মোদি তাঁর ভাষনে বলেছিলেন, “নীতীশ কুমার যখন বিজেপির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছিলাম৷ (প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে বিজেপির সাথে জেডিইউ-এর বিচ্ছেদ হয়েছিলো) কিন্তু এরপর যখন এই নীতীশ কুমারই ফের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মানঝির মত একজন মহাদলিতের সঙ্গেও একই কাজ করলেন, তখনই আমি বুঝতে পেরেছি নীতীশের রাজনৈতিক DNA-তে কিছু সমস্যা আছে”৷

২০১৫ সালে নীতীশের জেডিইউ, লালুপ্রসাদের আরজেডি এবং কংগ্রেসের একসঙ্গে মহাজোট গড়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ওই সময় মোদির ওই মন্তব্য বিহারজুড়েই প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলো৷ নীতীশ কুমার নিজে এবং তাঁর দল তীব্র আপত্তি জানিয়ে মোদিকে পাল্টা জবাবও দেয়। নীতীশ কুমার মোদিকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছিলেন, উনি বিহারের জনগণকে অপমান করেছেন৷ মোদিকে তাঁর মন্তব্য ফিরিয়ে নিতে বলেন৷ এখানেই শেষ নয়, ভোটের আগেই বিহারজুড়ে এই মন্তব্যের নিন্দা করে মোদির বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানেরও ডাক দিয়েছিলেন৷

২৯১৫-র সেই বাগযুদ্ধ ফিরে এসেছে ২০২০ সালে৷ বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে মোদি- নীতীশ আজ ‘হরিহর আত্মা’৷ মোদি এখন আর নীতীশের রাজনৈতিক DNA-তে ‘বেইমানি’ খুঁজে পাচ্ছেন না৷ তাই বিহারে নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করার ডাক দিয়েছেন৷ নীতীশও এখন প্রতিটি সভায় মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷
মোদি-নীতীশকে টার্গেট করে পাটনায় দৃশ্যমান এই হাজারো ব্যানারের হঠাৎ উপস্থিতি, ভোটের আগে বিজেপি-জেডিইউ জোটের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ব্যানার- যুদ্ধের একটি অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

ওদিকে চলতি সপ্তাহেই পাটনার বেশ কয়েকটি জায়গায় অন্য ধরনের ব্যানারও লাগানো হয়েছে৷ এই ব্যানারে আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ, তাঁর স্ত্রী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং তার ছোট ছেলে তথা বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবকে বিহারের দুর্দশার জন্য দায়ী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, “এক এ্যাইসা পরিবার, জো বিহার পর ভির”। আরেকটি ব্যানারে, যাদব পরিবারকে “লুট এক্সপ্রেস” হিসেবে আঁকা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস জোট গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করে জিতেছিলো। কিন্তু জোট ছেড়ে দেওয়ার পর নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে চলে যায়৷ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নতুন সরকার গঠনের জন্য বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতেও দু’বার ভাবেননি নীতীশ কুমার ।

তবে এ ধরনের ব্যানার দেখে তারা চিন্তিত নন বলেই মুখে দাবি করেছেন বিজেপি নেতারা৷ তাদের কথা, “আমরা মোদির নামে ভোট চাইব। গত ৬ বছরের তাঁর সাফল্যের কথা তুলে ধরেই ‘লালু-রাবড়ির জঙ্গল-রাজ’- এর কথা মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন-কৃষিবিল নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে,কৃষকদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত: মোদি

spot_img

Related articles

একনজরে আজ পেট্রোল-ডিজেলের দাম 

৩ মে (শনিবার), ২০২৫কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১০৫.০১ টাকা, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৯১.৮২ টাকাদিল্লিতে লিটার প্রতি...

জেলে যৌন নির্যাতনের শিকার ইমরান! রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল

রাওয়ালপিণ্ডির আদিয়ালা জেল বন্দি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan)। আর সেখানেই না কি তিনি যৌন নির্যাতনের...

রাজনৈতিক একনায়কতন্ত্র! গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারতকে টপকালো বাংলাদেশও

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারে সরব হয়েছিল ভারত। অথচ দেখা যাচ্ছে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশেও গণমাধ্যমের (mass media) স্বাধীনতা...

বিবাহ বিচ্ছেদের পথে যিশু! সারা-নীলাঞ্জনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আনফলো অভিনেতার

দীর্ঘ একুশ বছরের দাম্পত্যে কি তাহলে পাকাপাকিভাবে বিচ্ছেদের সিলমোহর পড়তে চলেছে? যীশু সেনগুপ্ত (Jishu Sengupta)ও নীলাঞ্জনা সম্পর্ক নিয়ে...