বিজেপি নেতৃত্বকে বেনজির আক্রমণ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন জয়প্রকাশ-রীতেশ

দুই প্রাক্তন রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে বিজেপি (BJP)। মঙ্গলবার প্রকাশ্যে দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন রীতেশ, জয়প্রকাশরা। তাঁদের দাবি, গোটা বাংলাতেই নেতা, কর্মীদের মধ্যে নতুন রাজ্য কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন তাই বর্তমান রাজ্য নেতারা পারলে জেলা সফর করে দেখান।

এদিন রীতেশদের চ্যালেঞ্জ, ক্ষমতা থাকলে বর্তমান নেতৃত্ব বিদ্রোহীদের রাজ্য জুড়ে যে কর্মসূচি রয়েছে, তা রুখে দেখান। জয়প্রকাশ বলেন, ‘রাজ্য বিজেপি-কে দুর্বল করার চেষ্টা দলেরই একাংশের, আগেই দিল্লিকে জানিয়েছি।’রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জে ছুড়ে জয়প্রকাশ বলেন, যাঁরা বিজেপি-র পতাকা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন তবে কাঁচের ঘরে থাকা দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও নামতে তৈরি। ভয় দেখিয়ে বিদ্রোহ বন্ধ করা যাবে, এমন অলীক স্বপ্ন দেখবেন না।

আরও পড়ুন – ‘ক্ষমতার স্বাদ পেতে বিজেপি করে নাও’ – সুকান্ত কে তোপ, রীতেশকে সমর্থন তথাগতর

মঙ্গলবার জয়প্রকাশ বলেন, ‘বিজেপির একটা অংশ রাজ্যে দলকে দুর্বল করতে চায়। সেই উদ্যোগের পরিণতি ২০১৯ সালে লোকসভায় ১৮ আসনে জেতা বিজেপি খারাপ ফল করে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। অন্য দলের নেতাদের নিয়ে এসে বাজিমাৎ করার চেষ্টা শুরু হয়। ভিন রাজ্যের নেতাদের নিয়ে এসে বাংলা দখলের কথা বলা হয়। এটা ভুল হচ্ছে বলে আমি আগেই জানিয়েছি।‘

জয়প্রকাশের দাবি, ২ মে ফল ঘোষণার দিন বিধানসভা ভোটে হার বুঝতে পেরেই বিজেপি-র (BJP) বড় বড় নেতারা বাংলা ছেড়ে পালাতে শুরু করেন।দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর দেওয়ার সময় আমি ছাড়া কেউ ছিলেন না। অন্যদিকে রীতেশ বলেন, ২২ জানুয়ারি সংবাদমাধ্যম জানলো অথচ ২৩ জানুয়ারি আমি শোকজের খবর পেলাম। শোকজের চিঠির বৈধতা নিয়ে তার প্রশ্ন, শোকজের চিঠির মধ্যে কোনও সময়সীমা নেই। যারা চিঠিও লিখতে পারে না, তাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট দরকার নেই। লাইভ সম্প্রচারের সময় খবর পেলাম আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরাই বোধহয় প্রথম কোনও রাজনৈতিক কর্মী, যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হল! যাদের জনজীবনে কোনও অবদান নেই, তারাই মধু ভোগ করতে এসেছিলেন।

জয়প্রকাশ বলেন, অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন, সামনের দিকে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চলেছে। বিজেপির এই উত্থানকে কয়েকজন নেতা ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। তখনই বাংলার বিজেপিকে দুর্বল করে দেখানোর একটা চেষ্টা শুরু হয়। বাইরে থেকে নেতা এনে বঙ্গ বিজেপিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। তখনই মনে হয়েছিল, এটা ঠিক নয়। যারা বিজেপিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের অগ্রাহ্য করার চেষ্টা শুরু হয়। বিজেপির এই চেষ্টাকেই অন্য দলেরা বহিরাগত বলে আক্রমণ শুরু করে। বহু বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, নতুন কৌশলে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। ভোটের কয়েকমাস আগে বলা হয় দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক এনে দেখিয়ে দেব। ভিন রাজ্য থেকে লোক এনে দেখিয়ে দেব, এটা বলা হয় ।

সুকান্ত মজুমদার ও অমিতাভ চক্রবর্ত্তীকে তোপ দেগে রীতেশ বলেন, ক’দিন আগেই রাজ্য সভাপতি সব কমিটি এবং সেল ঘোষিত ভাবে ভেঙে দিয়েছেন। তবে যে কমিটি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তারই তো স্বস্তি নেই।একই সঙ্গে তিনি বলেন, দলের তৎকাল নেতাদের অনেকে কোনও দিন রাজনৈতিক স্বার্থ ত্যাগ স্বীকার করেননি। তৃণমূলের সাহায্য নিয়ে ব্যক্তিগত উন্নতি ঘটিয়েছেন। পেশা থেকে অনেক রোজগার করেছেন। এঁরা গত বিধা নসভা নির্বাচনের আগে থেকে দলের ক্ষতি করতে এসেছেন।

রাজ্য বিজেপি-র নিন্দা করে জয়প্রকাশ বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের বিপর্যয় নিয়ে দলে কোনও আলোচনা হয়নি। যাঁরা আলোচনা করতে চেয়েছেন, তাঁদের বৈঠকে কথা বলতে দেওয়াই হয়নি। জেলায় জেলায় কর্মীরা মার খেলেও তাঁদের পাশে না দাঁড়িয়ে আদালতে গিয়েছে দল। তাতে কর্মীদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে।
বর্তমান নেতাদের আক্রমণ করে জয়প্রকাশ বলেন, কাচের ঘরে বসে যাঁরা অন্যদের দিকে ঢিল ছুড়ছেন, তাঁরা সাধারণ কর্মীদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। বিজেপি-র বর্তমান রাজ্য কমিটিতে কোনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নেই কেন তা নিয়েও মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন জয়প্রকাশরা। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু মোর্চার প্রধান করা হয়েছে একজন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে। কিন্তু বাংলায় ৩০ শতাংশ ভোট যাঁদের রয়েছে, সেই মুসলিমদের একজনও নেই কেন? দলের প্রবীণদের বাদ দেওয়া নিয়ে জয়প্রকাশের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যাঁদের রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়েছে, তাঁদের রাজনৈতির অভিজ্ঞতা একেবারেই কম। রীতেশ বলেন, দলের যে নেতারা রাজ্যে দলের এত উন্নতি ঘটিয়েছে, তাদেরই বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ফলে ভাল হবে না।