রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সদ্য নিযুক্ত সর্বভারতীয় বিজেপির জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরার অশালীন মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে অনুপমের কুরুচিকর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও একজন মহিলা সম্পর্কে এমন মন্তব্যের জন্য বিজেপিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন অধীর।

এ প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে আমার হাজারও অভিযোগ আছে ও থাকবে, অভিযোগ ব্যক্ত করার অধিকার আমার আছে কিন্তু তার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই। একজন মহিলার প্রতি বিজেপি নেতার অশালীন মন্তব্য বাংলার তথা ভারতীয় সংস্কৃতির অপমান বলে মনে করি। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ একদিন দিদিকে দেবী বলতেন, তার দয়াতে সাংসদ হয়েছিলেন, বিজেপি পার্টি ক্ষমা চাও। বাংলায় এসব চলবে না।”

উল্লেখ্য, গত রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে একটি কর্মিসভায় যোগ দিয়ে হাততালি কুড়োনোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেন অনুপম হাজরা। তিনি বলেছিলেন, “আমার করোনা হলে মমতাকে জড়িয়ে ধরবো!” সেই থেকে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার বিতর্কিত মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।

একটা সময় অনুপম তৃণমূলের টিকিটে বোলপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের জন্য সংসদে গিয়েছিলেন। পরে দলের মধ্যে আভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি দিদির চোখে দেখতেন, শ্রদ্ধা সম্মান করতেন, যাঁর আশীর্বাদেই অনুপমের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এমন মন্তব্যে হতবাক রাজনৈতিক মহল।

শুধু তাই নয়, অনুপম পেশায় একজন অধ্যাপক। উচ্চশিক্ষিত ছেলে। তাঁর মুখে এমন কথা শুনে মানুষ অবাক হচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে, তাহলে অনুপমের কি বিজেপিতে যোগ দিয়ে অধঃপতন হলো? নাকি কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মাটিতে পা পড়ছে না তাঁর? অনেকে আবার বলছেন, যে বিজেপি মহিলাদের সম্মানের কথা বলে, যে বিজেপি কৃষ্টি-সংস্কৃতির কথা বলে, সেই দলের জাতীয় সম্পাদক কিভাবে এমন কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন একজন মহিলা সম্পর্কে? সর্বোপরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে, যিনি অনুপম হাজরারও মুখ্যমন্ত্রী!

এদিনের ওই কর্মিসভায় বিরাট সংখ্যায় বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা হাজির ছিলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূর, বেশিরভাগের মুখে এদিন মাস্কই পর্যন্ত ছিল না। কেন তাঁর বা সভায় উপস্থিত লোকজন মাস্ক পরেননি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন অনুপম। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরা করোনার থেকেও বড় শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁরা লড়াই করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তাই আমরা আর করোনা ভয় পাই না। তবে আমার যদি কখনও করোনা হয়, আমি সবার আগে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরব।”

অনুপমের এই মন্তব্যের জন্য দলীয়স্তরে মুকুল রায়-জয় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অনুপমের কথাবার্তা সংযত হওয়া উচিত বলেই মনে করেন তাঁরা। অন্যদিকে, শিলিগুড়ি ও হাবড়াতে অনুপমের বিরুদ্ধে এই মন্তব্যের জন্য FIR করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : বর্তমান সময়ে ব্যতিক্রমী! নিজের ফ্ল্যাট দলের কাজে দান করলেন সিপিএম কর্মী ছায়া পালিত
