শোকস্তব্ধ সুলতানপুর : দুর্ঘটনায় নিহতদের চোখের জলে শেষ বিদায় বিধায়ক থেকে স্থানীয়দের

রাতের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে অনেকেই রাস্তায় বেড়িয়ে প্রতীক্ষা করছিলেন।

স্বজন হারানোর শোকে নিশিযাপন করলো সুলতানপুর (Sultanpur)। বুধবার সারারাত কার্যত রাস্তাতেই কাটালো উদয়নারায়ণপুরের (Udaynarayanpur) হরালি পঞ্চায়েতের(Panchayet) শোকস্তব্ধ এই সুলতানপুর গ্রাম। রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলা। রাত যত গভীর হচ্ছিল উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়ও ততোই বাড়ছিল।

রাতের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে অনেকেই রাস্তায় বেড়িয়ে প্রতীক্ষা করছিলেন। এমনটাই ছিল গোটা সুলতানপুর গ্রামের রাতের ছবিটা।অবশেষে রাতভর অপেক্ষার পর ভোর সওয়া ৪টা নাগাদ রাজ্য সরকারের বিশেষ গাড়িতে ওড়িশার (Orissa) দারিংবারিতে(Daringbadi) দুর্ঘটনায় মৃত ৫ জন গ্রামবাসীর মৃতদেহগুলি সুলতানপুরে এসে পৌঁছোলো। তার অনেক আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজা।

প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা দেহগুলি নিয়ে এসে পাড়ায় নামাতেই কান্নার রোল ওঠে। স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। পুলিশ কর্মীরা মৃতদেহ ৫টি পরপর নামাতেই দেহগুলিকে জড়িয়ে কেঁদে ভাসাতে থাকেন তাঁদের বাড়ির লোকেরা। গ্রামবাসীরাও শোকে কার্যত পাথর হয়ে যান।

বেড়ানোর নেশাই যে ৫ জন গ্রামবাসীর প্রাণ কেড়ে নেবে তা কল্পনাও করতে পারেননি এলাকার কেউই। শোকস্তব্ধ পরিবারগুলিকে সান্ত্বনা দিতে নিজেও কান্না চেপে রাখতে পারেননি এলাকার বিধায়ক সমীর পাঁজাও। তিনি বলেন ‘এলাকার প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই আমার নিবিড় সম্পর্ক। মৃতদের পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। এই গ্রামের মানুষেরা মূলত চাষবাস ও দিনমজুরি করেন। শখ বলতে বছরে একবার সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া। তার জন্য সারাবছর ধরে প্রতি মাসে কিস্তিতে টাকাও জমান তাঁরা। করোনার জন্য দুবছর কোথাও যায়নি। এইবার ফের বিশাখাপত্তনম ঘুরতে গিয়েই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হলেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সবসময় এলাকায় থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির পাশে রয়েছি।’ বেশ কিছুক্ষণ মরদেহগুলি তাঁদের বাড়ির সামনে রাখা থাকে। অনেকেই সেখানে তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানান।এরপর সুলতানপুর গ্রামের শ্মশানে ৫টি দেহ পাশাপাশি চুল্লিতে একসঙ্গে দাহ করা হয়। অগণিত মানুষের চোখের জলে শেষ বিদায় নেন সুলতানপুর গ্রামের ৪ মহিলা সহ ওই ৫ জন।

সুলতানপুরে দেহ নিয়ে আসা থেকে দাহ কার্য সম্পন্ন করা পর্যন্ত পুরো সময় স্বজন হারানো পরিবারগুলির পাশে থেকে সমস্ত কাজ তদারকি করেন বিধায়ক সমীর পাঁজা। উল্লেখ্য, উদয়নারায়ণপুরের সুলতানপুর থেকে লাক্সারি বাস ভাড়া করে বিশাখাপত্তনম ঘুরতে যাবার পথে মঙ্গলবার গভীর রাতে ওড়িশার দারিংবাড়ির কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান ৬ জন। জখম হন প্রায় ৫০ জন। নিহতদের মধ্যে একজন হুগলির বাসিন্দা। বাকি ৫ জনের বাড়ি উদয়নারায়ণপুরে।

দুর্ঘটনার পরই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনের তরফে সড়কপথে মৃতদেহগুলি দ্রুত নিয়ে আসা হয়। দুর্ঘটনার পরই রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সমস্ত কাজকর্ম তদারকি করে দেহগুলি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

আরও পড়ুন:অভিযোগের পরও নিষ্ক্রিয় যোগীর পুলিশ, থানার সামনে গায়ে আগুন দিলো ধর্ষিতা