Saturday, August 23, 2025

দলত্যাগীদের চোখে জল কেন? দ্বিধা না অস্বস্তি?

Date:

Share post:

রাজনীতিকদের কান্না। দলত্যাগীদের চোখে জল কেন? দ্বিধা না অস্বস্তি? বহু রাজনীতিকদেরই সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে। তা দলের প্রতি ক্ষোভের কথা বলতে গিয়ে হোক আর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে ‘ভালোবাসা’, ‘স্নেহ’ পাওয়ার কথা বলতে গিয়েই হোক। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা। গতকালই মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerje)। অবশ্যে ইস্তফা দেওয়ার পদ্ধিতিগত ‘ত্রুটি’ থাকার কারণে তাঁর ইস্তফা পত্র গৃহীত হয়নি। তাঁকে অপসারিত করা হয়েছে। কালই যখন রাজীব সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের বক্তব্য রাখছিলেন ঠিক সেই সময় দু’আঙুল চেপে তাঁর চোখ মোছার দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এর আগেও এমন দৃশ্য দেখা গিয়ছে। এই তালিকায় রয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র খাঁও (Soumitra Khan)। এই তিনজনই তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন।

তবে সৌমিত্র খাঁর কান্নার কারণটা এঁদের থেকে আলাদা। কিছুদিন আগে সুজাতা মণ্ডল খাঁ (Sujata Mondal Khan) যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। ঠিক সেইদিনই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠানোর সময় কাঁদতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি (BJP) সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। এক সময় তৃণমূলেরই নেতা ছিলেন সৌমিত্র।

বছর তিনেক আগে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Baishakhi Banerjee) সঙ্গে শোভনের (Sovan Chatterjee) বিশেষ বন্ধুত্বের গল্প ছড়ায়। তা নিয়েও তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে তাঁকে ধমক শুনতে হয়। সেই সময় একদিকে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার অন্যদিকে বৈশাখী। তার মাঝেই জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর কাছ থেকে। সে সময় কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় বৈশাখীর ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ শোভনকে। তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন,”মন থেকে বলছি, আমার মতো যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেন কাউকে না যেতে হয়।” এরপর ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে ইস্তফা দেন শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখী যখন ঝরঝর করে কাঁদছেন, তাঁর পাশে বসা শোভনও অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন-মোদির সঙ্গে নেই বিজেপি নেতারা, নেতাজি ভবনের আপত্তি মানতে হল দিল্লিকে

এই সমস্ত রাজনীতিকদের এমন বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে প্রতক্রিয়া দিচ্ছেন মনোবিদরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, “আমরা কোনও জনপ্রতিনিধিকে দেখলে ধরে নিই সেই মানুষটি কখনও আবেগতাড়িত হতে পারেন না। তাঁর আবেগের বহিঃপ্রকাশ সবসময় রাশযুক্ত হবে। মনে হয়, এই ধরে নেওয়াটার মধ্যে কোথাও অসঙ্গতি আছে। একটু অন্য ভাবে ভাবার প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কারণ, রাজনৈতিক দায়িত্বে থাকলেও ওই ব্যক্তির উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে ক্ষুণ্ণ হওয়া বা উচ্ছ্বসিত হওয়ার জায়গা থাকবে না, এমনটাই ধরব কেন। কিন্তু এ রকম আমরা প্রায়শই দেখি, এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় যাওয়ার সময় বিদায় অনুষ্ঠানে চোখের জল মুছছেন এক জন মানুষ। আমরা যদি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কথা ভাবি, সেখানে একটা পরিবর্তনের আবহাওয়া বিদ্যমান। এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়া বা দীর্ঘ দিনের চেনা পরিবেশের বাইরে আসা। সে ক্ষেত্রে আবেগঘন হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক।”

সম্প্রতি প্রকাশ্যে আবেগঘন হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে বিষ্ণুপুরের ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ তথা দলের যুবমোর্চার সভাপতি সৌমিত্রকে। সুজাতা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরেই কাঁদতে কাঁদতে সংবাদমাধ্যমের সামনে স্ত্রী-র উদ্দেশে বলেন, “যে মানুষটা সুজাতা বলতে পাগল ছিল, সেই মানুষটার কথা না শুনে এই জায়গায় চলে এলে তুমি? আজ তোমাকে সম্পূর্ণভাবে খাঁ পদবি থেকে মুক্তি দিচ্ছি। এবার থেকে নামের জায়গায় সুজাতা মণ্ডল লিখো। খাঁ পদবি আর ব্যবহার কোরো না। এটা আমার বংশ, আমার জাতির পরিচয়।”

আরও পড়ুন-বাংলাদেশে টিকা পাঠাল ভারত, মোদিকে ধন্যবাদ হাসিনার

কিন্তু মনোবিদরা বাকি রাজনীতিকদের সঙ্গে একই তালিকায় রাখা পক্ষে নন। তাঁদের মতে, “সৌমিত্র খাঁ এবং তাঁর স্ত্রী-র বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি জড়িত ছিল। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে যদিও বা তাঁকে এক বন্ধনীতে রাখা হয়, তাহলে বুঝতে হবে, যখনই তাঁরা তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন, তাঁদের খারাপ থাকার কথা বলেছেন, সেখানে পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জড়িত। আবেগের এমন বহিঃপ্রকাশ সাধারণ মানুষের যে হয় না, তা তো নয়! জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমাদের একটা ভাবনা থাকে যে, তাঁদের সবকিছু যথাযথ এবং যুক্তিযুক্ত হবে। তাঁদের আবেগে লাগাম থাকবে। আমাদের এই প্রত্যাশাটা সব সময়ে ঠিক না-ও হতে পারে। কারণ, তিনিও এক জন মানুষ। তাঁরও আবেগ লাগাম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে। সাময়িক ভাবে তিনিও বিহ্বল হয়ে পড়তে পারেন। আমরা হয়ত তারই বহিঃপ্রকাশ দেখছি। মেপে দেখতে গেলে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে গেলে আবেগের অনুপাতটা ভারী হয়ে আসছে। বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তা-ই আমাদের সামনে বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে।”

Advt

spot_img

Related articles

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...

রাজ্যে শুরু SIR প্রস্তুতি: একাধিক পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের

গোটা দেশেই এসআইআর লাগু হবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar)। বিহারে ৬৫ হাজার...